নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলাবাসী দীর্ঘদিন ধরেই দাবী করে আসছিল একটি নিউরো সার্জিক্যাল ইউনিট স্থাপনের জন্য। কিন্তু আদৌ এই ব্যাপারে কেউ পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ে চালু হওয়ার পর থেকেই সড়ক দূর্ঘটনায় প্রচুর আহত রোগীসহ কোভিডমুক্ত পরবর্তী সময়ে শ্রীনগর উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী সিরাজদিখান, পদ্মা সেতু উত্তর থানা, লৌহজং ও ঢাকা জেলার দোহার উপজেলায় এ ধরনের নিউরো রোগীর হার ব্যাপকহারে বেড়েছে। এছাড়া পরিবেশগত প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এবং এই অঞ্চলে প্রতিদিন নানা দূর্ঘটনায় আহতরা আসছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে। প্রতিদিন যত রোগী আসে তাদের মধ্যে দুয়েকজন স্ট্রোক বা দূর্ঘটনায় আহত রোগী থাকে। এত রোগী সামাল দিতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা।
সড়ক দূর্ঘটনায় আহত রোগীসহ অন্যান্য রোগীরা নিউরোলজিক্যাল সমস্যা নিয়ে চিকিৎসার জন্য আসলে এখানে নিউরো সায়েন্সেস বিভাগটি না থাকায় তাদেরকে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়। ফলে ঢাকা যেতে যেতে বেশিরভাগ রোগীই ক্ষতির মুখে পড়ে। গত ২৫ জুন স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওয়ার পর থেকে চলতি জুলাই মাসেই বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়েসহ অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতে একাধিক সড়ক দূর্ঘটনায় এ পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আহত হয়েছেন আরো ৪০ জন। মাথায় আঘাতজনিত কারণে বেশিরভাগের মৃত্যু হয়। আহতরা প্রত্যেকেই মাথায় আঘাতজনিত।
আটপাড়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রানা হাবিবুল্লাহ মিয়া দাবী জানিয়ে বলেন, ঢাকা-মাওয়া রোড হওয়ার পর আমাদের বিক্রমপুর তথা মুন্সীগঞ্জ অনেক উন্নত হয়েছে। কিন্তু চিকিৎসার ক্ষেত্রে তেমন কোন উন্নতি হয় নাই। বর্তমানে আমাদের এলাকায় শতকরা ৪০ ভাগ লোক স্ট্রোক বা সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যায়। এই চিকিৎসার জন্য আমাদের ঢাকায় যেতে অনেক সময় লাগে। আমাদের হাসপাতালে যদি নিউরো সায়েন্সেস বিভাগসহ আইসিইউ থাকে তাহলে মানুষগুলো এই চিকিৎসার অভাবে আর মারা যাবে না।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশে সরদার ফার্মেসীর মালিক আসলাম সরদার জানান, করোনা পরবর্তীকালীন সময়ে ও ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে চালু হওয়ার পর এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রচুর পরিমাণে সড়ক দূর্ঘটনায় মাথায় আঘাতজনিত রোগী ও ব্রেন স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাকের রোগী আসে। এখানে নিউরো সায়েন্সেস বিভাগ ও ডাক্তার না থাকায় রোগীরা সেবা পায় না। অনেক রোগীদের তাৎক্ষণিক অপারেশন প্রয়োজন। নিউরো সায়েন্সেস বিভাগটি না থাকায় চিকিৎসা নেয়া সম্ভব হয় না। তাই এখান থেকে রোগীদের ঢাকা পাঠিয়ে দেয়। এতে বেশিরভাগ রোগীই মারা যায়। আমাদের দাবী, সরকার যেন খুব তাড়াতাড়ি এখানে একটি নিউরো সায়েন্সেস ইউনিট চালু করেন।
শ্রীনগর উপজেলা প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ মোঃ হামিদুল ইসলাম স্বপন দাবী জানিয়ে বলেন, ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে চালু হওয়ার পর মোটরসাইকেল ও বাস দূর্ঘটনা অনেক বেড়ে গেছে। মোটরসাইকেল চালকদের হেলমেট না থাকায় এবং বাসের যাত্রীরা দূর্ঘটনার কবলে পড়লে বেশিরভাগ রোগীই মাথায় আঘাত পায়। এরকম আহত রোগীদের তাৎক্ষণিক কাছাকাছি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত ডাক্তারা বলেন, এখানে নিউরো সায়েন্সেস বিভাগটি খুব প্রয়োজন। এখানে এই বিভাগটি না থাকায় আমরা এসব রোগীদের ঢাকায় পাঠালে পথিমধ্যে বেশিরভাগ রোগীই মারা যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
আমাদের দাবী, সরকার যেন সুদৃষ্টি দিয়ে অতি দ্রুত এখানে একটি নিউরো সায়েন্সেস বিভাগ চালু করেন। যেহেতু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এই বিভাগটি চালু করার জন্য অনেক জায়গাও রয়েছে। সরকার উদ্যোগ নিয়ে এটি এখানে চালু করলে অনেক রোগী তাৎক্ষণিক সেবা পেয়ে সুস্থ হয়ে যেতে পারত।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা আবু তোহা আদনান শাকিল বলেন, এলাকাবাসী এই দাবী করতেই পারে। সরকারের পলিসি যেটা হলো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর জেলাতে এবং আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য বিভাগে প্রেরণ করেন।