নিজস্ব প্রতিবেদক
বছরের পর বছর প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবৈধভাবে মাহেন্দ্রা গাড়ি সড়কে চলাচল বন্ধে আইন-শৃঙ্খলা সভায় ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও কাজের কাজ কিছুই হয় না। এ মাহেন্দ্রা গাড়ি সিরাজদিখান উপজেলার বিভিন্ন কাঁচা-পাকা সড়কে অহরহ চলছে। এ গাড়ি জমি চাষের বিভিন্ন প্রয়োজনে, জমিতে মালামাল ও শস্য আনা-নেওয়ার কাজেও ব্যবহার হয়। কাঁচা-পাকা রাস্তায় চলাচলের জন্য এ সকল গাড়ি বিআরটিএ থেকে কোন প্রকার অনুমতি বা রোড পারমিট দেওয়া হয় না। কিন্তু সিরাজদিখান উপজেলার প্রতিটি সড়কে ইট, বালু ও মাটি নিয়ে চলাচল করতে সবসময় দেখা যায় এসব গাড়ি। এলাকার সচেতন অনেকে জানান, পারমিটবিহীন এ গাড়িগুলো চলাচলে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে রাস্তাগুলোর ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে যাচ্ছে। তাছাড়া মৃত্যুসহ বেশ কিছু দূর্ঘটনা ঘটেছে এ উপজেলায়। এসব গাড়িগুলো বালু নিয়ে যাওয়ার সময় ঢেকে না নেওয়ায় বাতাসে বালু উড়ে রাস্তায় চলাচলরত মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। মাটি নিয়ে বিভিন্ন ইটভাটায় যাওয়ার সময় রাস্তায় মাটি পড়ে পাকা রাস্তা দেখলে মনে হয় কাঁচা রাস্তা। বৃষ্টি বা কোন কারণে পানি পড়লে এসব রাস্তায় মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন গাড়ি দূর্ঘটনা ঘটছে অনেক সময়।
সিরাজদিখান উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে উপজেলা অডিটরিয়ামে সভায় অবৈধ মাহেন্দ্রা বন্ধে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এসময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফয়েজুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মঈনুল হাসান নাহিদ, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তাহমিনা আক্তার তুহিন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) আহমেদ সাব্বির সাজ্জাদ, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আঞ্জুমান আরা, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএম জালাল উদ্দিন, প্রেসক্লাব সভাপতি ইমতিয়াজ বাবুল, ক্যাব সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন। এছাড়াও বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে উপজেলা ক্যাব সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন জানান, ২ বছর ধরে আইন-শৃঙ্খলা সভায় উপস্থিত থাকি। সব মিটিংয়ে মাহেন্দ্রা নিয়ে আলোচনা হয়। বারবার ব্যবস্থা গ্রহণে সময় নেওয়া হলেও এর কোন প্রয়োগ নেই। এ উপজেলার ৩ ফসলী জমির মাটি কাটা হলেও কোন ব্যবস্থা নেই। ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও কৃষি অফিসে পর্যাপ্ত জনবল থাকা সত্ত্বেও কৃষিজমি রক্ষায় তাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ।
সিরাজদিখান প্রেসক্লাব সভাপতি ইমতিয়াজ উদ্দিন বাবুল জানান, এক বছরের কিছু বেশি সময় হবে এ উপজেলায় ৬’শরও বেশি মাহেন্দ্রা ছিলো। তখন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর মোহাম্মদ আজীম ও এসিল্যান্ড ছিলেন রিণাত ফৌজিয়া। তারা বেশ কিছু ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছিলেন। এসব গাড়ি আটক করে সহকারি কমিশনার (ভূমি) অফিস ও থানায় অনেক গাড়ি মাসের পর মাস আটকে রেখেছেন তারা, আবার জরিমানাও করেছেন। অবস্থা বেগতিক দেখে তখন অনেকে গাড়ি বিক্রি বা প্রধান সড়কে চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিলেন। গত এক বছরে তা আবার বেড়ে গেছে। বর্তমানে ৩/৪ শ মাহেন্দ্রা গাড়ি রয়েছে এ উপজেলায়। প্রতিটি মাসিক আইন-শৃঙ্খলা সভায় আলোচনা হয় কিন্তু পরিবর্তন ঘটছে না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফয়েজুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, আমরা মাহেন্দ্রা গাড়ি বন্ধ করছি না। অবৈধভাবে মাহেন্দ্রা রাস্তায় চলাচল ও ফসলী জমির মাটি কাটা বন্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। তারা মাটি কেটে রাস্তাঘাট নষ্ট করে ফেলছে তাই আমরা জরুরী ভিত্তিতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ও যারা মাহেন্দ্র চালায় তাদের সচেতন করাসহ এ সকল কর্মকান্ড পরিচালনা করবো। বারবার সিদ্ধান্ত নিলেও দীর্ঘদিনে কোন ব্যবস্থা হয় নাই, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা মোবাইল কোর্ট করে চেষ্টা করি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান অব্যাহত থাকবে খুব শীঘ্রই শুরু হবে।