ডেস্ক নিউজ
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা ধারণা করেছিলেন কেউ কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হওয়ার পর ঐ ব্যক্তি আর করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই। কারণ এরই মধ্য তার দেহে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়ে যায়। কিন্তু চীনসহ বিভিন্ন দেশে আরোগ্য লাভ করা অনেকের দেহে নতুন করে করোনা ভাইরেসের সংক্রমণের খবর মিলছে।
চীনে কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হওয়া রোগীদের মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশের শরীরে নতুন করে এই রোগের লক্ষণ দেখা দিয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় ১৫০ জন নতুন করে আক্রান্ত। ইরানেও একই খবর। ভারতের হিমাচল প্রদেশের উনা জেলার এক বাসিন্দা সুস্থ হয়ে বাড়ি যাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে ফের করোনা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলে আসছেন এটি এক রহস্যময় জীবাণু। সময় ও স্থানভেদে এটি চরিত্র পালটায়। এখন তা-ই যেন মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে সামনে আসছে। একাধিকবার রিপোর্ট নেগেটিভ আসার পরেও কদিন বাদে আবার রোগ ধরা পড়ছে।
কেন আবার আক্রান্ত ঃ
চিকিৎসারা বলছেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধের কোনো ওষুধ নেই এই মুহূর্তে। ফলে এখন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা-ই ভরসা। সাধারণত ভাইরাস শরীরে ঢুকলে তার সঙ্গে লড়াই করে শরীরের অ্যান্টিবডি। প্রথম লড়াইয়ে ভাইরাস দমে গেলেও নিঃশেষ হয় না। তখন হয়তো ভাইরাস ও অ্যান্টিবডি থেকে যায় পাশাপাশি। সমানে সমানে যত দিন থাকে, সমস্যা হয় না। সমস্যা হয় তখন, যখন সময়ের সঙ্গে অ্যান্টিবডি কমতে শুরু করে। মাথাচাড়া দেয় ভাইরাস। রোগ রিপল্যাস করে। আর যদি অ্যান্টিবডির সঙ্গে লড়তে লড়তে ভাইরাস নিজেকে পাল্টে ফেলে অর্থাৎ মিউটেট করে যায়, তাহলে যারা নিজেদের পাল্টাতে পারল না তারা মরে রোগ তখনকার মতো সারলেও, পরিবর্তিত ভাইরাসগুলো আবার সময়ের সঙ্গে বংশবৃদ্ধি করে এবং আবার রোগ হিসেবে ফিরে আসে।
করোনা কেন ফিরে আসছে তা এখনো অজানা। চিকিৎসকরা বলছেন, রোগীর শরীর থেকে ভাইরাস নিয়ে তার জিন স্টাডি করতে হবে। জেনেটিক ম্যাপিং যাকে বলে। প্রথমবার রোগে পড়ার পর জিনের চরিত্র যা ছিল, দ্বিতীয়বার রোগের সময় তা পাল্টে গেলে বুঝতে হবে, ভাইরাস মিউটেট করার জন্য রোগ হচ্ছে। আর এক থাকা মানে সম্ভবত বিপত্তি ঘটেছে অ্যান্টিবডি কমে যাওয়ার জন্য।
কারা আবার আক্রান্ত হয় ঃ
যাদের সংক্রমণ একটু হালকা ধাঁচের হয় ও উপসর্গ হতে হতে বেশ কিছুটা সময় পার হয়ে যায়, তাদের দ্বিতীয়বার রোগে পড়ার আশঙ্কা কম। কারণ, তত দিন ধরে ভাইরাসের সঙ্গে লড়তে লড়তে প্রচুর অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। তারাই কাজ করে রক্ষাকবচ হিসেবে। তবে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, যেমন বয়স্ক মানুষেরা, তাদের ক্ষেত্রে আশঙ্কা বেশি।
তাই কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হওয়ার পরই করোনা থেকে মুক্তি মিলেছে বলা যাবে না। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্তত দু-তিন মাস কড়া নজরদারিতে থাকতে হবে। ঘন ঘন টেস্ট করতে হবে। এই সময়ে মাস্ক পরে থাকা, ঘন ঘন হাত ধোওয়া ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ছলতে হবে।