নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে একটি অবৈধ কারখানায় ব্যাটারি পুড়িয়ে সীসা তৈরি করা হচ্ছে। উপজেলার কেয়াইন ইউনিয়নের হাজীগাঁও রাস্তার পাশে সুখের ঠিকানা এলাকায় কারখানাটির অবস্থান। এই কারখানার কারণে ব্যাটারির অ্যাসিডের প্রকট গন্ধে স্থানীয় লোকজন অতিষ্ঠ। কারখানা থেকে নির্গত ক্ষতিকর ও বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। চিকিৎসকেরা বলছেন, এটা জনস্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আঞ্জুমান আরা বলেন, ব্যাটারির বান অন্যকিছুর বর্জ্য পুড়িয়ে সীসা তৈরি করলে তা আশপাশে থাকা মানুষের শরীরে পয়জনিং (রক্তকণিকা ও মস্তিষ্কের কোষ ক্ষতি করা) সৃষ্টি করে। এর ফলে মানসিক বিকৃতি, রক্তশূন্যতা ও মস্তিষ্কের ক্ষতিসাধন হতে পারে। কারখানাটির পাশেই সুখের ঠিকানার আবাসন ও বসতবাড়ি। অদূরে হাজীগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ। কারখানা সংলগ্ন রাস্তা পার হয়ে এই এলাকা দিয়ে উপজেলার হাজীগাঁও কাজীশাল, লক্ষীবিলাশসহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি ইউনিয়ন ও শ্রীনগর উপজেলার লোকজন চলাচল করে। গত শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, কারখানার ভেতরে শ্রমিকেরা কাজ করছেন। কেউ পুরনো ব্যাটারির ওপরের অংশ খুলে প্লেট (ব্যাটারির ভেতর থাকা পাত) বের করছেন। কেউ ব্যাটারি থেকে অ্যাসিড বের করে সংরক্ষণ করছেন। শ্রমিক শাহীন জানান, চুল্লির মধ্যে কাঠ ও কয়লায় অ্যাসিড মিশ্রিত ব্যাটারির বর্জ্য বা প্লেট সাজানো হয়। এরপর আগুন ধরিয়ে দিলে তা গলতে থাকে। একই সঙ্গে বৈদ্যুতিক পাখা থেকে বাতাস দেওয়া হয়। এভাবে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় সীসা তৈরি হয়। পুরনো ব্যাটারি থেকে প্লেট খুলে তিনি টনপ্রতি ১৫০০ টাকা মজুরি পান। এই কাজ করতে তার কোনো সমস্যা হয় না। মৃত তাছের আলী বেপারীর ছেলে মোঃ আক্কাস আলী জানান, তিনি এই কারখানায় শ্রমিকের কাজ করেন। বললেন, “এই জাগাসহ আরও ম্যালা জাগায় কাজ করছি। আল্লাহর রহমতে অহনো গায়ের (শরীর) কোনো সমস্যা অয় নাই।” শ্রমিক করিম জানান, কারখানায় দিনে বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগৃহীত ব্যাটারি থেকে প্লেট খোলা ও অ্যাসিড সংরক্ষণের কাজ করা হয়। আর রাত ১০টার পর প্লেটসহ আনুষঙ্গিক জিনিস পুড়িয়ে সীসা তৈরি করা হয়। কারখানার মালিক মোঃ নয়ন জানান, তিন মাস যাবৎ এই কারখানা খোলা হয়েছে। এখানে ১১ জন শ্রমিক কাজ করেন। দিনে ছয়জন আর রাতে পাঁচজন। তারা সিলভার গলানোর কাজ করেন, সীসা তৈরী করেন না। বিভিন্ন জিনিস কাটেন আর রাতে গলান। নয়ন বলেন, “এতে আমি তো পরিবেশের কোনো ক্ষতি দেখি না। আমাদের পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। এই কারখানায় কাজ করে অনেকের সংসার চলে। যেকোনো কোম্পানি খুললে কিছু গন্ধ থাকেই। আমরা যে সীসা বানাই, তা সব জাগায় কাজে লাগে। সীসা ছাড়া মোবাইল অয় না। টিভি, ফ্রিজ, টিন বানাইতেও সীসা লাগে।” স্থানীয় হাজীগাঁও গ্রামের শরীফ আলীর ছেলে মোঃ আলী, সোনা মিয়া, শাহজাহান অভিযোগ করেন, কারখানার মালিক পার্শ্ববর্তী ঢাকার জুরাইনে থাকেন। তাকে কারখানা অন্যত্র সরিয়ে নিতে বলার পরও কোনো লাভ হচ্ছে না। রাতে ধোঁয়ার গন্ধে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। যোগাযোগ করলে সিরাজদিখান উপজেলা নির্বহাী অফিসার সৈয়দ ফয়েজুল ইসলাম বলেন, সীসা তৈরির অবৈধ কারখানা হলে কারখানাটিতে অভিযান চালিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে।