নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের সদর উপজেলার রামপালে দক্ষিণ কাজী কসবা বড়কাজী বাড়ী জামে মসজিদ সংলগ্ন ইমামউদ্দিন কাজী ওয়াকফ এস্টেটের জমি বেদখলের অভিযোগ তুলে পুনরুদ্ধারের দাবী জানিয়েছে ওয়াকফ্’র ওলি-ওয়ারিশ ও এলাকাবাসী। এলাকবাসী জানান, কাজী কসবা মৌজার ১০৪৯ দাগের ৫০ শতাংশের উক্ত জমিতে পূর্ব ঈদগাহ ময়দান ছিলো। ঈদের নামাজের পাশাপাশি স্থানীয়দের জানাজার নামাজ আদায় করতো স্থানীয় এলাকাবাসী। তবে বিগত অনেক বছর যাবত মহসিন ভূইয়ার পুত্র দিদারুল আলম ভূইয়া জমিটি নিজের দাবী করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ ও বিক্রির প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এদিকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে দিদারুল আলম জানিয়েছেন, তিনটি দাগের জায়গার মধ্যে ২টি মালিকানা ও একটি ওয়াকফ্, মালিকানা জায়গা ২টি আমাদের ক্রয়কৃত।
ওয়াকফ্ এস্টেটের ১৯০২ সালের দলিল সূত্রে জানা যায়, কাজী কসবা মৌজার ১৪টি দাগে মোট ৭ একর ৩ শতাংশ জমি ইমামউদ্দিন কাজী ওয়াকফ্ এসেস্টের আওতাধীন রয়েছে। এসব জমি থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে বড়কাজী বাড়ী জামে মসজিদ পরিচালনা ও কোরবানীসহ ৬টি বিষয়ে দান খয়রাতে খরচের কথা দলিলে উল্লেখ করা হয়। একইসাথে খরচের বার্ষিক উদ্বৃত্ত অংশ ওয়াকফ্ এর রক্ষণাবেক্ষণে থাকা ও তার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সমভাগে বন্টন করার কথা। এসব জমির মধ্যে ১০৪৯ দাগের জমির পরিমাণ ৫০ শতাংশ। স্থানীয় ও ওয়াকফ্কৃত জায়গাটির একাধিক ওয়ারিস মাহবুব ভূইয়া লাভলু, রোমান ভূইয়া, মিজান কাজী জানায়, জায়গাটিতে ঈদের নামাজ আদায় হতো এবং কয়েকটি দোকানঘর ছিলো। এসব দোকানের ভাড়া মসজিদ পেতো। তবে জমিটি অবৈধ নামজারীর মাধ্যমে নিজেদের দখলে নিয়েছে দিদার ভূইয়া গং। ২০১১ সালে সর্বপ্রথম জায়গাটিতে ঈদের নামাজ আদায়ে বাঁধা দেয় ভূমিদস্যু দিদার ভূইয়া। এ নিয়ে বাংলাদেশ ওয়াকফ্ প্রশাসকের নিকট আবেদন করলে ওয়াকফ কার্যালয় থেকে ঈদের নামাজ আদায়ের অনুমতি দেয়। পরবর্তী ২০১৩ সালে তারা ঈদগাহের মিম্বারটি ভেঙে ফেললে পুনরায় এলাকাবাসী মিম্বারটি নির্মাণ করে। তবে এরপর যারাই জায়গাটি নিয়ে দিদার ভূইয়ার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছে তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা দিয়ে হয়রানি করছে দিদার ভূইয়া। এমনকি ওয়াকফ্ এস্টেটে যেসব বিষয়ে খরচ করার কথা সে বিষয়ে খরচ না করে নিজেদের স্বার্থে অর্থ ব্যয় করছে।
এদিকে শুধু এ একটি নয়, দিদারের বিরুদ্ধে সুপ্রীমকোর্টের মাহবুবা নামের আইনজীবীসহ ২০-২৫ জনের জায়গা দখলের অভিযোগ করেছেন আইনজীবী মাহফুজা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জায়গাটিতে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মিত রয়েছে ও নতুন করে স্থাপনা নির্মাণ চলছে। স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য ফুলন কাজী জানান, বাপ-দাদার আমল থেকে ৮০-৯০ বছর যাবত জায়গাটিতে ঈদের নামাজ ও জানাজার নামাজ হতো। আমার বাবাও একসময় মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলো। তবে গত অনেক বছর ধরে দিদারুল আলম ভূইয়া প্রথমে আমাকে অর্থের প্রলোভন দেখায়। আমি টাকা না নিলে পরবর্তীতে ভূমিদস্যু দিদার আমার ও আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে ৪টি মিথ্যা মামলা দায়ের করে দীর্ঘদিন ভোগান্তির সৃষ্টি করে। তবে ৪টির মধ্যে ৩টি মামলারই নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন, দিদার ভূইয়ার পিতা মহসিন ভূইয়া এই এসেস্টের মোতাওয়াল্লী থাকাকালীন ওয়াকফ্ কার্যালয়কে ফাঁকি দিয়ে অসাধু ভূমি কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় জায়গাটির নামজারী করছে। এখন বিক্রি করে চলেছে। বড়কাজী বাড়ী জামে মসজিদের সভাপতি কাজী নুরুজ্জামান সেন্টু জানান, ওয়াকফ্ এস্টেটের অনেক বছর আগে মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত। আর ঈদগাহটিতে আমার পূর্ব পুরুষরাও নামাজ পড়তো, তখন জানতাম ঈদগাহর জন্য জায়গাটি বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু যারা ওয়াকফ্ এস্টেটের দায়িত্বে আছে তারা এটি আর ঈদগাহ দিবে না। এটি নিয়ে পুলিশ কেসসহ অনেক কিছু হয়েছে। মামুন ভূইয়া নামের একজন নিজেকে ওয়াকফ এস্টেটের মোতাওয়াল্লী দাবী করে বলেন, এখানে ঈদগাহ ছিলো না। ব্যক্তি মালিকানার জমি। এটি নিয়ে আমাদের কোন সমস্যা নেই। কিছু লোক তাদের স্বার্থে অভিযোগ তুলেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, এই জায়গাটি নয়, আমাদের ওয়াকফ্ এসেস্টের অন্য আরো অনেক জায়গা বেদখলে চলে গেছে।
দিদারুল আলম ভূইয়া এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এখানে কখনোই ঈদগাহ ছিলো না। তিনটি খতিয়ানের সম্পত্তি, ২টি খতিয়ানে মালিকানা আছে। একটি খতিয়ানের জায়গা ওয়াকফ। যে ২টি খতিয়ানে মালিকানা আছে তার থেকে জায়গা আমাদের তিন ভাইয়ের নামে খরিদ (ক্রয়কৃত)। ফারুক কাজীর কাছ থেকে ২০১৪ সালে জায়গাটি কিনেছি। এসময় ওয়াকফ্ জায়গা কিভাবে মালিকা হলো তা জানতে চাইলে কোন সদুত্তর দিতে পারিনি সে। তিনি বলেন, ডকুমেন্ট যা লাগে নিয়ে যাবেন। পরবর্তীতে তার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ফারুক আহমেদ বলেন, বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ পেলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবো।