নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে কমছে না বাল্যবিবাহ। কিছু কিছু জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় বেড়েই চলেছে। ২০১৬ সালে বাল্যবিবাহ মুক্ত ঘোষণা করা হয় এ উপজেলাকে। বাল্যবিবাহ মুক্তের জন্য সকল কার্যক্রম সঠিকভাবে না হওয়ায় আজও পরিপূর্ণতা পায়নি। গত শুক্রবার দিবাগত রাত ১১টায় উপজেলার মালখানগর ইউনিয়নের আরমহল গ্রামে নানা নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে একটি বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটে, যা ওপেন সিক্রেট। পুলিশ ও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, গত ২৬ আগস্ট আরমহল গ্রামের হুমায়ুন হাওলাদারের ছেলে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়। সেদিন হুমায়ুন হাওলাদার বাদী হয়ে সিরাজদিখান থানায় সাধারণ ডাইরী করেন তার ছেলে বাঁধন (১৭) নিখোঁজ রয়েছে। ডাইরী নং ১১৫৩। পরদিন ২৭ তারিখ ছেলে বাড়িতে ফিরে এসেছে, এমন তথ্য জানিয়ে গতকাল শনিবার দুপুরে ২৮ আগস্ট সাধারণ ডাইরীটি বাতিল করার আবেদন করেন হুমায়ুন হাওলাদার। অপরদিকে উপজেলার বাসাইল ইউনিয়নের ব্রজেরহাটি গ্রামের জাকির শেখের স্ত্রী জিয়াসমিন বেগম ২৬ আগস্ট সিরাজদিখান থানায় সাধারণ ডাইরী করেন তার মেয়ে জেরিন আক্তার (১৭) নিখোঁজ। ডাইরী নং ১১৮৩। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় মেয়ের পক্ষ সাধারণ ডাইরী বাতিল করতে গেলে পুলিশ মেয়েকে নিয়ে আসতে বলেন। এলাকাবাসী অনেকে জানান, বাঁধন ও জেরিন খালাত ভাইবোন। তাদের দু’জনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্কের কারণে দু’জন বাড়ি থেকে একসাথে পালিয়েছিলো। ২৭ আগস্ট শুক্রবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে আরমহল গ্রামের মসজিদের ইমাম ইউসুফ তাদের সরা পড়িয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শী অনেকে জানান। এসময় মালখানগর ইউনিয়ন (১-২-৩ নং ওয়ার্ড) মহিলা ইউপি সদস্য ঝর্ণা বেগম ও ১নং ওয়ার্ড সাবেক ইউপি সদস্য ইছালেক ও উপজেলার বাসাইল ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মুরাদসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন বলে তারা জানান। এর আগে মালখানগর ইউনিয়ন কাজী আব্দুল আউয়াল জিহাদীর সহকারীকে কাবিন করার জন্য ছেলেপক্ষ বলেছিল। সহকারী কাজী শাখাওয়াৎ বিস্তারিত জেনে তাদের কাবিন করাননি। এ বিষয়ে ছেলের বাবা হুমায়ুন হাওলাদার জানান, কোন কাবিন বা বিয়ে করানো হয়নাই। মেয়ের মা জিয়াসমিন বেগম জানান, আমার মেয়ে নাবালিকা তাই আমার বাসায় নিয়ে এসেছি। মালখানগর ইউপি সদস্য ঝর্ণা বেগম জানান, তিনি সেখানে ছিলেন না। তবে তিনি শুনেছেন ছেলেমেয়ে আত্মীয়। বয়স পরিপূর্র্ণ হলে তাদের বিয়ে দেওয়া হবে। মালখানগর ইউপি সাবেক সদস্য ইছালেক জানান, সেখানে অনেকে ছিলেন তিনিও ছিলেন তবে তিনি কারো নাম বলতে ও বিয়ের ব্যাপারে কিছু বলতে চাননি। বাসাইল ইউপি সদস্য মুরাদ জানান, বিষয়টি আমি জানিনা, আমি ওখানে ছিলাম না। কেউ কোন প্রমাণ দিতে পারলে যেকোন শাস্তি মাথা পেতে নিবো। সহকারী কাজী শাখাওয়াৎ হোসেন জানান, আমি ঢাকায় আছি। আরমহল গ্রাম থেকে আমাকে একজন ফোন দিয়েছিলো। বিস্তারিত জানার পর বুঝলাম বাল্যবিবাহ, আমি তাদের না করে দিয়েছি যে কাবিন করা যাবে না। মসজিদের ইমামের সাথে যোগাযোগ করা যায়নি, তার দুটি মোবাইল নং বন্ধ পাওয়া যায়। উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা কান্তা পাল জানান, বিষয়টি শুনে মালখানগর ইউনিয়ন সচিবকে তদন্ত করতে বলেছি। বিস্তারিত জেনে প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নিবো। সিরাজদিখান থানা অফিসার ইনচার্জ মো. বোরহান উদ্দিন জানান, গতকাল শনিবার দুপুরে হুমায়ুন তার ছেলে বাঁধন ফেরত এসেছে বলে জানান এবং হারানো জিডি বাতিল করেন। বিকালে আবার মেয়েপক্ষের লোকজন আসেন জেরিন তার আত্মীয়ের বাড়ি ছিলো ফিরে এসেছে। এর আগে আমার কাছে তথ্য এসেছে ঘটনা অন্যরকম। তাই মেয়েকে নিয়ে আসতে বলেছি। তার কাছ থেকে বিস্তারিত জানবো। কিন্তু আর কেউ আসেনি।