নিজস্ব প্রতিবেদক
শ্রীনগরে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে নাবালিকা এক তরুণীকে (১৬) ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার আটপাড়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের পূর্ব আটপাড়া গ্রামের সাঈদ মাঝির পুত্র শিহাব মাঝির (২১) বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় দুই পরিবারের সমঝোতায় আইনী প্রক্রিয়ায় হলফনামা করার নামে গতকাল রবিবার সকালে আটপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান আটপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে দুই পরিবারকে নিয়ে বৈঠকে বসেন। এতে চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে এলাকার অতি উৎসাহী একটি মহল সালিশ বৈঠকে সাঈদ মাঝির পক্ষে ৮ লাখ টাকায় রফাদফার জোর চেষ্টা চালায়। ভুক্তভোগী তরুণী ঢাকার কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া এলাকার বাসিন্দা। এ ঘটনায় কেরানীগঞ্জ থানায় অভিযুক্ত শিহাবসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগীর পিতা।
জানা গেছে, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি অভিযুক্ত শিহাব মাঝি ওই তরুণীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আটপাড়া তার বাড়িতে আনে। পরে সাঈদ মাঝির সহযোগিতায় তার এক আত্মীয়ের বাসায় স্থানীয় মোল্লা ডেকে তরুণীর সঙ্গে শিহাবের সরাকাবিন করানো হয়। পরে শিহাবের ফুপাতো বোনজামাই তানভীরের বাসায় ওই তরুণীকে ৬ দিন শিহাব ধর্ষণ করে। পরে তরুণীকে হঠাৎ মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে শিহাব ওই বাসা থেকে সটকে পড়ে। উপায় না পেয়ে ভুক্তভোগী তরুণী গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বিকালে আটপাড়া শিহাবের বাড়িতে গিয়ে উঠে। রাত ঘনিয়ে আসলে তরুণীকে এক প্রতিবেশীর বাড়িতে রাখা হয়। পরদিন শুক্রবার সকালে সাঈদ মাঝি তরুণীকে সঙ্গে করে কেরানীগঞ্জে তার পিতা-মাতার কাছে নিয়ে গেলে তারা মেয়ে রাখতে রাজি না হওয়ায় তরুণীকে ফের আটপাড়া আনা হয়। এর মধ্যে দুই পরিবারের মধ্যে ফোনের মাধ্যমে সমঝোতা হয় কোর্টে হলফনামা করা হবে। তরুণীর ১৮ বছর পূর্ণ হলে তারা ঘর-সংসার করবে মর্মে তরুণীকে কেরানীগঞ্জে ফেরত দিয়ে আসা হয়। তবে শিহাব কোনভাবেই তরুণীকে মেনে নিতে পারবে না বলে জানালে ওই তরুণী গত ২ মার্চ দুপুরে কেরাণীগঞ্জ থেকে ফের আটপাড়া শিহাবের বাড়িতে ছুটে আসে। খবর পেয়ে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা তরুণীকে তার কার্যালয়ে এনে শিহাবের পরিবারের সাথে কথা বলেন। এতে সিদ্ধান্ত হয় রবিবার দুই পরিবারের সম্মতিক্রমে লিখিত হলফনামা করা হবে। অথচ একটি অতি উৎসাহী মহল সাঈদ মাঝির পক্ষে সাফাই করে। এতে হলফনামা প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে তরুণী ও তার পরিবারের নানা মিথ্যা অপবাদ এনে ঘটনা ধামাচাপা দিতে ৮ লাখ টাকায় রফাদফার চেষ্টা করে।
ভুক্তভোগী ওই তরুণী বলেন, শিহাব আমাকে বিয়ে করার জন্য ডেকে এনেছিল। পরে এক বাসায় রেখে সরাকাবিন করায়। সে আমার সঙ্গে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে এখন মেনে নিতে চাচ্ছে না। তরুণীর পিতা বলেন, আমাকে ডাকা হয়েছে হলফনামা করার জন্য। সমাধানের জন্য আমাকে অর্থ সাধা হলে আমি এতে রাজি হইনি। কয়েক ঘন্টার বৈঠক শেষে কোর্টে হলফনামা করার জন্য আমার কাছে ১৫ দিনের সময় চায় সাঈদ মাঝি। আমি বলেছি বুঝে জানাবো। এর আগে এ ঘটনায় আমি গত বৃহস্পতিবার শ্রীনগর থানায় অভিযোগ দায়েরের জন্য যাই। সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা আমাকে কেরানীগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করার পরামর্শ দিলে কেরানীগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করি।
সাইদ মাঝির কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চেয়ারম্যান ডাকলে ওখানে বসি। হলফনামা করার জন্য সময় চেয়েছি।
ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুর রহমানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বলেন, তিনি আমাকে জানালে আমি তাদেরকে নিয়ে বসি। এখানে শুধু দুই পরিবারের মধ্যে একটু বুঝ পরামর্শের জন্য বসা হয়েছে। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তরুণীকে বাসায় রেখে ধর্ষণ করার বিষয়টি আপনি অবগত আছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি শুনেছি তাদের মধ্যে সরাকাবিন হয়েছিল। নাবালিকার সরাকাবিন দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী কতটা যুক্তিযুক্ত এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
শ্রীনগর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা কান্তা পাল জানান, গত বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সম্মতিক্রমে আমি তাদেরকে সমাধান দিয়ে দিয়েছি। তারা উভয় পরিবার কোর্টে গিয়ে আইনী প্রক্রিয়ায় সমাধান করবেন। আদালত যেটা ভালো মনে করবেন সেই ডিসিশন দিবেন।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সালিশ বৈঠকে বসার বিষয়ে তিনি বলেন, চেয়ারম্যান বেশি ঝামেলা করছেন। উনি কেনো এ বিষয়ে ওখানে বসবেন। দুই পরিবারকে রবিবার আদালতে যেতে বলা হয়েছে।