নিজস্ব প্রতিবেদক
বাড়ি ও জায়গা জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মিথ্যা হামলার ঘটনায় হাত ভাঙ্গার নাটক সাজিয়ে থানায় মামলা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনা ঘটেছে লৌহজং উপজেলার খিদির পাড়া ইউনিয়নের সুভরিয়া গ্রামে। অভিযোগকারী রবীন্দ্র বিশ^াস ও তার স্ত্রী আলো বিশ^াস জানান, সুভরিয়া গ্রামে তাদের বসতবাড়ির পাশের একটি অংশ রবীন্দ্র বিশ^াসের ছোট ভাই লক্ষণ বিশ^াস ক্রয় করে তাতে একটি দোচালা ঘর নির্মাণ করে। এই জায়গাটি প্রতিপক্ষ মাখন বিশ^াসের বলে দাবি করে আসছে সে। এই নিয়ে স্থানীয়ভাবে এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ নিয়ে বেশ কয়েকবার গ্রাম্য সালিশ বসে। সেখানে রায়ও হয় এই ঘরটি লক্ষণের জায়গায় এবং তারই ক্রয়কৃত ঘর। এরপরও প্রতিনিয়ত মাখন বিশ^াসের স্ত্রী গীতা বিশ^াস ও তার ছেলে মিঠুন বিশ^াস এই জায়গা ও ঘরটি নিয়ে রবীন্দ্র বিশ^াসের পরিবারের সাথে বাকবিতন্ডা লেগেই থাকে। উক্ত বিরোধের জের ধরে গত ২৯ নভেম্বর রবীন্দ্র বিশ^াসের স্ত্রী তার দেবরের ঘরের তালা খুলতে গেলে বাধা দেয় মাখন বিশ^াসের স্ত্রী গীতা বিশ^াস। এই নিয়ে দু’জনের মধ্যে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে গীতা বিশ^াসের লোকজন মোবাইলে ভিডিও ধারন করে তা নিয়ে থানায় গিয়ে রবীন্দ্র বিশ^াস ও তার স্ত্রী আলোসহ ৬ জনকে আসামী করে অভিযোগ করেন মাখন বিশ^াসের ছেলে মিঠুন বিশ^াস। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, লোহার রড দিয়ে বিবাদী রবীন্দ্র বিশ^াস তার স্ত্রী আলো, ভাই লক্ষণ, ছেলে রনি বিশ^াস ও মেয়ে রিয়া বিশ^াসসহ ৬ জন মিলো এলোপাথারি পিটিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় নিলাফুলা জখম করে এবং তার মায়ের (গীতা বিশ^াসের) ডান কাঁধে রডের আঘাত লেগে হাড়ভাঙ্গা জখম হয়। আরও অভিযোগ করা হয়, গীতা বিশ^াসের হাতে থাকা রুলি ও গলায় থাকা চেইন এবং নগদ পাঁচ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায় রবীন্দ্র বিশ^াস ও তার লোকজন। মামলা রুজুর আগেই লৌহজং থানার পুলিশ সুভরিয়া গ্রাম থেকে রবীন্দ্র বিশ^াসের ছেলে রনিসহ আরেক আসামীকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। একদিন পর থানায় মামলা রুজু করে আসামীদের হাজতে পাঠানো হয়। গীতা বিশ^াসের হাড়ভাঙ্গার সত্যতা যাচাই করতে শুভরিয়ার পাশের গ্রামে গীতা বিশ^াসের বাবার বাড়ি পিঙ্গরোনালি গ্রামে গেলে প্রথমে কথা হয় গীতা বিশ^াসের ভাই সুভাসের সাথে। তার কাছে গীতা বিশ^াসের শারীরিক খোঁজখবর জানতে চাইলে তিনি জানান, সে (গীতা বিশ^াস) চিকিৎসার জন্য পাশের উপজেলা সিরাজদিখানে একটি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। এরপর দেখা হয় গীতা বিশ^াসের আরেক ভাই গোপি নাথের সাথে। তার কাছে জানতে চাইলে সে প্রথমে জানায়, গীতা বাড়িতেই আছে। এর কিছুক্ষণ পর তার মুঠোফোনে একটি ফোন আসলে সে জানায়, আমি সারাদিন বাড়ি ছিলাম না। আমার বোন দুপুরে হাসপাতালে গেছে শারীরিক অসুস্থতার জন্য। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গীতা বিশ^াস বাড়িতেই রয়েছে হাসপাতালের নামে আত্মগোপন করে। তাদের ঠিকানা অনুযায়ী সিরাজদিখানের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২৯ তারিখে গীতা বিশ^াসকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও হাতের এক্সরে করতে বাইরের ক্লিনিকে পাঠানো হয়। এরপর তারা বাড়ি ফিরে যায়। এরপর সিরাজদিখানের বেশকটি ক্লিনিকে খোঁজ নিয়ে কোথাও গীতা বিশ^াসের ভর্তি হওয়ার হদিস পাওয়া যায়নি। পিঙ্গরোনালী গ্রামের অনেকের কাছে খবর নিয়ে জানা যায়, মিথ্যা হামলার এই ঘটনার পর থেকে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে গীতা বিশ^াস বেশ কয়েকদিন যাবত হাসপাতালে চিকিৎসার নামে বাবার বাড়িতে আত্মগোপন করে আছে।