নিজস্ব প্রতিবেদক
বিচারের বাণী নিরবে কাঁদে। তাই চেয়ারম্যান, মেম্বার আর সমাজের প্রভাবশালীদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও বিচারের আশ^াস মিলেনি গত ৫ দিন ধরে। স্ত্রীর মর্যাদা আর সন্তানের স্বীকৃতি চেয়ে মৃত সন্তান কোলে নিয়ে ঘুরে ফিরছে অসহায় রিকশাচালক সেলিম পাটোয়ারীর মেয়ে জোসনা আক্তার (১৬)। জানা যায়, মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার নওপাড়া গ্রামের জোসনা আক্তার গত একবছর আগে বাসায় ঝিয়ের কাজ করতে পাশর্^বর্তী বৌলতলী গ্রামের মোয়াজ্জেম শিকদারের ঢাকার বাসায় নিয়ে যায় মোয়াজ্জেম হোসেন। দুই মাস পর মোয়াজ্জেম শিকদারের সন্তানসম্ভবা স্ত্রী শান্তা আক্তার ডেলিভারীর জন্য হাসপাতালে গেলে কাজের মেয়ে জোসনাকে শান্তার বাবার বাসা গেন্ডারিয়ায় রেখে যায়। জোসনাকে বাবার বাসায় রেখে শান্তা তার স্বামী মোয়াজ্জেম, শান্তার মা সবাই হাসপাতালে যায়। বাসায় শান্তার বাবা আজমীর সরদার (৫৫) আর কাজের মেয়ে জোসনা বাসায় থাকে। জোসনাকে বাসায় একা পেয়ে শান্তার বাবা আজমীর সরদার ফুসলিয়ে, টাকা ও বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করে জোসনার সাথে। বেশ কিছুদিন পর হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরে শান্তা ও তার মা। বাসায় এসে ঘটনাটি জানতে পায় জোসনার কাছ থেকে। এ খবর পেয়ে শান্তা জোসনাকে নিয়ে তার নিজ বাসায় ফিরে যায়। নিজের বাসায় নিয়ে শান্তা ও তার মা দুজনে মিলে জেসনাকে নানা রকম ওষুধ খাওয়ায় পেটের বাচ্চাটি নষ্ট করতে। শেষ পর্যন্ত ওষুধে কোন কাজ না হলে ৪ মাস পর অসুস্থতার কথা বলে জোসনার বাবাকে খবর দিয়ে তার সাথে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয় তাকে। বাড়িতে এসে এক পর্যায়ে জোসনা আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং বাড়ির আশপাশের লোকজন কানাঘুসা করতে থাকে। এক পর্যায়ে জোসনাকে নিয়ে যাওয়া হয় পাশের সিরাজদিখান উপজেলার কুসুমপুর গ্রামের একটি ক্লিনিকে। সেখানে পরীক্ষা নিরীক্ষা করানো হলে ডাক্তার জানায়, জোসনা ৮ মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা। এ খবর শুনে অসহায় পরিবারটির উপর যেন বাজ পড়ার মত অবস্থা। খবরটি এলাকার মাতব্বর, চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে অবহিত করা হয়। বৌলতলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মালেক শিকদার জানান, এই খবরটি প্রথমে শুনে আমরা মেয়েটির বাড়িতে যাই এবং তার কাছ থেকে সকল ঘটনা শুনি। এক পর্যায়ে একই ইউনিয়নে ধারার হাট গ্রামে শান্তার বাবা আজমির সরদারের বাড়ি এবং স্বামী মেয়াজ্জেমের বাড়ি বৌলতলী গ্রামে তাদের খবর দেই। খবর পেয়ে শান্তা, তার মা, ভাই ও এক আত্মীয় আসে জোসনার বাড়িতে। সেখানে গিয়ে তারা অপরাধ স্বীকার করে এবং তারা জোসনার গর্ভের সন্তান মেনে নেয় ও সন্তান প্রসবের পর জোসনাকে তারা স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে ঘরে তুলে নিবে বলে আশ^াস দেন। এলাকার মেম্বার পলাশ মিয়া ও গন্যমান্যদের দায়িত্ব দেয়া হয় বাচ্চাটি যেন ডাক্তারদের তত্ত্বাবধানে রেখে সুস্থভাবে প্রসব করানো হয়। গত রোববার ভোর রাতে জোসনার প্রসব ব্যথা উঠলে বিষয়টি জানানো হয় এই ঘটনার হোতা আজমীর সরদার ও তার মেয়ের জামাতা মোয়াজ্জেম সরদারকে। এই খবর পেয়ে তারা সকলে তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ করে রাখে আর কেউ তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি। এদিকে জোসনার কোল জুড়ে একটি ফুটফুটে ছেলে সন্তান জন্ম নেয়। শিশুটি জন্ম নেয়ার সাথে সাথে শ^াসকষ্ট দেখা দিলে এলাকার মেম্বার ও গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের আর্থিক সহযোগিতায় শিশুটিকে প্রথমে ঢাকার মিডফোর্ড হাসপাতাল এরপর শ্যামলী শিশু হাসপাতালসহ কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে কোথাও ভর্তি করতে না পেরে আগারগাঁও মনিরা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় গত বুধবার সকালে শিশুটি মারা যায়। শিশুটির লাশ নিয়ে আসা হয় জোসনার গ্রামের বাড়ি নওপাড়ায়। গত বুধবার সারাদিন জোসনা তার এই মৃত শিশুটি নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ায় তার স্ত্রীর মর্যাদা ও সন্তানের পিতৃ পরিচয় চেয়ে। গত বুধবার সন্ধ্যায় এলাকাবাসীর কাছ থেকে খবর পেয়ে সাংবাদিক ও লৌহজং থানার এসআই সোহেল ঘটনাস্থলে গেলে সেখানে প্রতারণার শিকার জোসনা ও তার পরিবারের লোকজন সমস্ত ঘটনা খুলে বলেন। এ রির্পোট লিখা পর্যন্ত লৌহজং থানা পুলিশের সহযোগিতায় গত বুধবার রাত ৩টায় এই বিষয়ে জোসনা আক্তার বাদী হয়ে গেন্ডারিয়া থানায় একটি ধর্ষণ মামলা ও একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই বিষয়ে প্রতারক আজমীর সরদার ও তার জামাতা মোয়াজ্জেম শিকদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি। শিশুটির লাশ মিডফোর্ড হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে এলাকায় নিয়ে আসার খবর পাওয়া গেছে।