নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে নির্যাতিত এক গৃহবধু মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়লেও প্রবাসী স্বামীসহ তার শ্বশুরবাড়ির কেউ কোন ধরনের খোঁজখবর নিচ্ছেনা বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার বাঘড়া ইউনিয়নের বরিবর খোলা গ্রামের সামাদ মোল্লার মেয়ে লাবনী আক্তার (২১) গুরুতর অসুস্থ। মা বিলকিস বেগম জানায়, তার মেয়ে লাবনী আক্তার জয়পাড়া পদ্মা কলেজে পড়ালেখা করতেন। প্রায় ৩ বছর পূর্বে উপজেলার মধ্য কামারগাঁও গ্রামের সিরাজ শেখের ছেলে হেলাল শেখ (৩৪) এর সাথে লাবনীর বিয়ে হয়। বিয়ের প্রায় ৬ মাস পর ১২ লক্ষ টাকা খরচ করে মেয়ে জামাতাকে সৌদিআরব পাঠাই। মেয়ে জামাতা বিদেশ যাওয়ার কিছুদিন পর হতে শ^শুরবাড়ির লোকজন লাবনীকে কারণে অকারণে গালিগালাজ ও বিভিন্নভাবে মানসিক নির্যাতন করে আসছিল। এমনকি ভরন-পোষণ ও ঠিকমত খাবার-দাবার দিতেননা। প্রবাসী স্বামীকে এসব বিষয় জানালে সে উল্টো লাবনীর সাথে খারাপ আচরণ করতো। একসময় প্রবাসী স্বামী লাবনীর সাথে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। গৃহবধু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে শ^শুরবাড়ি থেকে কোন ধরনের চিকিৎসা না করিয়ে গত ২৫ মে নিজ বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। অসুস্থ লাবনীর মা চিকিৎসার জন্য মেয়েকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয় নিয়ে যান। সেখানে জানতে পারেন তার মেয়ের দুটি কিডনিতেই মারাত্মক সমস্যা দেখা দিয়েছে। পরে ১৫ দিন আইসিইউতে ভর্তি রাখা হয় তাকে। পরবর্তীতে ঢাকা কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালে কয়েকবার ডায়ালাইসিস করান। মেয়েকে বাঁচানোর জন্য সর্বস্ব খুইয়ে এখন মানুষের দ্বারে দ্বারে সাহায্য চাচ্ছেন। এমনকি চিকিৎসার জন্য পদ্মা কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরাও কিছু টাকা চাঁদা তুলে দেন লাবনীর মায়ের হাতে। অথচ প্রবাসী স্বামীসহ গৃহবধুর শ^শুরবাড়ির কেউ এখনও পর্যন্ত কোন ধরনের খোঁজ নেয়নি। এ বিষয়ে বিয়ের ঘটক নার্গিস বেগমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি লাবনীর ব্যাপারে ওর শ^শুরবাড়ি গিয়েছিলাম। কিন্ত তারা উল্টো আমাকে গালিগালাজ করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। বিলকিস বেগম আরো জানায়, মেয়ে লাবনীকে তার শ^শুরবাড়ি থেকে ভরণ-পোষণ না দেওয়া ও তার স্বামী কোন ধরনের যোগাযোগ না রাখার কারণে ভাগ্যকুল ইউপি চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন শাহাদাত, ইউপি সদস্য মোশারফ হোসেন, শহিদ মেম্বার, মোহাম্মদ আলীসহ একাধিক গন্যমান্য ব্যক্তির দ্বারস্থ হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এ বিষয়ে লাবনীর শাশুড়ি হেলেনা বেগমের মোবাইলে ফোন দিলে তিনি মোবাইলটি রিসিভ করে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ফোনটি রেখে দেয়। কয়েক মিনিট পরে তার মেয়েজামাই রফিকুল মোবাইল ফোন করে বলেন, লাবনীদের বাড়ি থেকে টাকা খরচ করে বিদেশ পাঠিয়েছে একথা সত্য, কিন্ত বিয়ের আগে থেকে ওই মেয়ের ক্যান্সার ছিল। আমার শ^শুরবাড়ি থেকে তাকে আনার চেষ্টা করা হলেও তারা দেয়নি। এ ব্যাপারে গৃহবধুর মা বিলকিস বেগম বাদী হয়ে শ্রীনগর থানায় একটি অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়ে শ্রীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ হেদায়াতুল ইসলাম ভুঞার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ হয়ে থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।