নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এসময় বেশ কিছু বাড়ি-ঘর ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে দুইপক্ষের মধ্যে টেঁটাবিদ্ধসহ ৭ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহত কয়েকজন ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। কয়েকজন চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছে। এ ঘটনায় দুইপক্ষ সিরাজদিখান থানায় মামলা করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার বালুচর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড খাসকান্দি চরের গাঁও গ্রামে। এলাকায় এখনো থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পুলিশের ভূমিকা নিরব!
সরেজমিনে জানা যায়, নবধারা হাউজিং ও স্টার প্লাস হাউজিং প্রকল্পের মধ্যে দীর্ঘদিন যাবৎ জমি সংক্রান্ত বিরোধ রয়েছে। এছাড়া দুই পক্ষ একই এলাকার হওয়ায় আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে। এসব কারণে উভয়পক্ষের মধ্যে মাঝে মাঝে দেশীয় অস্ত্র টেঁটা, রামদা, লাঠি নিয়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, মারামারির ঘটনা ঘটে।
এলাকাবাসী অনেকে জানান, নবধারা হাউজিংয়ের চেয়ারম্যান শাজাহান (৩৮) ক্ষমতা দেখানোর জন্য টাকা পয়সা খরচ করে বিভিন্ন এলাকার লোকজন নিয়ে প্রভাব বিস্তার করে। সামনে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুতিও তার রয়েছে। সে বালুচর ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডে প্রভাব দেখায়। আবার অনেকে জানান, পিয়ার উদ্দিন মেম্বার (৪৫) ও স্টার প্লাস হাউজিং এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলীর সাথে শাজাহানের দ্বন্দ্ব রয়েছে। সেজন্য তাদের পক্ষের লোকজনের বাড়িঘর শাজাহানের লোকজন ভাঙচুর করেছে। কিছু হলেই শাজাহান পিস্তল নিয়ে ভয় দেখায়।
নবধারার পক্ষের লোকজন গত বৃহস্পতিবার আল-আমিনের বাড়ি ও অফিস ভাঙচুর করে। মো.আলীর বাড়ি, বদু উদ্দিনের বাড়ি ও এলাকার ২টি দোকানসহ ৫/৬টি বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট হয় বলে অনেকে জানান।
বদুউদ্দিন মাদবর (৭৮) জানান, সেদিন নাজিরাবাজার এলাকায় শাজাহানের লোকজনের সাথে ঝগড়া হয়। তার সূত্র ধরে এলাকায় স্টার প্লাস হাউজিং এর সাথে সম্পৃক্তদের বাড়ি ঘরে হামলা করে প্রায় ৫০/৬০ জন। সাথে আমাদের বাড়ির দরজা, জানালার থাই গ্লাস, মোটর সাইকেল ভাঙচুর ও আলমারি থেকে ৫ ভরি স্বর্ণসহ মুল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যায় শাজাহানের লোকজন।
আল আমিনের স্ত্রী জানায়, তাদের বাড়ির সামনে যুবলীগের অফিস ও সমিতির অফিস ভেঙ্গে চুরমার করে দেয়। সেসময় সেখানে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবিও তছনছ করে। টেবিলের ড্রয়ারে থাকা সমিতির টাকাগুলো লুট করে নিয়ে যায় শাজহান ও তার লোকজন। মহিলাদের চুলে ধরে মারধর করে। কয়েকজন আহত হয়ে হাসপাতালে আছে। শাজাহানের লোকজনের পুলিশের সাথে সখ্যতা থাকায় তারা বলে, পুলিশতো আমাদের কিছু করবে না।
মো. আলীর মা জানান, গত বৃহস্পতিবার সামনের বাজারে কারা ঝগড়া করেছে জানি না, আমার ছেলে মো. আলী ঢাকায় থাকে। আমার বাড়িতে এসে নবধারার লোকজন ভাঙচুর করে ও একটি মোটর সাইকেল ও সিএনজি ভেঙ্গে দেয়। আমার ছেলেকে খুঁজে তাকে জানে মেরে ফেলবে। এসময় কয়েকজন মহিলাকে মারধর করে। একজনের হাত ভেঙে দেয়, একজনের মাথা ফাটিয়ে দেয়। আরেকজনের পায়ে গুরুতর আঘাত করে তারা হাসপাতালে আছে।
এ বিষয়ে শাজাহানের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, নাজিরা বাজারে গরীব এক লোককে মারধর করেছে মো. আলীর লোকেরা। খবর পেয়ে তার আত্মীয়-স্বজন সেখানে যাওয়ার সময় পিয়ার মেম্বারের বাড়ির সামনে তাদের আটকে দেয় এ নিয়ে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। আমি ছিলাম না যারা ছিলো ওদের সাথে কথা বললে জানতে পারবেন।
এ বিষয়ে নবধারার পক্ষের দু’জন জানান, পশ্চিমপাড়া নাজিরা বাজার এলাকায় মারামারি হইছে, টেঁটা বিনছে শুনছি, দেখতে যাইতেছিলাম পিয়ার মেম্বারের বাড়ির নামায় রাস্তায় যাওয়ার পর পিয়ার মেম্বার বাধা দেয়। এ ঘটনা শুইন্না পূর্ব পাড়ার লোকজন পিয়ার মেম্বারের বাড়ি ভাঙচুর করে।
অপরজন জানান, মারামারিতে আমাদের একজন রুবেল (১৭) টেঁটাবিদ্ধ হয় ও হানিফ (১৮) এর মাথায় দা এর কোপ লাগে, তারা হাসপাতালে আছে। বালুচর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবু বক্কর এই ঝামেলাগুলো সৃষ্টি করেছে। তার কারণে এই মারামারি শেষ হয়না।
বালুচর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক জানান, আমি ১৯ বছর ধরে চেয়ারম্যান, কোনদিন কোন মারামারি ঝামেলা পছন্দ করি না। নদীর ওপার ঐ এলাকায় শাজাহান প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। মানুষের জমি-জমা দখল করে ভরাট করে নিচ্ছে। অনেকের জমি ভাড়া নিয়ে দখল করেছে। পিয়ার মেম্বার যুবলীগের ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক তাকে বাড়িতে দুই দিন অবরুদ্ধ করে রেখেছিলো। গত বৃহস্পতিবার শাজাহান ও তার লোকজন পিয়ার মেম্বারের বাড়িসহ বেশ ক’টি বাড়ি ভাঙচুর করেছে। নবধারার এই শাজাহান কেরানীগঞ্জের কিছু, চর পানিয়া, বাসাইল, ও বালুচরের শতাধিক ছেলেকে পালে। নেশা খাওয়ায় আর খরচ চালায়। সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েমের চেষ্টা করছে। পুলিশকে টাকা দিয়া ভালো মানুষকে মামলায় জড়ায়। এ বিষয়ে এর আগে এসপি সাহেবের সাথে কথা বলেছি। এই বালুচরের ঘটনার কারণে এর আগে পরপর দুই ওসি বদলী হইছে। প্রসাশন যদি ওরে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে আমি কি করবো।
সিরাজদিখান থানা ওসি জালাল উদ্দিনকে ফোনে বারবার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
এ বিষয়ে সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার সিরাজদিখান সার্কেল মো. রাজিবুল ইসলাম বলেন, দুই পক্ষের দুইটা মামলা রেকর্ড হয়েছে। এ ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাদের ব্লাড তো আমরা বদলাতে পারবো না। আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।
সিরাজদিখানে আধিপত্য নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ; বাড়ি-ঘর ভাঙচুর, টেঁটাবিদ্ধসহ আহত ৭, থানায় মামলা
আগের পোস্ট