নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার পদ্মার তীরে বাঁধ না থাকায় মেদেনীমন্ডল ইউনিয়নের দুটি গ্রামের শতাধিক বাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। সেইসাথে মাওয়া থেকে কান্দিপাড়া ও যশলদিয়া গ্রামে চলাচলের বিকল্প সড়কটি ভাঙনের মুখে রয়েছে। ফলে এলাকাবাসী বিপাকে পড়েছেন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দক্ষিণ মেদেনীমন্ডল গ্রামের পদ্মার তীরে একটি হাউজিং প্রকল্পের একটি জমি রয়েছে। সে জমি এখন পানির নিচে। জমির উত্তর পাড়ে বাঁধ না থাকায় পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তা দক্ষিণ মেদেনীমন্ডল ও মামুদপট্টি গ্রাম দুটিতে প্রবেশ করেছে। গত ২৮ জুন এলাকা দুটিতে প্রথম পানি প্রবেশ করে। এরপর ধীরে ধীরে শতাধিক বাড়ি ও মাওয়া-যশলদিয়া-ভাগ্যকূল সড়কের বিকল্প অংশ দক্ষিণ মেদেনীমন্ডল ও মামুদপট্টি ক্লিনিক সড়কে পানি উঠে গেছে। গত কয়েকদিনে ক্রমাগত পানির তোড়ে রাস্তা ভেঙে যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে হাঁটার পথও বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে এলাকাবাসী আশঙ্কা করছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা নিজ উদ্যোগে তাদের বাড়ির সামনে রাস্তায় সুড়কি ও বালুর বস্তা ফেলে নিজ বাড়ি ও রাস্তা রক্ষার চেষ্টা করছেন। স্থানীয় বাসিন্দা হাজী হৃদয় খান বলেন, বন্যা নেই অথচ বন্যার মতো পানি ঢুকে পড়েছে বাড়িঘরে। আরেক বাসিন্দা জানু খান বলেন, মাত্র ১০০ ফুট জায়গা বাঁধ দিলে এলাকায় পদ্মার পানি ঢুকতে পারতো না। আমাদেরও কষ্ট করতে হতো না। এদিকে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের লোকজন পদ্মার পানি প্রবেশ বন্ধে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এখানকার হাউজিং প্রকল্প গ্রুপটি প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের সাথে কেউ যোগাযোগ করেনি। স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করেন, মাত্র ১০০ ফুট জায়গা বাঁধ দিলে এলাকায় পদ্মার পানি ঢুকতে পারতো না। ২/১ দিনের মধ্যে ব্যবস্থা না নিলে বাড়িঘর ও সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে যাবে বলে এলাকাবাসী আশঙ্কা করছেন। পদ্মার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। ২৪ ঘণ্টায় ১২ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে ভাগ্যকূলে ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল রবিবার জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ড এ তথ্য জানিয়েছে। মাওয়ায় ১২ সেন্টিমিটার বেড়ে পদ্মার পানি বিপদসীমার ১১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে পদ্মা অববাহিকার নিম্নাঞ্চলের জনপদগুলো প্লাবিত হয়েছে। চরাঞ্চলের বহু এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। দ্রুত পানি আসার কারণে আমন ধানসহ বহু ফসলের ক্ষতি হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গত শনিবার মাওয়ায় পদ্মা পানি বিপদসীমার ১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। গতকাল রোববার সেটা আরো বেড়েছে। এখানে পদ্মার পানিতে স্রোত মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। তাই শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। পদ্মাতীরে হাসাইল-বানারী, কামারখাড়া, দিঘীরপাড়, পাঁচগাঁও, সদর উপজেলার শিলই, বাংলাবাজার, আঁধারা লৌহজং উপজেলার কলমা, লৌহজং-তেউটিয়া, গাঁওদিয়া, হলদিয়া, কনকসার, কুমারভোগ ও মেদিনীমন্ডলসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। নতুন করে লৌহজং উপজেলার পাইকরা ও ব্রাহ্মণগাঁও এলাকা ও আশপাশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। লৌহজং উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কাবিরুল ইসলাম খান জানান, বাঁধ নির্মাণ ও রাস্তা মেরামতে শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।