নিজস্ব প্রতিবেদক
চিকিৎসক, প্রয়োজনীয় জনবলের সংকট ও চিকিৎসা সামগ্রীর অভাবে ব্যাহত হচ্ছে শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্যসেবা। রাজধানী থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত শ্রীনগর উপজেলায় মোট ১৪টি ইউনিয়নে প্রায় ৫ লাখ মানুষের বসবাস। এখানে স্বাস্থ্যসেবার মান এখন প্রদীপের নিভু নিভু আলোর পর্যায়ে চলে এসেছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন পর্যায়ে মোট ৩৫ জন চিকিৎসক দিয়েই চলছে স্বাস্থ্যসেবা। এর মধ্যে ডেপুটেশনে আছেন ১০ জন চিকিৎসক। তারা শুধু বেতন তুলে চলে যান। শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকসহ মোট পদের সংখ্যা ১৩৩টি। এর মধ্যে ৫৭টি পদই শূণ্য।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চক্ষু, ইএনটি, কার্ডিও, সার্জারি, চর্ম ও যৌনরোগের কনসালটেন্ট পদগুলো শূণ্য রয়েছে। আর যারা আছেন এর মধ্যে অনেকেই নিয়মিত কর্মস্থলে আসেন না। ৫ বছর ধরে আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনটি জনবলের অভাবে বন্ধ আছে। ইসিজি মেশিনটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর গত জুলাই মাসে পুনরায় চালু করা হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক্সরে সেকশন চালু থাকলেও বেশিরভাগ সময়েই রোগীরা এই সেবাটির জন্য অন্যান্য প্রাইভেট ক্লিনিকে যাচ্ছেন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরের পূর্বপাশে অপরিষ্কার অপরিচ্ছন্ন ও ময়লা আবর্জনা যত্রতত্র পড়ে রয়েছে। হাসপাতালের পানি নিষ্কাশনের ড্রেনগুলো ময়লা আবর্জনায় প্রায় ঢাকা পড়েছে। লক্ষ্য করা যায়, হাসপাতালের পিছন দিকে সরকারি এ্যাম্বুলেন্সের সাথে রাখা হয়েছে আরো ৫টি প্রাইভেট এ্যাম্বুলেন্সের সারি। জানা যায়, এসব এ্যাম্বুলেন্সের মালিক রয়েছেন হাসপাতালের ইর্মাজেন্সির সেকমো মলিনা পারভীনের ৩টি, ষোলঘর সাবেক ৫নং ওয়ার্ডের ইদ্রিস মেম্বারের ছেলে টিপুর ১টি। জরুরী কাজে এসব রোগীদের প্রাইভেট এ্যাম্বুলেন্সের ওপরই বেশিরভাগ সময় নির্ভরশীল থেকে অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হচ্ছে। হাসপাতালের সরকারি ১টি এ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে ১টি এ্যাম্বুলেন্স দিয়েই রোগী আনা নেয়ার কাজ চলে। এছাড়াও প্রায় সময়ই পানি ব্যবস্থা বন্ধ থাকার ফলে হাসপাতালের টয়লেটগুলো নোংরা থাকছে। এতে টয়লেট মানুষের ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। হাসপাতালের যেখানে সেখানে ঔষধ বিক্রয়কর্মীদের আনাগোনা ও দালাল চক্র দ্বারা রোগীরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন। এছাড়াও হাসপাতালে নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে বলে রোগীরা অভিযোগ করেছেন।
এসময় চিকিৎসা নিতে আসা একজন রোগী জানান, আমার বয়স ৫৪ বছর। আমি শ্বাসকষ্টজনিত রোগী। এখানে ডাক্তার দেখিয়ে বের হলেই বাইরের হাসপাতালগুলোর দালাল পরিক্ষার জন্য প্রেসক্রিপশন টেনে নিয়ে যায়। ওয়ার্ডে গিয়ে লক্ষ্য করা যায়, অধিকাংশ রোগীর বিছানায় ইয়াসমিন দেলোয়ার ডায়াগনষ্টিক ও হাসপাতালের রিপোর্ট। খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, প্রায় প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ৩ জন পুরুষ ও ১ জন নারীকর্মী সরকারী হাসপাতাল থেকে রোগী ইয়াসমিন দেলোয়ার ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে পাঠায়। এছাড়াও প্রতিটি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের দালাল রয়েছে চেম্বারের সামনেই।
এলাকাবাসী জানায়, প্রতিদিন শত শত নারী-পুরুষ এখানে চিকিৎসা সেবা নিতে আসছেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগ রোগীই নিম্নআয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। বাধ্য হয়েই এসব মানুষ চিকিৎসা সেবা নিতে এসে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডাঃ শংকর কুমার পাল বলেন, এখানে চিকিৎসকের অভাব রয়েছে। প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে হাসপাতাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা সম্ভব হচ্ছেনা। ভবনের অবকাঠামো পুরাতন হওয়ায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও পানি সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে।
শ্রীনগরে জনবলের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবা
আগের পোস্ট