নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে পরাজিত হয়ে বিজয়ী প্রার্থীর পরিবারের লোকেদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার কেয়াইন ইউনিয়নের মির্জা কান্দা এবং মজিদপুর গ্রামে। এলাকাবাসী জানায়, গত ২৬ ডিসেম্বর কেয়াইন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী সদস্য হিসেবে মাইক প্রতীক নিয়ে নির্বাচত হন জিয়াসমিন বেগম আর পরাজিত হন কলম প্রতীক নিয়ে শাহিনুর বেগম। বিজয়ের পর ২৭ তারিখ জিয়াসমিন বেগম তার ভাই, ভাতিজাসহ ৮/১০টি মোটরসাইকেল নিয়ে শিকারপুরসহ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় শুভেচ্ছা বিনিময় করে। বিকেলের দিকে তার ভাশুরের বাড়ি মজিদপুর গ্রামে যান। সেখানে রাস্তার উপর মোটরসাইকেলগুলো রেখে গেলে শাহিনুরের কর্মীরা তার মোটরসাইকেলগুলো ভাঙতে শুরু করে। সেখানে খবর পেয়ে জিয়াসমিন ও তার লোকজন আসে। তবে শাহিনুরের লোকজন বেশী থাকায় তারা মোটরসাইকেল রাস্তায় ফেলেই পালিয়ে যায়। স্থানীয় মোসলেম উদ্দিন বলেন, জিয়াসমিন তার লোকজন নিয়ে পরাজিত প্রার্থী শাহিনুরের বাড়ির সামনে মোটরসাইকেলগুলো রেখে পায়ে হাঁটা রাস্তা ধরে সবার সাথে দেখা করতে যায়। তার কিছুক্ষণ পরে শাহিনুরের পক্ষের লোকজন মোটরসাইকেলগুলো লাঠি দিয়ে পিটিয়ে ভাঙে। একটু পরেই সেখানে শহিদুল তার লোকজন নিয়ে আসে। শহিদুলের লোকবল বেশি থাকায় সেখান থেকে জিয়াসমিন লোকজন নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে এলাকায় অনেক লোকজন জড়ো হয়ে যায়। কে বা কারা বোমা ফাটিয়েছে সেটা আমি দেখি নাই কিন্তু ৩টা বোমের আওয়াজ পেয়েছি। জিয়াসমিন বেগম বলেন, আমি নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ায় আমার বিরোধী পক্ষ শাহিনুর বেগমের স্বামী উজ্জ্বল, নবনির্বাচিত মেম্বার শহিদুল ইসলাম, বাপ্পিসহ তাদের দলবল নিয়ে আমাদের উপর আক্রমণ করে। আমার লোকদের মোটরসাইকেলগুলো ভেঙ্গে ফেলে। আমি ওদের ভয়ে পালিয়ে আমার শ্বশুরবাড়িতে গেলে তারা সেখানে তিনটা ককটেল ফাটায়। তাতে তাদের নিজেদের একজন লোক আহত হয়। শুনেছি আরেকজন দৌড়াদৌড়ি করতে গিয়ে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পায়। আমরা ওদের ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে ৯৯৯ এ ফোন দিলে সেখানে পুলিশ আসে। সেখানে চেয়ারম্যান ও সার্কেল এসপি এসে উপস্থিত হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়, তারা চলে যায়। তারা বলে কেউ যদি কোনো মামলা করতে চান তাহলে থানায় আসেন। চেয়ারম্যান আমাদের দুইপক্ষকে ডেকে আপোষ মীমাংসা করে দেওয়ার কথা বললে সেটা উভয়পক্ষই মেনে নেয়। তখন চেয়ারম্যান বলে তাহলে কেউ যেন কোনো মামলা না করে। আমরা চেয়ারম্যানের কথা শুনে কোন মামলায় না গিয়ে বাড়িতেই থাকি। কিন্তু রাত ১০টার দিকে পুলিশ এসে আমার দেবর ইসলাম শেখ সাবেক মেম্বার তাকে বাসায় এসে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে আমার স্বামী, ছেলে ও আরেক দেবর পুলিশের কথা শোনার জন্য যায়। সেখান থেকে পুলিশ তাদের গাড়িতে উঠিয়ে থানায় নিয়ে যায়। বোমা মারল উজ্জ্বল ও শহিদুলরা আর মামলার আসামি হল আমার স্বামী, ছেলে ও দেবর। আমরা এই মিথ্যা ষড়যন্ত্রমূলক মামলা থেকে পরিত্রাণ চাই। আর আমাদের উপর হামলা করা সন্ত্রাসীদের বিচার চাই। কেয়াইন ইউপি চেয়ারম্যান আশ্রাফ আলী বলেন, আমি উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার কথা শুনে সেখানে হাজির হই। আমার কাজ এলাকার শান্তি রক্ষায় আপোষ মীমাংসা করা। সেখানে আমি আপোষ মীমাংসার কথা বলি। তবে বোমা বা ককটেল বিস্ফোরণ তো আর আপোষযোগ্য নয়। সেখানে থানা পুলিশ ও সার্কেল এসপি তদন্ত করে বিস্ফোরণের ঘটনার সত্যতা পেয়ে মামলা নিয়েছে। আমি আজকেও ওই এলাকায় গিয়েছিলাম যেন এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা বজায় থাকে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস.আই মো. সাদ্দাম বলেন, বিধি মোতাবেক আসামীদের গ্রেফতার করা হয়েছে এবং মামলার তদন্ত এখনো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সহকারী পুলিশ সুপার সিরাজদিখান সার্কেল রাসেদুল ইসলামের কাছে এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।