জালিয়াতির মাধ্যমে সংখ্যালঘু পরিবারের জমি ও সম্পদ
দখলে নেয়ার অপচেষ্টা ও নির্যাতন বন্ধের দাবি
নিজস্ব প্রতিবেদক
সংখ্যালঘু পরিবারের সম্পদ প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে দখলে নেয়া প্রচেষ্টা ও নির্যাতন বন্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ও জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ। গতকাল রবিবার দুপুরে সিরাজদিখান উপজেলার গৌরিপুরাস্থ গাঙ্গুলী বাড়ীর মন্দির প্রাঙ্গণে এক সাংবাদিক সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ এমন দাবি করেন। এসময় উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ সংহতি প্রকাশ করে এলাকায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জমি জালিয়াতির মাধ্যমে দখলে নেয়ার প্রক্রিয়ার সাথে জড়িতদের সামাজিকভাবে মোকাবেলা করার ঘোষণা দিয়েছেন।
এর আগে ভুক্তভোগী গৌরিপুরা গ্রামের প্রবীন সমাজসেবক বাবু সুদর্শন গাঙ্গুলীর উপস্থিতিতে তার পক্ষে সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুবীর চক্রবর্তী। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, প্রতারণা আর জালিয়াতি সন্ত্রাসী ব্যবহার করে আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তি দখলে নেয়ার জন্য তৎপর এলাকার একটি অশুভ শক্তি। বিভিন্ন লোকমাধ্যমে আমিসহ আশপাশের হিন্দু সম্প্রদায়কে পিটিয়ে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেয়ার জন্য হুমকি দেয়া হচ্ছে। দেয়া হচ্ছে হত্যার হুমকি। প্রতিকারের জন্য সিরাজদিখান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মহিউদ্দন আহমেদকে নালিশ করলে তিনি আমাকেসহ বিবাদিগণকে ডাকলেও তারা উপস্থিত না হয়ে উল্টো আমাকে ও আমাদের পরিবারের সদস্যদের হত্যার হুমকি দিচ্ছে এবং বলছে বিষয়টি চেপে যেতে এবং আমাদের জমির দখল বুঝিয়ে দিতে। তিনি আরো বলেন, আমাদের পৈত্রিক সূত্রে মালিকানা প্রাপ্ত ৮১ শতাংশ জমি এলাকার সোবহান মাঝি, সহিদুল, সিদ্দিক মোল্লা, ইউপি সদস্য রওশন আরা, সাদিয়া পারভীন লাবনীসহ একটি চক্র জালিয়াতি ও প্রতারণা করে হাতিয়ে নেয়ার প্রচেষ্টা করছে। এই সম্পত্তির বর্তমান বাজারমূল্য কোটি টাকা। তিনি আরো বলেন, যে বাড়ীতে আপনাদের নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করছি এখানেই ১৯৭১ সালে ঢাকা থেকে এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন তৎকালীন দৈনিক ইত্তেফাকের প্রধান হিসাবরক্ষক অনিল কুমার সাহাসহ সাংস্কৃতিক কর্মীরা। এক রাতে স্থানীয় রাজাকাররা পাকিস্থানী সৈন্যদের এনে আমাদের বাড়ীতে আশ্রয় নেয়া ইত্তেফাকের প্রধান হিসাবরক্ষক অনিল কুমার সাহাকে নির্মমভাবে নির্যাতন চালিয়ে ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করে। আমার বাবাকে ও আমাকে ধরে নিয়ে যায় মুন্সিগঞ্জের হরগঙ্গা কলেজের পাকিস্থানী সেনা ক্যাম্পে। বর্বর নির্যাতন চালোনো হয় আমার ও বাবার উপরে। তাদের নির্যাতনের শিকার হয়ে ফিরে আসলেও এখনো ভুলতে পারিনা সেই বিভীষিকাময় দিনের কথা। এরপর দেশ স্বাধীনের পরে আমি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। দলের কঠিন সময়ে আমি সভাপতির দায়িত্ব পালন করে অনেক ঝুঁকিতে পড়েছি। অথচ দল ক্ষমতায় আর আমি স্বাধীনতা বিরোধীদের ষড়যন্ত্রে আমার জমি হারাতে বসেছি। আমি শ্রীনগর ও সিরাজদিখান দৈনিক ইত্তেফাকের সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করি। আমার প্রয়াত ভাই সুভাষ গাঙ্গুলী ও ইত্তেফাকের প্রধান হিসাররক্ষক হিসেবে কাজ করে গেছেন। আমি আপনাদেরই সাংবাদিক পরিবারের একজন। সংবাদ সম্মেলনে এসময় সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিষদের চেয়াম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ, ভাইস চেয়ারম্যান মাইনুল ইসলাম নাহিদ, সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান এডভোকেট সোহানা তাহমিনা, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা তাজুল ইসলাম পিন্টু, যুবলীগ নেতা মাসুদ লস্কর ও জাহিদ সিকদার প্রমুখ। এছাড়া কেন্দ্রীয় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতা বলরাম বাহাদুর, জেলা যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতি তাপস কুমার, বিমল চন্দসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।