নিজস্ব প্রতিবেদক
শ্রীনগর উপজেলার বিবন্দী-বাড়ৈগাঁও সড়কের কুকুটিয়া ইউনিয়নের বিবন্দী ও টুনিয়ামান্দ্রা গ্রামের সীমানাবর্তী স্থানে প্রায় ৪ মাস যাবত একটি কালভার্ট নির্মাণ কাজ শুরু করা হলেও ব্যস্ততম সড়কে মানুষ পারাপারের জন্য কোন বিকল্প রাস্তার ব্যবস্থা করা হয়নি। পরিস্থিতির শিকার বাধ্য হয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওই সড়কে পথচারীরা বিকল্প রাস্তার অভাবে ঝুঁকিপূর্ণভাবে পারাপার হতে গিয়ে দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। সেতু নির্মাণ কাজে নিম্নমানের উপকরণ সামগ্রী ব্যবহার করা ও যথাযথভাবে বিকল্প রাস্তা না করার অভিযোগ উঠে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স খান ট্রেডার্সের বিরুদ্ধে। সেতু নির্মাণ কাজে এসব অনিয়মের ঘটনা ও মানুষের দুর্ভোগের কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকেই দায়ী করছেন এলাকাবাসী। সরেজমিনে দেখা গেছে, অত্র এলাকার একমাত্র ব্যস্ততম এলজিইডির সড়কটির বিবন্দী ও টুনিয়ামান্দ্রার অংশে নির্মাণাধীন কালভার্টের কাজ চলছে। এখন সেতুটি সর্বশেষ ঢালাইয়ের অপেক্ষায় আছে। ঢালাই কাজে নিম্নমানের মাটিযুক্ত পাথর ও বালু আনা হয়েছে। এছাড়াও সেতুর মাঝখানের পিলার বাঁকা হলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নজরে আসেনি। অপরদিকে নির্মাণাধীন সেতুর উত্তর পাশে জমির সমতল থেকে কোনরকমে একটি নাজুক বিকল্প রাস্তার মত দেখা গেলেও যানবাহন ও পথচারী পারাপারে তা যথেষ্ট নয়। এরপরেও মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছেন। দেখা গেছে, আর এক ইঞ্চি পরিমাণ পানি বৃদ্ধি পেলেই বিকল্প রাস্তাটি ডুবে যাবে। এতে করে সড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়বে। স্থানীয়রা জানায়, ৪ মাস যাবত বিকল্প রাস্তা না থাকার কারণে চলাচলে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বাধ্য হয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা যাতায়াত করছেন। এতে করে একাধিক দূর্ঘটনা ঘটছে এখানে। গত কয়েকদিন আগে বিবন্দী গ্রামের রুহুল আসিমনের স্ত্রী রাহিমা বেগম নির্মাণাধীন সেতুর সামনে রাস্তা পার হতে গিয়ে দূর্ঘটনার শিকার হন। এ ঘটনায় তার পাঁজরের ৬টি হাড় ভেঙে যায়। এছাড়াও ভ্যান গাড়ি উল্টে পাশের ডোবায় গিয়ে পড়ে এক ব্যবসায়ীর ৬০টি মুরগী মারা গেছে। প্রতিনিয়ত কৃষকের ধান বোঝাই অটোরিক্সা, মোটরসাইকেল ও পথচারীরা দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। এছাড়া রোগী বহনকারী এ্যাম্বুলেন্স ও অন্যান্য গাড়ি আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে ভোগান্তিতে পড়ার ঘটনা তো আছেই বলে জানান এলাকাবাসী। এসময় সেতু নির্মাণ শ্রমিকরা জানান, কাজের ঠিকাদার হিসেবে রতন মোল্লা নামে এক রড সিমেন্ট ব্যবসায়ীর আন্ডারে তারা এখানে কাজ করছেন। এ বিষয়ে রতন মোল্লার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি একজন সাপ্লায়ার মাত্র। স্থানীয় এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সেতুটি নির্মাণে সরকারি বরাদ্দ ধরা হয়েছে প্রায় ২৪ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। কাজের তদারকির দায়িত্বে রয়েছে উপজেলা এলজিইডির সহকারী প্রকৌশলী নুর মোহাম্মদ। মেসার্স খান ট্রেডার্স নামক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার আব্দুল জহির খান সেতুর কাজ করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি বলেন, নিম্নমানের উপকরণ সামগ্রী সেতুর ঢালাই কাজের জন্য আনা হচ্ছে। অপরদিকে এসব সামগ্রী আনার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বড় লরি ও ট্রাক। গ্রামীন সড়কে চলাচলের অনুপযোগী এসব গাড়ির অতিরিক্ত ওভারলোডিংয়ের কারণে পাকা সড়ক অনেকাংশে ভেঙেচুড়ে ও দেবে গেছে। কয়েকমাস যাবত কচ্ছপ গতিতে নির্মাণ কাজ চলছে। চলতি মাসেই কাজের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। এছাড়াও এখানে লোকদেখানো একটি বিকল্প রাস্তা করা হলেও অনেক সময় দূর্ঘটনা ঘটছে। অনেক পথচারী আহত হচ্ছেন। মেসার্স খান ট্রেডার্সের কর্ণধার ঠিকাদার আব্দুল জহির খান অটলের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি মূল ঠিকাদার। তিনি জানান, রতন মোল্লা তার পার্টনার। বিকল্প রাস্তার কাজের বিষয়ে টেন্ডারে উল্লেখ নেই। সেতু নির্মাণ কাজে নিম্নমানের উপকরণ সামগ্রী ব্যবহার করার কথা তিনি অস্বীকার করেন। বিকল্প রাস্তার অভাবে একাধিক দূর্ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে এ বিষয়ে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। এ ব্যাপারে শ্রীনগর উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী মো. রাজিউল্লাহ জানান, অনিয়মের কারণে সেতুর কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। দ্রুত বিকল্প রাস্তা নির্মাণের জন্য তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
শ্রীনগরে কালভার্ট নির্মাণ কাজে অনিয়মের অভিযোগ
আগের পোস্ট