নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের বৌলতলী ইউনিয়নের পয়সা পশ্চিমপাড়া ও বেজগাঁওয়ের ছত্রিশে প্রভাবশালী বড় নেতা আইন অমান্য করে ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করছে। এতে এলাকার ফসলি জমির পরিমাণ কমে জাতীয় ফসল উৎপাদনে ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে এ অঞ্চলের কৃষক। অনেকটা জোর জুলুম করেই কেটে নেয়া হচ্ছে ফসলি জমির এসব মাটি। ফলে কমছে ফসল আর বেকার হচ্ছে কৃষক। পরিবেশও পড়ছে হুমকির মুখে। বৌলতলী ইউনিয়নের পয়সা পশ্চিম পাড়া মধ্যবর্তী এলাকায় এ পর্যন্ত প্রায় ৪ একর ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করা হয়েছে। বেজগাঁও ছত্রিশের কয়েক জায়গায় এখনও চলেছে মাটি কাটার এ মহোৎসব। ফলে ব্যাহত হচ্ছে কৃষিপণ্য উৎপাদন ক্ষমতা।
বৌলতলী ও বেজগাঁও ইউনিয়নে প্রচুর কৃষিজমি রয়েছে। প্রতি বছর ফসলও হয় ভাল। এ থেকে কৃষকের আয় রোজগারও ছিল ভাল। কিন্তু গত কয়েক বছর যাবত রফিক/নবু বাহিনী নামে একটি প্রভাবশালী চক্র কৃষকদের বিভিন্নভাবে ভয়-ভীতি প্রদর্শন, ওয়ারিশ পাওনা ও বিভিন্ন লোভ-লালসা দেখিয়ে সামান্য মাটির কথা বলে জমিতে মাটি কাটতে শুরু করে। কিন্তু একবার জমিতে মাটি কাটা শুরু করতে পারলেই তাদের আর ঠেকায় কে? পুরো জমিটি তাদের দখলে চলে যায়। মো. রফিক পয়সা পশ্চিম পাড়া স্থানীয় এলাকার মেয়ের জামাই, গাঁওদিয়ার নবু তারা মাটি কাটার মেশিন ভ্যাকু বসিয়ে পুরো জমি এমন গভীরভাবে কাটে যে, তাতে পার্শ¦বর্তী জমির মাটিও কয়েক ঘন্টার মধ্যে ভেঙ্গে পড়তে শুরু করে। তখন পার্শ¦বর্তী জমি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ওই জমির মালিকও তখন তার জমি ওই ভূমিদস্যুদের কাছে চাপে পড়ে নামমাত্র মূল্যে জমির মাটি বিক্রি করতে বাধ্য হয়। এমনকি ঐ মাটি এলাকার উচ্চবিত্ত মানুষের কাছে বিক্রি করে দেয়। কোন রাস্তা না থাকায় মাটিবাহিনী পার্শ্ববর্তী ফসলী জমির উপর দিয়ে জোর করে ট্রাক ভর্তি মাটি নিয়ে য়ায়। এতে এসকল জমির ফসলও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ বছরসহ গত কয়েক বছরে এভাবে মাটি কাটায় ওই এলাকার শত শত বিঘা জমি এখন খালে (প্রায় ১০/১৫ ফুট গভীর) পরিণত হয়েছে। ভূমিদস্যু এই চক্রটি এতই প্রভাবশালী যে, তাদের ভয়ে কোন জমির মালিক কিছু বলতে সাহস পায়না। অথচ আইনের ধারা ৫ এর ১ উপধারা অনুযায়ী, এসব অপরাধীর শাস্তি হচ্ছে অনধিক দুই বছরের কারাদন্ড বা দুই লক্ষ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।
মাটি কাটা বিষয়ে বৌলতলী ইউনিয়নের ভূমি কর্মকর্তা অনন্ত প্রসাদ মিত্রের সাথে কথা বললে তিনি জানান, আমি পয়সা পশ্চিম পাড়া মাটি কাটা স্থানে গিয়ে মাটি কাটতে দেখি। যারা মাটি কাটার স্থানে ছিল তাদের মাটি কাটতে নিষেধ করেছি। তবে আমি চলে আসার পর তারা আবার মাটি কাটছে বলে জানতে পারি। আমি বারবার গিয়ে নিষেধ করতে পারবো না।
এ বিষয়ে লৌহজং উপজেলা কমিশনার (ভূমি) মো.ইলিয়াস শিকদার জানান, আমি খবর পেয়ে আমাদের অফিসের লোক পাঠিয়েছিলাম। তবে ওরা বলে মাটি বিক্রি করে না। রাস্তার কাজে ব্যবহার করছে। তবে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখবো। ফসলি জমি নষ্ট বা মাটি কাটা হলে আইনি ব্যবস্থা নিবো।
লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল আউয়াল বলেন, আমি বিষয়টি এখন জানতে পেরেছি। তদন্ত করে মাটি কেটে বিক্রির বিষয়টির গুরুত্ব সহকারে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভূমিদস্যুদের কোন ছাড় নাই। এছাড়া আমি অনেক জায়গায় খবর পাওয়ার সাথে সাথে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছি।
লৌহজংয়ে ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি
আগের পোস্ট