তদন্তে পিবিআই, ডুবুরী দিয়ে দা-সহ আলামত উদ্ধার
নিজস্ব প্রতিবেদক
শ্রীনগরে কুলসুম বেগম (৩৫) নামের এক গৃহবধূ নিখোঁজের ১৯ দিন পর গত ৫ ফেব্রুয়ারী তার কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়েছে। পিবিআইয়ের তদন্তের ১১ দিনের মাথায় খুনী মো. সুমন শেখ (৩২) গ্রেপ্তার হয়েছে। গত শুক্রবার পুনরায় খুনীকে সাথে নিয়ে পিবিআইয়ের সদস্যরা ডুবুরী দিয়ে পুকুরে তল্লাশী করে দা উদ্ধার করে। এর আগে খুনীর দেওয়া তথ্যমতে তাকে সাথে নিয়ে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনাস্থলের পাশে পুকুর থেকে ডুবুরীদল গৃহবধূর ভ্যানিটি ব্যাগ উদ্ধার করে। ভ্যানিটি ব্যাগে থাকা সাড়ে ৫ হাজার টাকা, ছেলে অয়নের জাতীয় পরিচয়পত্র, এনজিও সদস্য বই, চিরুনী, ভ্যাসলিন, চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র পাওয়া যায়। এসময় তার ওড়নাও উদ্ধার হয়। কুলসুম বেগম শ্রীনগর উপজেলার আটপাড়া ইউনিয়নের হাঁসারগাঁও গ্রামের মো. ইকবাল হোসেনের স্ত্রী ও একই উপজেলার তন্তর ইউনিয়নের রুসদী গ্রামের আলী আকবর মোড়লের মেয়ে। অপরদিকে খুনী সুমন আটপাড়া ইউনিয়নের হাঁসারগাঁও গ্রামের আলী হোসেনের ছেলে।
এলাকাবাসী জানায়, নিখোঁজের ১৯ দিন পর গত ৫ ফেব্রুয়ারী জমিতে চাষ করতে গিয়ে গন্ধ পেয়ে এক কৃষক গিয়ে দেখে একটি কঙ্কাল। এরপর এলাকাবাসী ও কুলসুমের মেয়ে নুসরাত জাহান অরিন (১৬) গিয়ে স্যান্ডেল ও শাড়ি দেখে সনাক্ত করে এটা তার মা। কুপিয়ে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল তাকে। কঙ্কালের কিছু কিছু অংশ বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার করা হয়। গত শুক্রবার সকালে ঐ এলাকায় একটি হাড় পাওয়া যায়। স্বজনরা জানায়, প্রতিবেশি সুমন বিদেশে অয়নকে পাঠানোর জন্য ৫ লাখ টাকা নিয়েছে। পাঠাতে না পারায় টাকা ফেরতের জন্য চাপ দেওয়ার কারণে হয়তো খুনের ঘটনা ঘটেছে।
কুলসুম বেগমের ছেলে কামরুল হাসান অয়ন (১৯) জানায়, আমার মা চলে গেছে, আর তো ফিরে পাবো না। মায়ের কোলে ঘুমোতে পারব না। তাই এই খুনীর ফাঁসীর দাবী জানাই। যাতে করে আর কেউ এমনভাবে মা হারা না হয়। এ কথা বলে সে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।
কুলসুমের ভাসুর নুর হোসেন জানান, প্রতিবেশি সুমনকে ৫ লাখ টাকা দিয়েছিলো কুলসুম। তার ছেলে অয়নকে বিদেশ পাঠানোর জন্য এই টাকা দেয়। বিদেশে পাঠাতে পারেনি, টাকাও ফেরত দেয়নি। এ নিয়ে সে বারবার চাপ দেওয়ায় খুন করেছে। কুলসুমের ভাই মো. আনোয়ার হোসেন জানান, যারা হত্যাকান্ডে জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও সুমনের ফাঁসির দাবী জানান তিনি।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) মুন্সীগঞ্জ জেলা পরিদর্শক ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এমদাদ হক জানান, আজ (শুক্রবার) খুনে ব্যবহৃত দা উদ্ধার হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভ্যানিটিব্যাগ ও তার ব্যবহৃত কিছু জিনিসপত্র উদ্ধার হয়েছে। খুনীকে কঙ্কাল উদ্ধারের ১১ দিন পর গ্রেপ্তার করা হয়েছে। উদ্ধার কার্যক্রম শুক্রবার দুপুরে সমাপ্ত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১৭ জানুয়ারী নিখোঁজ হয় কুলসুম বেগম। এর ১৯ দিন পর ৫ ফেব্রুয়ারী খুনীর বাড়ির কাছাকাছি তার স্বামীর জমির মধ্যে তার কঙ্কাল পাওয়া যায়। সেদিনই বাদী হয়ে ছেলে অয়ন থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে। কঙ্কাল উদ্ধারের ১১ দিনের মাথায় খুনীকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই।
শ্রীনগরে গৃহবধূর কঙ্কাল উদ্ধারের ১১ দিন পর খুনী গ্রেপ্তার
আগের পোস্ট