মোঃ মোস্তফা : মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান ও ঢাকার কেরানীগঞ্জের সীমান্তবর্তী সৈয়দপুর এলাকায় ধলেশ্বরী নদীতে বিশাল এলাকাজুড়ে অবৈধভাবে মাটি উত্তোলন করছে প্রভাবশালী একটি চক্র।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার সৈয়দপুর ও ঢাকা কেরানীগঞ্জের সোনাকান্দা এলাকার স্থানীয় শতাধিক গ্রামবাসী একত্রিত হয়ে একাধিক ড্রেজার ভাঙচুর করে, যা ধলেশ্বরী নদীতে দীর্ঘদিন যাবৎ অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কোনো ধরনের প্রশাসনিক বাধা না থাকায় মাটি কাটা দিনে দিনে ভয়াবহ আকার ধারণ করে। তাই এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে ড্রেজারগুলোর পাইপ ভেঙে ফেলে এবং উত্তেজিত জনতা অবৈধভাবে বালু/মাটি কাটার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেয়।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী দুই ব্যক্তি আয়ুব আলী ও আশকর আলী বিআইডব্লিউটিএ থেকে প্রাপ্ত পুরাতন একটি অনুমতির কাগজ দেখিয়ে স্থানীয় কিছু বিএনপি নেতার সহযোগিতায় সিরাজদিখান ও কেরানীগঞ্জের বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে অবৈধভাবে ড্রেজিং কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। স্থানীয়রা শুরু থেকেই এই অনুমতির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছিলেন।
আরও জানা যায়, আওয়ামী সরকারের আমলে একই গ্রুপ এই মাটি কেটে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তৎকালীন সময় তাদের অত্যাচারে এলাকাবাসী মুখ খুলতে সাহস পায়নি। কারণ যারাই প্রতিবাদ করতো, প্রশাসন দিয়ে তাদের হয়রানি করতো।
এ বিষয়ে প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেন, তাদের প্রদর্শিত অনাপত্তিপত্র সঠিক নয়। বিষয়টি যাচাই-বাছাইয়ে আমরা নিশ্চিত হয়েছি অনুমতির সীমা লঙ্ঘন করা হয়েছে। অনুমতির মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পরও তারা ড্রেজার জোরপূর্বক চালিয়ে গেছে, যা সম্পূর্ণ বেআইনি।
পরিবেশবিদরা জানান, ড্রেজিংয়ের ফলে নদীর স্বাভাবিক গতি ও গঠন নষ্ট হচ্ছে, নদী ভাঙন বাড়ছে এবং নদীর পাড়ের কৃষিজমি স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়াও ধলেশ্বরী নদীর নিকটতম ২টি ব্রীজ রয়েছে। এতে ব্রীজের অনেক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয় সাবেক মেম্বার আব্দুল মান্নান বলেন, আমরা প্রশাসনকে বহুবার জানিয়েছি, কিন্তু তারা শুধু বলেছে কাগজ যাচাই হচ্ছে। এই সুযোগে তারা মাটি কেটে শেষ করে দিচ্ছে নদীটাকে ও নিকটতম জমিগুলোতে। আমরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নিকট আকুল আবেদন জানাচ্ছি, দ্রুত এই মাটিকাটা বন্ধ করে আমাদের রক্ষা করুন এবং পরিবেশ সুন্দর করে গড়ে তুলুন।
অভিযুক্তদের মধ্যে আয়ুব আলীকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। আর আশকর আলীর পক্ষ থেকেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
গ্রামবাসী হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, প্রশাসন যদি দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়, তবে তারা নিজেরাই এলাকায় বড় পরিসরে মানববন্ধন করে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। অবৈধ মাটি কাটার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা চেয়ে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছেন দুই পাড়ের এলাকাবাসী।