নিজস্ব প্রতিবেদক
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ব্যাপকতা বাড়ার কারণে সাধারণ ছুটি আরো ১০ দিন বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। আগামী ২৬ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি বৃদ্ধি করে গতকাল বৃহস্পতিবার আদেশ জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এই ছুটিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অধীনস্থ দপ্তরসহ ১৮টি মন্ত্রণালয়-বিভাগের দপ্তরসমূহ সীমিত পরিসরে খোলা রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আদেশে বলা হয়, দেশব্যাপী করোনা ভাইরাস রোগ (কোভিড-১৯) মোকাবিলা এবং এর ব্যাপকতা বিস্তার রোধকল্পে অধিকতর সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে সরকার ২৬ এপ্রিল হতে ৩০ এপ্রিল এবং ৩-৫ মে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। ওই ছুটির সঙ্গে আগামী ১ ও ২ মে মাসের সাপ্তাহিক ছুটিও সংযুক্ত থাকবে। সাধারণ ছুটি চলাকালীন ঢাকাসহ সব বিভাগ এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগসহ ১৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অধীনস্থ দপ্তরসমূহ সীমিত পরিসরে খোলা রাখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ, জননিরাপত্তা বিভাগ, সুরক্ষাসেবা বিভাগ, তথ্য মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ দপ্তরসমূহ সীমিত পরিসরে খোলা রাখার কথা বলা হয়। অন্য সব সরকারি অফিসের কর্মকর্তাদের এই সময়ে আবশ্যিকভাবে নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি এর আগে আরো সাত দিন সাধারণ ছুটি বৃদ্ধির প্রস্তাব করে সরকার প্রধানের কাছে পাঠিয়েছিল। গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়ার পর গত ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল এবং পরে ৫-৯ এপ্রিল, পরে ১৪ এপ্রিল এবং সর্বশেষ ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি বাড়ানো হয়েছিল। ছুটি ফের বাড়ায় করোনার কারণে দেশে টানা ৪১ দিন ছুটি থাকবে।
ছুটির আওতার বাইরে থাকবে যেসব খাত: জরুরি পরিষেবা যেমন-বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও অন্যান্য জ¦ালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরসমূহের (স্থলবন্দর, নদীবন্দর ও সমুদ্রবন্দর) কার্যক্রম, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট সেবা এবং এ-সংশ্লিষ্ট সেবা কাজে নিয়োজিত যানবাহন ও কর্মীরা এ ছুটির বাইরে থাকবেন। সড়ক ও নৌপথে সকল প্রকার পণ্য পরিবহনের কাজে নিয়োজিত যানবাহন (ট্রাক, লরি, কার্গো ভেসেল প্রভৃতি) চলাচল অব্যাহত থাকবে। কৃষিপণ্য, সার, কীটনাশক, খাদ্য, শিল্পপণ্য, রাষ্ট্রীয় প্রকল্পের মালামাল, কাঁচাবাজার, খাবার, ওষুধের দোকান, হাসপাতাল ও জরুরি সেবা এবং এসবের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের ক্ষেত্রে এ ছুটি প্রযোজ্য হবে না। চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও কর্মী এবং ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জমাদি বহনকারী যানবাহন ও কর্মী, গণমাধ্যমে (ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া) কর্মীরা এ ছুটির আওতাবর্হিভূত থাকবেন। ওষুধশিল্প, উৎপাদন ও রফতানিমুখী শিল্পসহ সকল কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে চালু রাখতে পারবে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরবর্তী সময়ে শিল্প-কারখানা, কৃষি এবং উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলো ও গণপরিবহন পর্যায়ক্রমে উন্মুক্ত করা হবে। ছুটিকালীন কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা যাবে না। জরুরি কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত অফিসসমূহ খোলা থাকবে। জনগণের প্রয়োজন বিবেচনায় ছুটিকালীন বাংলাদেশ ব্যাংক সীমিত আকারে ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু রাখার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে পারবে বলেও আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।