নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার কোলা ইউনিয়নের গৌরীপুরা গ্রামের সংখ্যালঘু একটি পরিবারের ৮১ শতাংশ সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। ১১ সদস্যের একটি সিন্ডিকেট এ ঘটনায় জড়িত রয়েছে। তারা এ ইউনিয়নে বিভিন্নভাবে সাধারণ মানুষকে হয়রানি এবং ফাঁসিয়ে ফায়দা লুটে এবং জমিজমা কৌশলে নিয়ে নেয়। তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললে বা প্রতিবাদ করলে নারী নির্যাতনসহ নানা মামলার ভয়-ভীতি দেখানো হয়। আবার অনেককে মামলা দিয়ে হয়রানির খবর পাওয়া গেছে। এতে রাজনৈতিক ও স্থানীয় ইউপি সদস্য জড়িত রয়েছে বলে জানা গেছে। আলোচিত গাঙ্গুলী বাড়ির জমি আত্মসাত এখন এ এলাকার মানুষের মুখে মুখে। জানা যায়, থৈরগাঁও গ্রামের মৃত মরন মাঝির ছেলে সোবহান মাঝি (৬০) ও তার মেয়ে জামাই দক্ষিণ নন্দনকোনা গ্রামের সাইদুল ওরফে সহিদুল ইসলাম (৪৫) এর বিরুদ্ধে প্রতারণা করে জমি আত্মসাত করার অভিযোগ উঠেছে। প্রতারকদের বিরুদ্ধে সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগ এনে সিরাজদিখান প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাকালীন উপদেষ্টা সুদর্শন গাঙ্গুলীর পৈত্রিক সম্পত্তি ফেরত পেতে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর, দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশের আইজিপি, জেলা প্রশাসক ও জাতীয় প্রেসক্লাব বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। গৌরীপুরা গ্রামের সুদর্শন গাঙ্গুলী ও একই গ্রামের মৃত মতিলালের ছেলে ভবশীল গংদের সাথে সম্পত্তির রেকর্ড ও ভোগদখল নিয়ে বিরোধ হয়। সোবহান মাঝি এ সুযোগে গাঙ্গুলী বাড়ীতে আসা যাওয়া ও তাদের আস্থাভাজন হয়ে উঠে। সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ চলাকালীন সময়ে সুদর্শন গাঙ্গুলীকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে সোবাহান। প্রতিপক্ষের দ্বারা সম্পত্তি বে-দখল হওয়ার ভয় দেখায় এবং তার মেয়ের জামাইয়ের নামে আম মোক্তার নামা দলিল করে নেয়। সেসময় সুদর্শন গাঙ্গুলী অসুস্থ ছিলেন ও পরিবারে উপযুক্ত কেউ না থাকায় সোবহান মাঝির কথা বিশ^াস করে সুদর্শন গাঙ্গুলী। তার পৈত্রিক সম্পত্তি গৌরীপুরা মৌজার আর,এস-১৪৯ নং দাগ হইতে ২৩ শতাংশ, আর,এস-১৪৬ নং দাগ হইতে ২৫ শতাংশ ও আর,এস-১৫৩ নং দাগ হইতে ৩৩ শতাংশ সর্বমোট ৮১ শতাংশ সম্পত্তি সোবহান মাঝির মেয়ের জামাই সাইদুল ইসলামের নামে শর্ত সাপেক্ষে আম মোক্তার নামা দলিল করে দেয়। এলাকাবাসী অনেকে জানান, গাঙ্গুলীদের সাথে শীলদের সম্পত্তি নিয়ে ঝামেলা ছিল, এ বছর তাদের মধ্যে ওই সম্পত্তির ঝামেলা শেষ হয়েছে। সোবহান মাঝির মেয়ের জামাইয়ের নামে সুদর্শন গাঙ্গুলী ৮১ শতাংশ জায়গা পাওয়ার দিয়েছে। সে সম্পত্তি গাঙ্গুলীদের ফেরত দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আম-মোক্তার দলিল ফেরত দেয়নাই, কোন টাকাও দেয়নাই। এ বিষয়টা এলাকার অনেকেই জানে। তাদের ১১ সদস্যের একটা সিন্ডিকেট আছে। ঐ সিন্ডিকেটের লোকজন আরো অনেকের বাড়ি দখল করে। টাকা না দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে ভোগ দখল করছে। বাড়ি দখল করে মুরগীর খামার, ইমারত নির্মাণ করে জোরপূর্বক দখল করে আছে সিন্ডিকেটের লোকজন। ভুক্তভোগী ১০টি পরিবার রয়েছে, তারা ভয়ে জমি ফেরত নেওয়া ও বিচার চাইতে সাহস পায় না। এবার গাঙ্গুলীদের জমি নিয়ে আলোচনা হওয়ায় অন্যান্য ভুক্তভোগীরা প্রকাশ্যে আসবেন বিচার দাবী করবেন। তবে এই ১১ সদস্যের সিন্ডিকেটের মধ্যে ভাগাভাগিতে সমস্যা হওয়ায় বর্তমানে ২ গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে। সুদর্শন গাঙ্গুলী জানান, ২০১৭ সালে সোবহান মাঝি ৮১ শতাংশ সম্পত্তি পরিকল্পিতভাবে তার মেয়ের জামাই সাইদুল ইসলামের নামে আম মোক্তার নামা দলিল করান। পরে সাইদুল ইসলাম, সোনিয়া বেগম ও সাদিয়া পারভীন শ্রাবণি নামে দুইজনের কাছে সুকৌশলে সম্পত্তি সাব কবলা দলিল মূলে বিক্রি করে দেয়। সম্পত্তি নেওয়ার পর আমাদের পরিবারের প্রতি হত্যা ও দেশ ত্যাগের হুমকি দিচ্ছে তারা। সুদর্শন গাঙ্গুলীর ছেলে মিঠুন গাঙ্গুলী জানান, আমার বাবা একজন ক্যান্সার রোগী। আমাদের বিশ্বস্ত সোবহান মাঝি আমার বাবাকে এসে বলে যে, আপনার সম্পত্তি শীলদের লোকেরা দখলের পায়তারা করতেছে। আমার বাবা তার প্ররোচণায় পড়ে তার মেয়ের জামাই সাইদুলের নামে শর্ত অনুযায়ী সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ ও বেদখলের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য পাওয়ার নামা দেয়। শীলদের সাথে আমাদের সম্পত্তি নিয়া যে ঝামেলা ছিলো সেটা মীমাংসা করার পর সোবহানকে আমার বাবা পাওয়ার নামা দলিল ফেরত দিতে বলে। সোবহান দেই দিচ্ছি করে ঘুরাতে থাকে। পরে আমরা জানতে পারি, সাইদুল পাওয়ার নামার ক্ষমতায় আমাদের ৮১ শতাংশ সম্পত্তি অন্যের কাছে বিক্রি করেছে। শর্ত অনুযায়ী সম্পত্তির ঝামেলা মিটে গেলে সোবহান মাঝির মেয়ের জামাইয়ের নামে দেয়া আম মোক্তার নামা দলিল ফেরত দেওয়ার কথা ছিল। সাথে তাদের সিন্ডিকেটের আরো কয়েকজনকে জড়িয়ে নেয়। তারা আমাদের সম্পত্তি আত্মসাত করে আমাদেরকে এ দেশ থেকে বিতাড়িত করার পায়তারা করছে। আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তি আত্মসাতকারীদের কাছ থেকে ফিরে পেতে সরকার ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। অভিযুক্ত সাইদুল বলেন, আমি টাকা দিয়ে জমি কিনে পাওয়ার নামা নিয়েছি। আমি দলিলের বাহিরে কোন কথাই বলবো না। সোবহান মাঝি জানান, একসময় আমি সুদর্শন গাঙ্গুলীর দেবতা ছিলাম। তার মামলা মোকদ্দমা, বন্ধকী স্বর্ণ উঠানো ও ঋণের টাকা পরিশোধ করি। সহিদুল ২২ লাখ টাকা দিয়াছে সুদর্শন গাঙ্গুলীকে। তাকে পাওয়ার দিয়াছে সাফ-কবলা দেয়নাই। তখন বলছে শীলদের সাথে মামলা চলছে। এখন বিক্রি করলে আমার সমস্যা হবে। তাই গোপন রাখতে বলছে। এখন উল্টো কথা বলছে তারা। এখানে আমার তো কিছু না। এখন কিছু বাটপারদের কু-পরামর্শে আমাকে জড়িয়ে নানা কথা বলছে।
সিরাজদিখানে সম্পত্তি আত্মসাতে ১১ সদস্যের সিন্ডিকেট
আগের পোস্ট