নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রতিমূহুর্ত সাপের আতঙ্ক! মশা-মাছি, পোকা-মাকড়ের আক্রমণ! পচা পানি ও ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধ! দূষিত পানি ব্যবহারের কারণে এলাকায় চর্মরোগ-পেটের পীড়াসহ বিভিন্ন রোগ-বালাইয়ে ছেয়ে গেছে এলাকাটি। নদীটি মাছশূন্য হয়ে পড়েছে। দীর্ঘ ত্রিশবছর যাবত কচুরিপানা আটকে থাকায় এ দুরবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান ভুক্তভোগীরা। এলাকাটি হচ্ছে মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান উপজেলার ইছামতি নদীর শেষপ্রান্ত গুয়াখোলা গ্রাম ও এর পাশ্ববর্তী এলাকাসমূহ। এলাকাটিতে একসময় নদীর পানি থৈ থৈ করত। এ নৌ পথই ছিল এলাকাবাসীর যাতায়াত ও মালামাল পরিবহনের একমাত্র উপায়। নদীর পানিতে এলাকাবাসী গোসল, গৃহস্থালির কাজকর্মসহ বিভিন্ন প্রয়োজন মিটাত। কিন্তু বর্তমানে এলাকায় অপরিকল্পিত রাস্তাঘাট নির্মাণে নদীর স্রোত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নদীতে একশ্রেণীর অবৈধ মৎস্য শিকারী ঝোপ-ঝাড় ফেলে কচুরিপানা যাতায়াতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি ও একশ্রেণীর প্রভাবশালী মহল নদীতে বাধ দিয়ে নদীর অংশ দখল করায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। বর্তমানে নদীটি কচুরিপানায় পরিপূর্ণ থাকায় এখন নৌ চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। ফলে এলাকাবাসীর এখন নদীপথে যাতায়াত বন্ধ রয়েছে। মালামাল পরিবহনে সড়কপথে দ্বিগুনেরও বেশী অর্থ ব্যয় হচ্ছে। নৌকা-ট্রলারের মাঝিরা বেকার জীবনযাপন করে পরিবার পরিজন নিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। এলাকাটি নদীর শেষ প্রান্ত হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে এলাকাটি থাকে কচুরিপানায় পূর্ণ। আর শুষ্ক মৌসুমে নদীটি শুকিয়ে এমন অবস্থা হয় যে তখন পায়ে হাটা কিংবা নৌ চলাচল কোনটাই সম্ভব হয় না। এলাকাবাসীর গোসল, গৃহস্থালির কাজকর্ম করা সম্ভব হয়না। কৃষক নদীর ওপার থেকে ফসল কেটে বাড়িতে আনতে পারেনা। নদীতে পানির অভাবে কৃষক জমিতে সেঁচ দিতে পারেনা। এ কারণে এ এলাকায় ইরি, বোরো ধান চাষ বন্ধ হয়ে গেছে। এলাকায় কচুরির কারণে ও নদী শুকিয়ে যাওয়ায় নদীটিতে মাছ শূন্য হয়ে গেছে। ফলে এলাকার জেলেরা বেকার হয়ে পড়ছে। শুষ্ক মৌসুমে এলাকার কোথাও আগুন লাগলে নদীটি তখন পানি যোগান দিতে পারেনা। এলাকার কবরস্থান নদীর অপর পাড়ে হওয়ায় এলাকাবাসী এখন ঐ কবরস্থানে লাশ দাফন করার জন্য যেতে পারেনা। গ্রামবাসী জানান, গত ২০ জানুয়ারী ঐ গুয়াখোলা গ্রামের ইউনুছ শেখ মারা গেলে নদীর দুরবস্থার কারণে নদীর অপরপাড়ে গোরস্থানে তাকে তার বাপ-দাদা ও পূর্ব পূরুষের কবরের পাশে দাফন করা সম্ভব হয়নি। পরে তাকে দাফন করা হয়েছে প্রায় এক কিলোমিটার দূরের আগলাপাড়া করবস্থানে। এলাকাবাসী আমাদের প্রতিবেদককে আরো জানান যে, নদীর এ দুরবস্থা দূরীকরণের জন্য স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু কোন সমাধান পাইনি। পরে আমরা বাধ্য হয়ে স্থানীয় সমাজসেবী সংগঠন “গুয়াখোলা উন্নয়ন সমিতির মাধ্যমে জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে ২০০৭ সালে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে নদীর কিছু অংশ খনন ও নদীর বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি করে বর্ষার পানি সংরক্ষণ করে এলাকাবাসীর প্রয়োজন মিটিয়েছে। এতে এলাকায় মাছেরও বংশবিস্তার সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু দীর্ঘ প্রায় একযুগ আগের সেই সংস্কার ও গর্তগুলো ভরে যাওয়ায় আবারও সেই পানি ও যাতায়াতের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী ও এলাকার সমাজসেবক, বাসাইল উচ্চ বিদ্যালয় ও গুয়াখোলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সদস্য সালাউদ্দিন জামান জানান, বর্তমানে এলাকাবাসীর দুর্ভোগের স্থায়ী সমাধানের জন্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের ধারে ধারে ঘুরছেন বলে জানান।