নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার ইছাপুরা ইউনিয়নের ইছাপুরা গ্রামে ডেইরী পোলট্রিতে ভেড়া, কবুতর খামারের বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। দুর্গন্ধে ওই বাড়িগুলোর বাসিন্দাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এলাকাবাসী বলেন, ২০২০ সালে সিরাজদিখান ইছাপুরা এলাকায় শফিক বিন বারি মুন্না নামের এক ব্যক্তি প্রথম একটি ডেইরী খামার স্থাপন করে পরে পোলট্রি, সেখানে ভেড়া, কবুতর ফার্ম শুরু করেন। আর এখন ইছাপুরা ইউনিয়নে শফিক বিন বারি মুন্নার খামারে রয়েছে গরু, ছাগল পোলট্রি মুরগি, ভেড়া ও কবুতর। সূত্র আরও জানায়, খামারটির মুরগির পোলট্রি বিষ্ঠা ও ভেড়া, কবুতরের বর্জ্য অনেক সময় ফার্মের ভেতরেই রয়ে যায় এসব বিষ্ঠা। দুর্গন্ধে আশপাশের মানুষের দুর্ভোগের সীমা থাকে না। ফার্মের আশপাশের বাড়ির রাস্তয় চলতে হয় দুর্গন্ধের মধ্য দিয়ে। মুরগির বিষ্ঠা স্তুপ করে রাখার সময় গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে আশপাশে। ফলে ওই সব সড়কের দুর্গন্ধের মধ্য দিয়ে চলতে হয় সাধারণ মানুষকে। সরেজমিনে গতকাল মঙ্গলবার ইছাপুরা এলাকায় দেখা যায়, ইছাপুরা গ্রামের শফিক বিন বারি মুন্নার খামার। খামারের নিরাপত্তা কর্মী বলেন, ওই খামারে অনেক মুরগি, গরু, ভেড়া ও কবুতর আছে। খামারটির ভেতরে ঢুকে দেখা যায়, পেছনে বিষ্ঠা ফেলার একটি উন্মুক্ত ভাগাড়। এর দেয়াল ঘেঁষেই জনবসতি। গ্রামের বাসিন্দা সামসুদ্দিন আহম্মেদ জার্মানী (৭৫), হুমায়ুন কবির লিটু (৫০) বলেন, বিষ্ঠার দুর্গন্ধে থাকা যায় না। রোদ উঠলে বাতাসে গন্ধ আরও বেশি ছড়িয়ে পড়ে। একই গ্রামের মৃত আব্দুল বাড়ির বড় ছেলে মোঃ আবু সাঈদ বলেন, গন্ধে বমি আসে। তৃপ্তি নিয়ে খাওয়া দাওয়া করা যায় না। ভাড়াটিয়া মোঃ সোহেল রানা, মোঃ জাহেদুল ইসলাম বলেন, গন্ধে ঘুমাতেও কষ্ট হয়। সিরাজদিখান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডাক্তার তাইফুল ইসলাম বলেন, পোলট্রি বর্জের কণা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে মানুষের শরীরে ঢুকে ফুসফুসের রোগের কারণ হতে পারে। এর থেকে শ্বাসকষ্ট এবং হার্টের ক্ষতি হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। এসব খামার সংলগ্ন এলাকার মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে থাকে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন হাওলাদার বলেন, দুর্গন্ধে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে ইছাপুরা এলাকার মানুষ। আর বাড়ি বসে লাভবান হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এসব ব্যবসায়ীর হাত অনেক লম্বা। তাই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। অভিযুক্ত শফিক বিন বারি মুন্না তাদের খামার থেকে দুর্গন্ধ ছড়ানোর বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, গন্ধ যাতে খামারের বাইরে না যায়, সে ব্যবস্থা তাদের নেওয়া আছে। তবে বিষ্ঠা নিয়ে যাওয়ার সময় গন্ধ কিছুটা ছড়াতে পারে বলে তিনি জানান। মুন্সীগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোঃ নয়ন মিয়া বলেন, কোনো খামার পরিবেশ দূষণ করে থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সিরাজদিখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ ফয়েজুল ইসলাম বলেন, পরিবেশ দূষণ কমাতে ছোট খামারিদের বাধ্যতামূলকভাবে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপন করানো হচ্ছে। বড় খামারগুলোকে পরিবেশ দূষণ রোধের ব্যাপারে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে।