নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের প্রধান রাজস্ব আদায়কারী সংস্থা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। জানা যায়, দেশীয় রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধির সক্ষমতা বাড়াতে এনবিআরকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এজন্য স্ট্রেনদেনিং ডোমেস্টিক রেভিনিউ মোবিলাইজেশন প্রজেক্ট কারিগরি সহায়তা প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে এক হাজার ১৯ কোটি টাকা। যার মধ্যে সরকারি ব্যয় ১৯ কোটি টাকা আর বাকি এক হাজার কোটি টাকা ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক। প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে এনবিআর।
সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তায় সক্ষমতা বৃদ্ধির একটি প্রস্তাবনা এনবিআরের কাছে গেছে। প্রকল্পের সার্বিক বিষয় নিয়ে ইতোমধ্যে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরবর্তীতে আরও আলোচনার পর চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য একনেক সভায় উপস্থাপন করা হবে।
এনবিআর জানায়, এ প্রকল্পের মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ডিজিটালাইজ করা এবং তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সংশ্লিষ্ট বিজনেস প্রসেস প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, পরিবর্তন ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা গ্রহণ, প্রশিক্ষণ, বিশ্লেষণী ও নীতি বিশ্লেষণ সক্ষমতা জোরদারকরণ, অভ্যন্তরীণ ও বহিঃযোগাযোগ ব্যবস্থাপনা করা হবে। পাশাপাশি একটি শক্তিশালী গবেষণা ও পরিসংখ্যান ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা হবে। এছাড়াও আয়কর প্রশাসনকে শক্তিশালীকরণে সহজীকৃত প্রক্রিয়ার সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়করণ এবং বিদ্যমান ও নতুন সিস্টেমগুলোর মধ্যে কার্যকর আন্তঃসংযোগ স্থাপন করা হবে। এর আওতায় বিদ্যমান ই-টিআইএন, ই-রিটার্ন, ই-ট্যাক্স, ই-টিডিএস ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করা হবে। ই-অডিট, ই-ট্যাক্স অফিস, ই-ট্যাক্স ওয়ার্ল্ড, ই-সাপোর্ট, ই-কানেক্ট ইত্যাদিতে নতুন নতুন পদ্ধতি প্রবর্তন ও পারস্পরিক ইন্টারোপারেবিলিটি (আন্তঃকার্যক্ষমতা) নিশ্চিত করা হবে। প্রকল্পটির মাধ্যমে ভ্যাট প্রশাসনকে আধুনিকায়নের জন্য এসএডি কম্পিটেন্সি সেন্টার বা বিশেষ কার্যক্রম বিভাগ দক্ষতা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, ইন্টিগ্রেটেড ভ্যাট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সিস্টেম ও সংশ্লিষ্ট অইটি অবকাঠামোর পূর্ণাঙ্গ উন্নয়ন করা হবে। ইন্টিগ্রেটেড ভ্যাট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সিস্টেম সফটওয়্যাকের কার্যকর একীভূতকরণ, কাস্টমস আধুনিকায়ন, আয়কর ও মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) উভয়ের জন্য একটি সমন্বিত ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন নম্বর ব্যবস্থার উন্নয়ন ও বাস্তবায়ন এবং করদাতাদের জন্য একটি স্বয়ংক্রিয় কল সেন্টারও প্রতিষ্ঠা করা হবে। একই সঙ্গে প্রকল্পের আওতায় এনবিআরের জনবল, কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টদের জন্য একটি আধুনিক ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হবে। নতুন প্রকল্প প্রসঙ্গে এনবিআরের একজন কর্মকর্তা বলেন, এনবিআরের সব সেবা আরও সহজ করা হবে। যেন ঘরে বসেই মানুষ শতভাগ সেবা নিতে পারেন। সেজন্য বিশাল পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে, সেবা বাড়ানোর পাশাপাশি রাজস্ব বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করছে এনবিআর। জানা গেছে, এজন্য আগামী অর্থবছরের বাজেটে বহু স্তরবিশিষ্ট ভ্যাট (ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স) বা মূসক (মূল্য সংযোজন কর) হারের পরিবর্তে একক হার নির্ধারণে হিসাব কষছে এনবিআর। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে এটি করছে প্রতিষ্ঠানটি। এনবিআর-সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন, ভ্যাটের একক হার নির্ধারণ করা হলে ভ্যাট আদায় কয়েক গুণ বাড়বে, ফাঁকি কমবে। ভ্যাট আদায়ের হিসাব করাও সহজ হবে। অর্থনীতির বিশ্লেষকরা বলেছেন, ভ্যাটের একক হার নির্ধারণ করা হলে অনেক ক্ষেত্রে কম হারের ভ্যাট বাতিল হয়ে যাবে। এসব খাতে উচ্চহারের ভ্যাট আরোপ হবে। এতে অনেক পণ্য ও সেবা খাতের খরচ বেড়ে যাবে, যা শেষ পর্যন্ত ভোক্তাকেই পরিশোধ করতে হবে। এনবিআরের এ প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ প্রস্তাবের যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ করে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা প্রস্তাবের পক্ষে-বিপক্ষে খতিয়ে দেখবেন। উপদেষ্টা পরিষদ থেকে এনবিআরের এ প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হতে পারে। অনুমোদন না দিয়ে সংশোধন করা বা বাতিল করাও হতে পারে। এনবিআরের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বর্তমানে বেশির ভাগ পণ্য ও সেবা খাতে ৫ থেকে ১০ শতাংশ হারে ভ্যাট হার ধার্য করা আছে। এসব হার বাতিল করে একক হার নির্ধারণ করা হলে ভ্যাট খাতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। আদায় কয়েক গুণ বাড়বে। ভ্যাট ফাঁকি কমবে। ভ্যাট আদায়ের হিসাব করা সহজ হবে। ভ্যাটের একক হার ১০ শতাংশের কম ও ১৫ শতাংশের বেশি হবে না। অর্থাৎ ভ্যাটের হার ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ১৫ শতাংশ- যেকোনো একটি হার নির্ধারণ করা যেতে পারে।
এনবিআর চেয়ারম্যান ড. মো. আবদুর রহমান খান বলেন, ভ্যাট রাজস্ব আদায়ের সবচেয়ে বড় খাত। ভ্যাট আদায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা সম্ভব হলে বর্তমানে যে পরিমাণ ভ্যাট আদায় হয় তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি আদায় হবে। এর জন্য ভবিষ্যতে ভ্যাট আদায়ে একক হারের দিকেই যেতে হবে। এজন্য অংশীজনদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা হবে।
রাজস্ব বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর
আগের পোস্ট