নিজস্ব প্রতিবেদক
শ্রীনগর উপজেলার বাঘড়া ইউনিয়নে ভূমিহীনদের জন্য ঘর নির্মাণের জন্য সরকারি জায়গা উদ্ধার করে বাঘড়া ভূমি সহকারী কর্মকর্তা বিপাকে পড়েছেন। এর আগে সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী ঘর নির্মাণের জন্য জায়গা নির্ধারণ করতে গেলে স্থানীয় দখলদারদের রোষানলে পড়তে হয় ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আল-আমিনকে। এ নিয়ে স্থানীয় এক সাবেক যুবলীগ নেতা আল-আমিনের সাথে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ২৪ মার্চ মিথ্যা তথ্য দিয়ে কয়েকটি দৈনিক ও অনলাইন পোর্টালে বাঘড়া ভূমি অফিসে সেবা নিতে আসা ব্যক্তিরা হয়রানি ও সরকারের নির্ধারিত ফি থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ এনে ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আল-আমিনের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশে সাংবাদিকদের সহযোগিতা করে মহলটি। এমনটাই দাবী করছেন এলাকাবাসী।
সরেজমিনে অনুসন্ধানে গিয়ে তার সত্যতাও পাওয়া গেছে। দেখা গেছে, বাঘড়া সরূপচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে পাকা কালভার্ট সংলগ্ন রাস্তার পশ্চিম পাশে সরকারিভাবে ভূমিহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ কাজ চলছে। কিছুদিন আগে এসব ঘর নির্মাণের জন্য সরকারি এই জায়গাটি উদ্ধার করেন স্থানীয় সহকারী ভূমি কর্মকর্তা আল-আমিন। এসময় বাঘড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি শাহআলম বলেন, সরকারি জায়গা উদ্ধার নিয়ে আমার সাথে বাঘড়া ভূমি সহকারী কর্মকর্তার সাথে এখন কোন বিরোধ নেই। যা হয়েছে সেটা অতীত। আমি নিজেই সরেজমিনে থেকে জায়গা মেপে সরকারি জায়গা বুঝিয়ে দিয়েছি। তবে জায়গা নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রথম দিকে আমার সাথে আলাপ আলোচনা করা হলে ভূমি সহকারী আল-আমিনের সাথে সম্পর্কের অবনতি হতনা। আমরা বাঘড়া ভূমি অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছ থেকে একটু সম্মান পাওয়ার আশা করি। অপরদিকে প্রকাশিত সংবাদে আমার বক্তব্যকে যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে, আমি মনে করি বক্তব্যটিকে অতিরঞ্জিত করা হয়েছে।
এছাড়াও প্রকাশিত একই নিউজে অপর ভুক্তভোগী মোহাম্মদ আলীর বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, মোহাম্মদ আলী ও তার বোন যে সম্পত্তির জন্য খাজনা কাটতে ভূমি অফিস থেকে ফিরত আসেন তার কারণ হিসেবে জানা গেছে, সেবা গ্রহণকারীগণ আরএস ১০০৫৭নং একটি ভুল দাগ উল্লেখ করেন। এই দাগে তাদের নামে কোন সম্পত্তি পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে মোহাম্মদ আলীর পক্ষে রমজান নামে তার এক আত্মীয় সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসে গেলে সহকারী ভূমি কর্মকর্তা আল-আমিন অনেক খোঁজাখুঁজি করে জানতে পারেন প্রকৃতপক্ষে মোহাম্মদ আলী গংদের সম্পত্তির সঠিক দাগ নং হলো ১০৫৫৭। পরে রমজান নির্ধারিত সরকারি খরচে খাজনা কেটে নেন। এ বিষয়ে মো. রমজান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, ভূমি সহকারী আল-আমিনের বিরুদ্ধে যে সমস্ত অভিযোগ এনে প্রকাশিত সংবাদে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। এতোদিন আল-আমিনের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। প্রভাবশালীদের দখলে থাকা সরকারি জায়গা উদ্ধারের কারণেই হঠাৎ করে তার বিরুদ্ধে অনিয়মসহ বিভিন্ন অভিযোগ তোলে মহলটি।
বাঘড়ার মো. সফিকুল ইসলাম, শেখ সুমন আহমেদ, রিফাত সিকদার, মো. সবুজ, জামাল সিকদার, পলাশ খান, মো. মোশারফসহ অনেকেই বলেন, ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আল-আমিন ষড়যন্ত্রকারীদের রোষানলে পড়েছেন। কারণ এতোদিন তিনি এখানে কাজ করছেন আমরা তার কোন ধরনের অনিয়ম দেখতে পাইনি। সরকারি ঘর নির্মাণের জন্য জায়গা উদ্ধার করার পর থেকেই কয়েকজন তার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লাগে। বিষয়টি এখন অনেকের কাছেই পরিষ্কার। বাঘড়া ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো. আল-আমিন দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, এই ইউনিয়নের দায়িত্বে আসার পর থেকে সবাই আমাকে সহযোগিতা করে আসছেন। এজন্য আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। পেশাগত দায়িত্ব পালনে সরকারি জায়গা উদ্ধারের জন্য হয়ত কেউ কেউ আমার কথা-বার্তায় মনে কষ্ট পেয়েছে। তাই বলে এখানে যে সমস্ত অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে করা হচ্ছে এটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এটা অতি দুঃখজনক। এ ব্যাপারে শ্রীনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কেয়া দেবনাথ বলেন, আল-আমিনের বিরুদ্ধে এখনো পর্যন্ত কোন অভিযোগ আসেনি। সরকারিভাবে গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ কাজে সার্বিক সহযোগিতা করছেন তিনি।