নিজস্ব প্রতিবেদক
পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে শ্রীনগর উপজেলার বাড়ৈখালি ইউনিয়নে ইজারাবিহীন অস্থায়ী গরুর হাট বসানোর আয়োজন অনেকটাই চূড়ান্ত প্রায়। সাধারন হাট বাজার হিসেবে ইজারা নিয়ে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও শিবরামপুর বাজারটিতে অস্থায়ী গরুর হাট বসিয়ে ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে স্বার্থান্বেষী একটি মহল। কোরবানির ঈদ উপলক্ষে এই হাট থেকে কোটি কোটি টাকার গরু বেচাকেনা হলেও এ খাত থেকে কোন রাজস্ব পাচ্ছেনা সরকার। নিত্যপণ্যের সাধারণ হাট বাজারের জন্য ইজারা নিয়ে গরুর হাট বসানোর এ বিষয়টি এখন স্থানীয় প্রশাসনের কাছে যেমন ওপেন সিক্রেট, তেমনি বিভিন্ন মহলের কাছেও অনকটাই সমালোচিত এবং প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ, শ্রীনগরে বাৎসরিক ইজারায় স্থায়ী গরুর হাট রয়েছে শুধু দেউলভোগ বাজার। যেখানে প্রতি মঙ্গলবারই গরুর হাট বসে। পক্ষান্তরে মঙ্গলবার শিবরামপুরে বসে নিত্যপণ্যের সাধারণ হাট বাজার। এছাড়া সেখানে নেই কোন সাপ্তাহিক কিংবা মাসিক গরুর হাট। বাৎসরিক ইজারাপত্রে যে শর্ত রয়েছে তাতেও লিখা নেই কোথাও গরুর হাট বসানোর কথা। আর তাই যদি হতো তাহলে বাঘড়া, ভাগ্যকূল, কেদারপুর, কুকুটিয়া ও সিংপাড়া বাজারের ইজারাদাররাও শিবরামপুরের মত অস্থায়ী গরুর হাট বসাতে পারতো নতুন কোন ইজারা ছাড়াই। এমতাবস্থায় বাড়ৈখালি ইউনিয়নের শিবরামপুরে ইজারাবিহীন অস্থায়ী গরুর হাট বসানো কতটা বৈধ সে বিষয়ে প্রশ্ন রয়েছে অনেকের। এ বিষয়ে শিবরামপুর হাট বাজারের বার্ষিক ইজারাদার সেলিম তালুকদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ইজারাদার ঠিকই। তবে অস্থায়ী গরুর হাট বসানোর ব্যাপারে আমি পক্ষপাতী না। ইকবাল মাষ্টার আওয়ামীলীগের লোকজন নিয়া হাট মিলায়। আগামীতে এইর মধ্যে আমারে আর দেখবেন না। এইবারের মত ছাড় দেন না। যা করি একলগে বইয়া করুমনে। ইকবাল মাষ্টার বলেন, এই হাটটি প্রাচীনকাল থেকে তাঁতীর হাট নামে পরিচিত। তাঁত বিলুপ্ত হইয়া গেছে। এখন সব কিছুই বিক্রি হয়। ঈদের মধ্যে আমরা মাত্র ৩/৪ দিনের জন্য এই হাট মিলাই। তাও সবার সাথে আলাপ আলোচনা কইরাই করি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসাম্মৎ রহিমা আক্তারের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিগত বছরগুলোর মত ক্যালেন্ডারভুক্ত হাটগুলোকে আমরা এবারও জেলা প্রশাসনের অনুমোদনক্রমে ইজারা দেয়ার ব্যবস্থা নিয়েছি। এদিকে শ্রীনগরের চারটি ইউনিয়নের মধ্যে পাঁচটি স্থানে অস্থায়ী গরুর হাট বসানোর জন্য দরপত্র আহ্বানের নির্দেশনা এসেছে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে। গত ৭ জুলাই এর ০৫.৩০. ৫৯০০. ৩০৩. ২০. ০০২. ১৪-৪১৮ নং স্মারক সম্বলিত দরপত্র বিজ্ঞপ্তিতে অস্থায়ী হাটের নাম, ইউনিয়ন, কাক্সিক্ষত মূল্য এবং সিডিউলের মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ভাগ্যকূল মান্দ্রা অস্থায়ী গরু/ ছগল বেচাকেনার হাট কেদারপুর ও নবারুণ সংসদ এলাকার হাট। বাঘড়া বাজার সংলগ্ন হাট কুকুটিয়া কে কে ইনস্টিটিউশন মাঠের হাট ও সিংপাড়া বাজার সংলগ্ন বেলতলী জি জে উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের হাটসহ সবকটি নাম দরপত্র বিজ্ঞপ্তিতে উঠে এলেও ক্যালেন্ডারভুক্ত ও চিরাচরিত পন্থার কারণে তালিকাভুক্ত হয়নি শিবরামপুর হাট। কোরবানির হাট ইজারা দেয়ার লক্ষ্যে গত ১২ জুলাই রবিবার থেকে দরপত্র আহ্বান শুরু হয়েছে। ১৫ জুলাই বিকেল ৩টায় টেন্ডার বাক্স খোলার মধ্য দিয়ে এই কার্যক্রমের প্রাথমিক প্রক্রিয়া শেষ হবে। তবে কাক্সিক্ষত মূল্য পাওয়া না গেলে পর্যায়ক্রমে ২১ জুলাই ২য় বার এবং ২৭ জুলাই অর্থাৎ ৩য় বারে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। উল্লেখ্য, শ্রীনগরের ২০টি হাট বাজার রয়েছে রাজস্ব আয়ের বার্ষিক ইজারা তালিকায়। নিত্যপণ্যের এসব হাট বাজারের কাছাকাছি অবস্থানে এবারও অস্থায়ী গরুর হাট বসানোর জন্য আগ্রহী ইজারাদাররা দরপত্র কেনার পাশাপাশি হাট বসানোর আয়োজনে ব্যস্ত রয়েছেন। এর মধ্যে বাঘড়া, ভাগ্যকূল, কেদারপুর, কুকুটিয়া ও সিংপাড়ার বেলতলী হাটের ইজারাদারদের অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা গেলেও সিডিউল কিনতে দেখা যাচ্ছেনা শিবরামপুর হাটের কাউকে। বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠেছে, শিবরামপুর গরুর হাট কি এবারও ইজারাবিহীন চলবে, নাকি রাজস্ব পাবে সরকার? সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এ প্রশ্ন সরকারবান্ধব জনগণের।