নিজস্ব প্রতিবেদক : মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরেও জোরপূর্বক রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে।
গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার রাঢ়ীখাল ইউনিয়নের মোঃ শাহজাহান আলী সরদারের পুত্র হাবিবুর রহমান সরদার গংদের মালিকানা জায়গার উপর দিয়ে একই গ্রামের মৃত বিন্নত খানের পুত্র মঙ্গল খান (৭০), মঙ্গল খানের পুত্র মহসিন খান (৪০) ও মাহিনুর খান (৩০) গংয়ের বিরুদ্ধে একটি কুচক্রী মহলের সহযোগিতায় জোরপূর্বক রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত মুন্সীগঞ্জ ফৌজদারী কার্যবিধি ১৫৪নং ধারার, ২০৯/২০২৫নং পিটিশন মামলা সূত্রে জানা যায়, মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার ১৪৫নং রাঢ়ীখাল মৌজার আরএস ১৫৮নং খতিয়ানের, আর এস ৫১১৫নং দাগের বাড়ি ষোলআনায় ১৩৮ শতাংশ হতে ৭.৮৯ শতাংশ প্রথম পক্ষ মোঃ হাবিবুর রহমানের দাবি। শাহজাহান আলী আর এস ১৫৮নং খতিয়ানে ২ আনায় ১৭.২৫ শতাংশ মালিকানা সম্পত্তি হতে তার পুত্র প্রথম পক্ষ হাবিবুর রহমানকে ১২ মে ২০১৬ইং তারিখে ৩৪৯০নং হেবা দলিলে ৪.৬৬ শতাংশ ও আর এস পর্চার মালিক রবি সরদারের স্ত্রী নুরজাহান বেগম, শাফিয়া বেগমের থেকে ৩.২৩৫ শতাংশ সম্পত্তি ২ জুলাই ২০১৫ইং তারিখে ৫৪৭৯নং দলিল দ্বারা প্রথম পক্ষ হাবিবুর রহমান বরাবর হেবা করে দেন। ২টি দলিলের মাধ্যমে প্রথম পক্ষ ৭.৮৯ শতাংশ সম্পত্তির মালিক ও দখলকার হয়ে নিজ নামে নামজারি করে নির্দিষ্ট সীমানা নির্ধারণ করে শান্তিপূর্ণভাবে ভোগদখল করে আসছে। যাহার নামজারি খতিয়ান নং- ৪৭৪৩, যাহার নামজারি জমাভাগ কেস নং- ২০০৭ / ২০১৬-১৭, তারিখ ১১/১২/২০১৬ইং।
উক্ত সম্পত্তিতে প্রথম পক্ষ গাছপালা রোপণ করে পরিবার-পরিজন নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে ভোগদখলে ছিলেন। অতঃপর গত ১৯ এপ্রিল শনিবার সকাল ৯টার দিকে দ্বিতীয় পক্ষ আরো চার ৪/৫ জন সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোক নিয়ে নালিশি সম্পত্তির উপর দিয়ে জোর করে ব্যক্তিগত রাস্তা নির্মাণ করবে এবং গাছপালা কর্তন করবে মর্মে হুমকি প্রদান করে।
প্রথম পক্ষের বাধার কারণে দ্বিতীয় পক্ষ নালিশী সম্পত্তির উপর দিয়ে জোর করে রাস্তা নির্মাণ করতে পারেনি। যাওয়ার সময় দ্বিতীয় পক্ষ হুমকি প্রদর্শন করে যে, তারা যে কোনো সময় জোরপূর্বক নালিশী সম্পত্তিতে স্থিত গাছপালা কর্তন করে আকার-প্রকার পরিবর্তন করে উক্ত সম্পত্তিতে জোরপূর্বক ব্যক্তিগত রাস্তা নির্মাণ করবে। দ্বিতীয় পক্ষ রাস্তা নির্মাণ করার জন্য প্রায় ১০০টি বাশ, পাঁচ হাত লম্বা ৫০টি সিমেন্টের খুঁটি নালিশি সম্পত্তির পাশে জোর করে রেখেছে। এরুপ পরিস্থিতিতে দ্বিতীয় পক্ষ যদি লোকজন নিয়ে প্রথম পক্ষের স্বত্ব দখলীয় সম্পত্তি জোরপূর্বক দখল করতে আসে এবং ১ম পক্ষ যদি তা প্রতিহত করে তবে মারাত্মক রক্তপাতসহ খুন-জখম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমতাবস্থায় দ্বিতীয় পক্ষের বিরুদ্ধে আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধি ১৫৪ ধারার আইন মোতাবেক আইনগত ব্যবস্থা নেয় ও শ্রীনগর থানাকে নালিশি সম্পত্তিতে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার আদেশ প্রদান করেন।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী জমির মালিকপক্ষ মোঃ মাহাবুব আলম বলেন, আমার এটা বাড়ি। রাস্তা নেওয়ার জন্য জোরপূর্বক চেষ্টা করছে। জানি না এরা কোন দল করে এবং কার বলে এরা এ কাজ করছে? আমি মুন্সীগঞ্জ কোর্টে ইনজেকশন জারি করেছি এবং পুলিশ এসে বলেছে, ইনজেকশন জারি করা আছে। আপনারা কেউ কাজ করবেন না। তারপরও তারা কোন বলে, কোন কৌশলে জোরপূর্বক বাড়িটি দ্বিখন্ডিত করে রাস্তা নেওয়ার জন্য পাঁয়তারা করছে? রাস্তাটি ২০০ ফিট লম্বা, ১০ ফিট পাশে। আপনাদের সকলের কাছে আবদার, কিছুতেই যেন আমার এখান দিয়ে রাস্তা নিতে না পারে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মঙ্গল খানের পুত্র মাহিনুর খান বলেন, ব্যক্তি মালিকানা জায়গা কিনা আমাদের। এই জায়গায় রাস্তার কাজ চলছে। আপনাদের কাছে বলছে যে, তাদের জায়গায় আমরা জোরপূর্বক রাস্তা তৈরি করছি। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বানোয়াট। রাস্তার কাজ চলছে তাদের অনুমতি নিয়ে। তাদের চাচা ফয়েজ সরদার উনি আমাদের কাছে জায়গা বিক্রি করেছেন, আমরা কিনেছি ৩.৩৭ শতাংশ। এটা নিয়ে গত শুক্রবার আমরা তাদের বাসায় বসেছি। তারপর আমার ভাই আমার বাড়ির প্রধান অভিভাবক শাহজাহান সরদার সবাইকে বলেছেন, আমি রাস্তার পক্ষে এবং নিজেই রাস্তার জায়গা দেখিয়ে দিয়েছেন। তাদের অনুমতি নিয়ে আমরা এ কাজ শুরু করেছি। পরে তারা নাকি ১৪৫ ধারা জারি করেছে।
এ বিষয়ে পিটিশন মামলার দায়িত্বপ্রাপ্ত তদন্ত কর্মকর্তা শ্রীনগন থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এস আই) মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, আমি নোটিশ জারী করে আসছি, কোনো বিশৃঙ্খলা যাতে না হয়। গিয়ে দেখি, ওরা কাজ করছে। ওদের বলে এসেছি, যদি আপনারা আবার কাজ ধরেন তাহলে আপনাদের বিরুদ্ধে কোর্টে ১৪৫ ধারা ভঙ্গের অভিযোগ দাখিল করা হবে।