নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে ভাতিজা বৌকে বিয়ে করার অপরাধের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক সম্পত্তি লিখে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলার পূর্ব রাজদিয়া গ্রামের মৃত ইউসুফ আলীর ছেলে বাদশা মিয়া (৬০) ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত বাদশা মিয়ার ছোট ভাই মোহাম্মদ আলী এ অভিযোগ করেন। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী মোহাম্মদ আলী প্রথমে সিরাজদিখান থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে সিরাজদিখান থানার এস.আই আশরাফুল আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এতে তিনি কোন প্রতিকার না পেয়ে গত ১১ আগস্ট বড় ভাই বাদশা মিয়াসহ পূর্ব রাজদিয়া গ্রামের মৃত ছামেদ বেপারীর ছেলে শামীম বেপারী, দীল মোহাম্মদের ছেলে সেকান্দর, মৃত কাশেম হাওলাদারের ছেলে ও ইছাপুরা ৬নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য হুমায়ুন হাওলাদার এবং মৃত নূর মোহাম্মদের ছেলে আবু তাহেরকে বিবাদী করে ইছাপুরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন হাওলাদার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সম্প্রতি চাচা শ্বশুর কর্তৃক ভাতিজা বৌকে বিয়ে করার বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে চায়ের দোকান থেকে শুরু করে বিভিন মহলে মুখরোচক মন্তব্য করতেও শোনা যাচ্ছে। ভাতিজার সাথে সংসার করা স্বত্ত্বেও কি করে সে তার ভাতিজা বৌকে বিয়ে করতে পারে এমন প্রশ্ন স্থানীয়দের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। এদিকে অভিযোগ করার পর থেকে ভুক্তভোগী মোহাম্মদ আলীসহ তার মেয়ে এবং মেয়ে জামাইকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ তোলেন ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজন। চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগে বলা হয়, বাদশা মিয়া, শামীম বেপারী, সেকান্দর, হুমায়ুন হাওলাদার ও আবু তাহের মোহাম্মদ আলীকে হুমকি ধমকি দিয়ে ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে সম্পত্তি লিখে নিয়ে যায় এবং খালি চেকের মধ্যে স্বাক্ষর নেয়। ভয়ভীতি দেখিয়ে গলায় দড়ি দিয়ে নদীতে ফেলে দেওয়ার হুমকি দেওয়ার কথাও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। থানায় অভিযোগ করে কোন সুরাহা না হওয়ায় কোন উপায়ান্তর না পেয়ে গ্রাম্য আদালতের শরণাপন্ন হন মোহাম্মদ আলী। সিরাজদিখান সাব রেজিষ্ট্রি অফিস সূত্রে জানা যায়, ইছাপুরা ইউনিয়নের রাজদিয়া মৌজাস্থিত আর,এস-৯৮৭ নং দাগের ৬ শতাংশ সম্পত্তি (বাগান) গত ২৬ জুলাই সিরাজদিখান সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে দাতা মোহাম্মদ আলী তার বড় ভাই গ্রহীতা বাদশা মিয়াকে ১৫,৫০,০০০/- টাকা পরিশোধ যোগ্য নয় মর্মে উল্লেখ করে হেবা ঘোষণা পত্র দলিল রেজিষ্ট্রি করা হয়। যার দলিল নং-৩৭৯২। ওই দলিলে সাক্ষী হন অভিযুক্ত হুমায়ুন হাওলাদার (ইউপি সদস্য) ও আওয়ামী লীগ নেতা আবু তাহের। ভুক্তভোগী মোহাম্মদ আলী বলেন, এক বছর আগে আমার ভাতিজা বৌ শাহিদাকে ১ লক্ষ টাকা কাবিন করে বিয়ে করি। বিয়ের বিষয়টা জানাজানি হলে গত ২৫ তারিখে হুমায়ুন মেম্বার আমাকে ক্লাবে ডেকে নেয়। সেসময় আমার বড় ভাই বাদশা মিয়া, শামীম বেপারী, সেকান্দর, হুমায়ুন মেম্বার ও আবু তাহের সেখানে ছিল। তখন আমার বড় ভাই বাদশা মিয়া বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে বলে তোর যে বাড়ী আছে অর্ধেক বাড়ী লিখে দিতে হবে। যদি লিখে দেস তাহলে তোর বিয়ের বিষয়টা কেউ জানবে না এবং আমরা চুপ থাকবো, তোর কিছুই হবে না। আমি তাকে সম্পত্তি লিখে দিতে রাজি না হলে আমাকে তারা মারধর করে। মারধর খাওয়ার পর আমি এক পর্যায়ে সম্পত্তি লিখে দেওয়ার কথা স্বীকার করি। পরদিন কাগজপত্র ঠিকঠাক করে সিরাজদিখান সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস নিয়ে গিয়ে আমার কাছ থেকে ৬ শতাংশ সম্পত্তি লিখে নেয় আমার বড় ভাই বাদশা মিয়া। সম্পত্তি লিখে নিয়ে আমাকে ১ টাকাও দেয়নি। আমি ভাতিজা বৌকে বিয়ে করে অন্যায় করেছি ঠিক। আমি অপরাধী হলে আইন বা সমাজ আমার বিচার করবে। কিন্তু তারা ভয় দেখিয়ে জোর করে আমার কাছ থেকে সম্পত্তি লিখে নিয়েছে। আমি আমার সম্পত্তি ফেরত চাই।
ভুক্তভোগী মোহাম্মদ আলীর মেয়ে স্মৃতি আক্তার বলেন, ঘটনাটি শুনে ক্লাবে গিয়ে তাদের কাছে জানতে চাইলাম আপনারা নাকি আমার বাবার জায়গা লিখে নিছেন। তারা হুমকি দিয়ে বলে, এতটুকু নিছি পুরা জায়গা নেইনাই। এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে তোমার বাবারে পুইড়া ফালামু। তোমার স্বামী ও তোমার নামে মাদক মামলা দিমু। বাবার কাছে শুনলাম আমার বাবাকে বিয়ে করানোর পিছনে তাদেরই হাত ছিল। ঋণ দেওয়ার কথা বলে বাড়ীর দলিলপত্র তাদের কাছে নিয়ে আমার বাবাকে প্ল্যান করে বিয়ে করিয়েছে তারা। পরে এ বিয়ে করার ভয় দেখিয়ে চেকের পাতায় সাইন নেয় এবং আমার বাবার জায়গা তাদের লিখে দিতে বাধ্য করে। আমার বাবার জায়গা লিখে নেওয়ার পর সাহিদাকে দিয়ে এক তরফা ডিভোর্সও দেওয়ানো হয়েছে বলে জানতে পারি। এগুলো সব তাদের চক্রান্ত। এদিকে অভিযুক্ত বাদশা মিয়া জোর করে সম্পত্তি লিখে নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে মুঠোফোনে বলেন, আমি তার কাছ থেকে টাকা দিয়ে জায়গা কিনে নিয়েছি। ছোট ভাই মোহাম্মদ আলী ভাতিজা বৌকে বিয়ে করেছে কিনা আমি জানিই না। আর এমন কোন ঘটনাই ঘটেনাই। ইছাপুরা ৬নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য হুমায়ুন হাওলাদার বলেন, একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে সবার ডাকেই যেতে হয়। দলিল করার সময় আমাকে সাক্ষী হতে বলেছে তাই আমি সাক্ষী হয়েছি। এর বেশী আমি জানি না। ইছাপুরা ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু তাহেরের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার নামে মোহাম্মদ আলী চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করছে, ওর ব্যবস্থা করতাছি। কত বড় সাহস ওর ও আমার নামে অভিযোগ করে। ওরে বাইন্ধা পিটামু। এ বলে তিনি সাংবাদিকদের সাথে চড়াও হয়ে কুরুচিপূর্ণ আচরণ করেন এবং বলেন যা বলার ওসি সাহেবের কাছে বলবো। আপনি কে? আপনার মত বহু সাংবাদিক আমার হাতের মুঠোয় নিয়ে ঘুরি। আপনার কাছে আমি কোন বক্তব্য দিবো না। যা পারেন করেন!
এ বিষয়ে ইছাপুরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন হাওলাদার বলেন, আমি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনাটি সত্য। একটা মানুষের ভুলত্রুটি থাকতেই পারে। কি করে তারা সম্পত্তি লিখে নেওয়ার মত জঘন্য কাজ করলো ভেবে পাইনা। মোহাম্মদ আলীর ভুল হলে তারা আমাকে জানাতে পারতো আমি সেটার বিচার করতাম। দু’একদিনের মধ্যে বিবাদীদের নোটিশ করে ডাকাচ্ছি। তারপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো। সিরাজদিখান থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ফরিদ উদ্দিন জানান, এটা আমার জানা নেই। আমি বিষয়টা দেখছি। যদি অভিযোগ থাকে তাহলে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।