নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার ইছাপুরা ইউনিয়নের উত্তর কুসুমপুর গ্রামে ২নং ওয়ার্ডের ৯টি পরিবারের প্রায় ৭০ জন মানুষ অসহায় জীবনযাপন করছে। তাদের দুঃখের যেন শেষ নেই। বর্ষা মৌসুমে বাড়িগুলোর চারদিকে তাকালে মনে হয় এ যেন ছোট একটি দ্বীপ। বর্ষার পানি যখন কমতে থাকে তখন নৌকাও চলেনা। কাদার কারণে বাড়ি থেকে বের হতে পারে না পরিবারগুলো। তখন তাদের জীবন আরো দুর্বিষহ হয়ে পড়ে। আবার শুষ্ক মৌসুমে একটু বৃষ্টিতেই রাস্তাটি কাদামাটিতে ভরে যায়। আর এই কারণে স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা যাতায়াত করতে পারে না। জানা যায়, স্বাধীনতার পর থেকে এ পরিবারগুলো এখানে বসবাস করে আসছে। তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরকে বারবার বলেও কোন প্রতিকার পাচ্ছে না। তারা বলছে জায়গার ব্যবস্থা করে দিলে রাস্তা করে দিবে। হানিফ বেপারীর জমি থেকে বেপারী বাড়ি পর্যন্ত রাস্তার জন্য জমি দিতে সকলে রাজি থাকলেও মৃত দুখাই বেপারীর ছেলে আবুল হোসেন বেপারী জমি না দেওয়ায় রাস্তা হচ্ছে না বলে জানান ভুক্তভোগীরা। এমনকি এ দুর্ভোগের কারণে এখান থেকে অনেকে জমি বিক্রি করে অন্যথায় বাড়ি করেছে। কোনমতে যাতে পায়ে হেঁটে রাস্তায় উঠতে পারে এমন একটি রাস্তা করে দেয়ার দাবি জানান তারা। ভুক্তভোগী ফরহাদ বেপারী (৩৫) বলেন, বর্ষা মৌসুমে পানিবন্দি, বর্ষা চলে যাওয়ার পরেও কাদায় ভর্তি থাকে এবং শুষ্ক মৌসুমেও বড় বড় গর্ত হয়ে থাকে আর একটু বৃষ্টিতে এসব গর্ত পানি ভরে আবার সেই কাদাতে পরিণত হয়। ফরহাদ বেপারীর মা মরিয়ম বেগম (৭০) বলেন, আমার বিয়ের আগে আমার শ্বশুর মারা গেছে। আমার শ্বশুর এখানে বসবাস করতো। স্বাধীনতার পরেই আমাদের এই বাড়ি হয়েছে। এখনো বসবাস করছি। কিন্তু উন্নয়নের দেখা এখনো পাইনি। আরেক স্থানীয় তৈয়ব আলী বেপারী (৪০) বলেন, আমাদের বর্ষা মৌসুমে অনেক সমস্যা হয়। নৌকা ছাড়া উপায় নেই। নৌকা না থাকলে ভিজে আসতে হয়। আবার পানি কমতে শুরু করলে তখন আর নৌকা চলে না। তখন বাড়ি থেকে নামলেই কাদামাটির মধ্যে পিচ্ছিল খেয়ে পড়তে হয়। মসজিদে যেতে পারি না এমনকি স্কুলে ছাত্র ছাত্রীরা সময়মত পড়তে যাইতে পারে না। সরকারি বিক্রমপুর কেবি ডিগ্রী কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মোঃ হৃদয় বলেন, সময়মতো কলেজে যেতে পারি না। কলেজ থেকে ফেরার পথে নৌকা না থাকলে ভিজে আসতে হয়। তাই অতি দ্রুত পায়ে হাঁটার একটা কাঁচা রাস্তা করে দেয়ার দাবি জানাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, এ পানিবন্দি অবস্থার কারণে একটি পরিবার এখান থেকে জমি বিক্রি করে চলে গেছে। ইছাপুরা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন হাওলাদার বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বর্ষা মৌসুম শেষ হওয়ার সাথে সাথে তাদের সমস্যাটা আমি আগে সমাধানের চেষ্টা করবো। উপজেলা প্রকৌশলী শোয়াইব বিন আজাদ বলেন, খুব শীঘ্রই আমি সরেজমিনে গিয়ে সমস্যাটা দেখব এবং সমাধানের ব্যবস্থা নিব।
সিরাজদিখানে নয় পরিবার পানিবন্দি, অসহায় জীবনযাপন
আগের পোস্ট