নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে রাস্তা সংস্কারে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এক নম্বর ইটের পরিবর্তে নিম্ন মানের তিন নম্বর ইট ও ইটের সুড়কি ব্যবহারের অভিযোগ তোলেন স্থানীয়রা। উপজেলার সিরাজদিখান বাজার সরদারপাড়া কুলু বাড়ীর তিন রাস্তার মোড় থেকে কুসুমপুর খেলার মাঠ সংলগ্ন তিন রাস্তার মোড় পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩ কি.মি এ রাস্তাটি সংস্কারের দায়িত্ব পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স মোনালিসা ট্রেডার্স। রাস্তাটি সংস্কারের কাজ শুরুর পর থেকে নিম্ন মানের সামগ্রী তথা তিন নম্বর ইট ও ইটের সুড়কি ব্যবহার করায় অভিযোগের ঝড় তোলেন স্থানীয় এলাকাবাসী। পুরোনো পিচ ঢালাই ভেঙে নিম্ন মানের ইটের সুড়কির সাথে মিশিয়ে রাস্তার প্রথম স্তরের কার্পেটিং করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সিরাজদিখান বাজার থেকে কুসুমপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩ কি.মি এ রাস্তাটি সংস্কারের জন্য বরাদ্দ দেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। কাজটি সংস্কার সম্পূর্ণ করার দায়িত্ব পায় মেসার্স মোনালিসা নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। করোনার কারণে দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ রাখা হলেও ২০-২১ দিন ধরে পুনরায় সংস্কার কাজ শুরু করা হয়েছে। ইতোমধ্যে চন্দনধূল সরকার বাড়ী জামে মসজিদ থেকে চন্দনধূল ব্রীজ পর্যন্ত প্রথম স্তরের কার্পেটিং সম্পন্ন হয়েছে। যার মধ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে পুরোনো পিচ ঢালাই ও নিম্ন মানের তিন নম্বর পঁচা ইটের সংমিশ্রিত সুড়কি। রাস্তাটি সংস্কারে নিম্ন মানের সামগ্রী ব্যবহারে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। উপজেলা প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সিরাজদিখান বাজার থেকে কুসুমপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত রাস্তাটি সংস্কার কাজ সম্পন্ন করতে ৪ (চার) কোটি ৯৯ লাখ ৭৫ হাজার ২ শত ২৩ টাকা বরাদ্দে মেসার্স মোনালিসা ট্রেডার্স নামে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের উপর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক মোঃ বিল্লাল হোসেন রাস্তাটি সংস্কারের লক্ষ্যে ১০-১৫ জন জনবল নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয়রা জানান, আমাদের এ রাস্তাটি বহুদিন ধরে ভাঙা ছিলো। কয়েকমাস আগে হালকা কাজ ধরেছিলো। কিন্তু করোনার কারণে করতে পারে নাই। ২০-২১ দিন ধরে সংস্কার কাজ শুরু করেছে তারা। আগের পিচ ঢালাই ও পঁচা ইটের সুড়কি মিলিয়ে রাস্তার নিচে বিছানো হচ্ছে। রাস্তার দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে খাড়া করে যে ইট লাগানো হয়েছে সেগুলোও একেবারেই মানহীন। ওজন ওয়ালা কয়েকটা গাড়ী ওই ইটের উপর দিয়ে গেছে এতেই ইট ভেঙে ফাঁকি হয়ে গুঁড়ো মশলার মত হয়ে গেছে। আমরা রাস্তায় কোন পঁচা ইট ব্যবহার করতে দিবো না। এতে যা হয় হবে। স্থানীয় যুবক মোঃ রনি শেখ বলেন, রাস্তাটি ভালোভাবে সংস্কার করা হলে পাঁচ বছরেও কিছু হবে না। কারণ এখান দিয়ে গাড়ী চলাচল খুবই কম করে। বিকেলে রাস্তায় বেরিয়ে দেখলাম পঁচা ইট রাস্তার পাশে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। অনেকটা অংশে এগুলো ব্যবহার করাও হয়েছে। দেখে মনে হলো এসব পঁচা ইট দিয়েই কাজ করা হবে। যদি এমন নিম্ন মানের সামগ্রী দিয়ে রাস্তা নির্মাণ বা সংস্কার করা হয় তাহলে বছর না যেতেই আবার ভাঙন ধরবে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিক মোঃ বিল্লাল হোসেন মুঠোফোনে রাস্তা সংস্কারে তিন নাম্বার ইট ব্যবহারের বিষয়টি অস্বীকার করে সাংবাদিককে চায়ের দাওয়াত দেন এবং তার প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিগত ইঞ্জিনিয়ার দারা সংবাদটি যাতে প্রকাশ না হয় সেজন্য ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন। উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ সাব্বির জানান, রাস্তাটি সংস্কারের জন্য ৪ (চার) কোটি ৯৯ লাখ ৭৫ হাজার ২ শত ২৩ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। সংস্কার কাজে নিম্ন মানের ইটের সুড়কি ও তিন নম্বর ইট ব্যবহারের কোন নিয়ম নেই। অবশ্যই সেখানে এক নম্বর ইট ব্যবহার করতে হবে। উপজেলা প্রকৌশলী শোয়াইব বিন আজাদ বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। এখনি লোক পাঠাচ্ছি। যদি এ ধরনের কাজ হয়ে থাকে তাহলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।