নিজস্ব প্রতিবেদক
সিরাজদিখানের মির্জাকান্দায় একটি হিন্দু পরিবারের ওপর সন্ত্রাসী হামলার অভিযোগ উঠেছে। ওই হামলায় প্রবাসী ও শ্রমিকসহ তার পরিবারের তিনজন আহত হয়েছেন। গত রবিবার দুপুর ১টার দিকে উপজেলার কেয়াইন ইউনিয়নের মির্জাকান্দা গ্রামে এই হামলার ঘটনা ঘটে। আহতদের সিরাজদিখান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে। পরে ওইদিন রাতে প্রবাসী সুকুমার বাড়ৈর বড় ভাই বাবুল বাড়ৈ বাদী হয়ে সিরাজদিখান থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
এজাহার সূত্রে ও সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলার কেয়াইন ইউনিয়নের স্বপ্নলোক হাউজিং লিঃ এর নিকট কমদামে জমি বিক্রি করতে না চাইলে পূর্বশত্রুতার জের ধরে হিন্দু পরিবারের বসতবাড়িতে এসে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করতেন। ওইদিন সুকুমার বাড়ৈ তাদের বাড়ির জায়গায় টিন, কাঠের গেইট তৈরী করতে গেলে স্বপ্নলোক হাউজিংয়ের এমডি শেখ হক (৪৫) গেইট তৈরীতে বাঁধা দিয়ে আবারও অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে জোর করে গেইট তৈরী বন্ধ করার অপচেষ্টা করে। এ নিয়ে বিরোধের জের ধরে গত রবিবার দুপুরে পূর্বপরিকল্পিতভাবে হিন্দু পরিবারের ও তাদের কাঠ শ্রমিকের উপর সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এসময় হামলাকারীরা সুকুমার বাড়ৈ, কাঠ শ্রমিক শ্যামল বিশ^াস, ববিতা বাড়ৈকে পিটিয়ে আহত করে। অভিযোগে হাউজিং ব্যবসায়ী শেখ হককে (৪৫) প্রধান আসামি করা হয়েছে। এছাড়া হামলার অভিযোগে শেখ হাবিব বাবুর ছেলে শেখ তারেক, মৃত শেখ হাসানের ছেলে শেখ ইসলাম, আব্দুর রবসহ অজ্ঞাত ৮-৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিরা লাঠিসোটা, শাবল নিয়ে হামলা করে বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
গুরুতর আহত সুকুমার বাড়ৈ জানান, স্বপ্নলোক হাউজিং লিঃ এর নিকট কমদামে জমি বিক্রি করতে না চাওয়ার পর থেকেই কেয়াইন ইউনিয়নের মহিলা ইউপি সদস্য জিয়াসমিন বেগমের স্বামী শেখ হক শত্রুতা শুরু করেছে। আমরা চার ভাই প্রবাসে থাকি। সে আমাদের সন্তানদের স্কুলে যাওয়ার পথে খুন গুম করে ফেলার প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছে। আমরা হিন্দু হওয়ায় আমাদের জায়গা জমি জোর করে কমদামে বিক্রি করতে বলেন। প্রশস্ত রাস্তা থাকা সত্ত্বেও স্বপ্নলোক হাউজিং লিঃ যাওয়ার জন্য আমাদের জায়গায় আমাদের কাঠের গেইট তেরী করতে বাঁধা দিয়ে আমাদের উপর সন্ত্রাসী হামলা করেছে। আমরা আমাদের জমি বেশি দামে অন্যত্র বিক্রির পর থেকেই হাউজিং ব্যবসায়ী শেখ হক ও তার লোকজন আমাদের উপর হামলার জন্য পায়তারা করে আসছে। গেইট তেরীর বাঁধায় প্রতিবাদ করায় তাদের সাথে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এই বিরোধের জের ধরে গত রবিবার দুপুরে পরিকল্পিতভাবে আমাদের উপর হামলা চালানো হয়েছে। আমি এ ঘটনার ন্যায়বিচার দাবি করছি। বাদী বাবুলের পরিবারের ও দীপা বাড়ৈ, বিনা রানী বাড়ৈ, শিউলী বিশ^াসের অভিযোগ, তাদেরকে সপরিবারে দেশত্যাগে বাধ্য করতে শেখ হক গংরা দীর্ঘদিন চক্রান্ত করে আসছে এবং দ্রুত অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে উপযুক্ত শাস্তির দাবী জানিয়েছে ভুক্তভোগীর পরিবার।
এদিকে হামলার ঘটনার অভিযুক্ত শেখ হক বলেন, আমার স্ত্রী জিয়াসমিন বেগম ৪, ৫, ৬নং ওয়ার্ড কেয়াইন ইউনিয়নের বর্তমান সংরক্ষিত সদস্য। সে আমাকে গেইট তৈরী করতে বাঁধা দিতে বলেছে, তাই আমি ওদের বাঁধা দিয়েছি।
কেয়াইন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আশ্রাফ আলী বলেন, রাস্তার জায়গায় গেইট নির্মাণ করলে সেটা উপজেলা পরিষদ, ভূমি অফিস এবং আমরা দেখবো। এতে মহিলা ইউপি সদস্যের স্বামীর বাঁধা দেওয়ার ও মারধর করা যুক্তিযুক্ত না।
সিরাজদিখান থানার ওসি এ কে এম মিজানুল হক বলেন, হামলার ঘটনায় অভিযোগ গ্রহণ করা হয়েছে। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে।