নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ফসলী জমিতে বাড়ছে কচু চাষ। কচু চাষে সফলতার মুখ দেখছেন কৃষকেরা। পরিত্যক্ত জায়গায় হচ্ছে কচুর চাষ। ভৌগোলিকভাবে এই উপজেলা নিম্নাঞ্চল। বছরে প্রায় ছয় মাস জুড়েই এই অঞ্চলের ফসলী জমি পানির নিচে থাকে। তাই শীতকালীন সবজি চাষ ছাড়া তেমন শাকসবজি চাষাবাদ হয় না। এই উপজেলার মানুষের শাকসবজির চাহিদা পূরণের জন্য অন্য জেলার উপর নির্ভরশীল হতে হয়। সবজির চাহিদা মেটাতে দিন দিন কচুর চাহিদা বেড়েই চলেছে। তাই কৃষকেরাও কচু চাষে আগ্রহী হয়ে পড়ছেন। পোকা ও রোগবালাই তেমন না থাকায় ও খরচ কম হওয়ায় কচু চাষে আগ্রহ বাড়ছে। তাছাড়া কচু শাক মানুষের দৈনন্দিন পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে। এতে ভিটামিন এ -রয়েছে যা রাতকানা রোগসহ সকল ধরনের রোগ প্রতিরোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাছাড়া কচু আয়রনসমৃদ্ধ যা মানুষের শরীরে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বৃদ্ধিতে কাজ করে। তাই কারো হেমোগ্লোবিন কমে গেলে ডাক্তাররা কচু শাক খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ভিটামিন এ-এর পাশাপাশি এতে রয়েছে ভিটামিন বি এবং সি-ও। তাই মুখ ও ত্বকের রোগ প্রতিরোধেও কচুর ভূমিকা অনেক। এতে রয়েছে উচ্চমাত্রায় পটাশিয়াম যা হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। এই উপজেলায় সাধারনত দুই ধরনের কচু চাষ হয়ে থাকে লতি কচু ও পানি কচু। উপজেলার ষোলঘর, হাঁসাড়া, বাড়ৈখালী ও রাঢ়ীখাল ইউনিয়নে বেশি কচু চাষ হয়। ষোলঘর ইউনিয়নে উমপাড়া গ্রামের কচু চাষী নুর হোসেন বলেন, এ বছর নতুন করে কচু চাষ করেছি। আমার জমির পরিমাণ ২০ শতক। জমিতে কচু চাষ করতে আমার প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়। আবাদকৃত জমি থেকে লতি বিক্রি করে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা আয় করেছি। আর চারা বিক্রি করেছি প্রায় ৫ হাজার টাকার। সর্বমোট আয় করেছি প্রায় ৫০ হাজার টাকা। কচু চাষে আমার লাভ হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা। হাঁসাড়া ইউনিয়নের এক কচু চাষী শ্রী কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, ধান চাষের থেকে কচু চাষে খরচ কম কিন্তু লাভ বেশি। কৃষিঅফিস থেকে সহযোগিতা পেলে আগামীতে আরও বেশি জমিতে চাষ করব। আমার বাড়ির সামনের ক্ষেতে ধান চাষ করতাম। আমাদের ব্লকের উপসহকারী কৃষি অফিসার এর পরামর্শে এখন ধানের পাশাপাশি বিভিন্ন সবজি, লতি কচু, পানি কচু চাষ করেছি। এখন আমাদের পরিবারের সবজির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাজারে বিক্রি করছি। লতি ও কচু বিক্রি করে যে টাকা পাই তা দিয়ে অন্যান্য বাজার খরচ করেও কিছু টাকা জমিয়েছি। উপজেলার কৃষি অফিসার শান্তনা রানী বলেন, দেশী জাতের এসব কচু আবাদে তেমন পরিশ্রম নেই, উৎপাদন খরচও তেমন লাগে না। বেলে দো-আঁশ মাটি কচু চাষের উপযোগী। কচুতে প্রচুর পরিমাণ পুষ্টি উপাদান আছে। কৃষকরা কচু চাষে আগ্রহী হওয়ায় দিন দিনই বাড়ছে কচুর আবাদী জমির পরিমাণ। চলতি মৌসুমে বাজারে কচুর দামও ভালো। এই প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের চারা, সার, আন্তঃপরিচর্যা ভাতা প্রদান করা হয়। কৃষকেরা আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে কচু চাষ করে লাভবান হচ্ছেন।