নিজস্ব প্রতিবেদক
করোনা পরিস্থিতিতে কোরবানির পশুর হাট কতটুকু জমবে তা নিয়ে শঙ্কা থাকলেও গত চার বছর ধরে পালন করছেন শরিফ ঢালী ব্লাক ডায়মন্ডকে। শখের বশে গরুটির নাম রাখা হয়েছে ব্লাক ডায়মন্ড। তবে গত বছরও দেশে আলোচনায় রয়েছিলো ব্লাক ডায়মন্ডের। দাম উঠেছিলো ১০ লাখ গাবতলীর পশুর হাটে। বর্তমানে ব্লাক ডায়মন্ডের দৈর্ঘ্য ৯ ফুটের বেশি। উচ্চতা ৫ ফুট ১০ ইঞ্চির। এ হাতি আকৃতি গরুটির ওজন ৩৬ মণ। এটি বেড়ে উঠেছে মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার সোনারং এলাকায়। কোরবানির এ পশুটি দেশের সবচেয়ে বড় আকৃতির ও ওজনের পশু বলে ধারণা খামারির। এ গরুটি এবার সর্বোচ্চ মূল্যে বিক্রি হবে বলে ধারণা তার। এটির মালিক স্থানীয় মোঃ শরিফ ঢালী। আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে বিক্রির জন্য তিনি ষাঁড়টির দাম হেঁকেছেন ২০ লাখ টাকা। গরুটি দেখতে প্রতিদিন ভিড় জমাচ্ছে মানুষ শরিফ ঢালীর বাড়িতে। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শরিফ ঢালী সাড়ে চার বছর আগে সরকারীভাবে ব্রাহমা জাতের বীজের মাধ্যমে তার পালিত গাভী থেকে জন্ম নেয় ব্লাক ডায়মন্ড। জন্মের পর ষাঁড়টির ওজন ছিল প্রায় দুই মণ। এরপর দেশীয় পদ্ধতিতে গরুটি মোটাতাজা করার প্রক্রিয়া শুরু করেন। প্রয়োজনমতো খাবার ও পরিচর্যায় গরুর আকৃতি বাড়তে থাকে। ষাঁড়টি ছিপছিপে কালো হওয়ায় আদর করে নাম দেন ব্লাক ডায়মন্ড। দিনে দিনে ওজন বেড়ে গরুটি ৩৬ মণে এসে দাঁড়ায়। শরীফ এ বছর গরুটি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। ব্লাক ডায়মন্ডের খাদ্য তালিকায় রয়েছে কাঁচা ঘাস, খড়, গমের ভুষি ও ধানের কুঁড়া, ভুট্টা, ডালের গুঁড়া, তৈল বীজের খৈল, ছোলা, আলু, কলা, কাঁঠাল ও খুদে ভাত। সব মিলিয়ে গরুটি প্রতিদিন গড়ে প্রায় এক মণ খাবার খায়। ব্লাক ডায়মন্ডের প্রতিদিনের খরচ প্রায় ৮শ টাকা। শুরুর দিকে খাবার কম খেলেও দিনে দিনে তার খাবার পরিমাণ বাড়ে। বর্তমানে গরুটির ওজন প্রায় ১৪৪০ কেজি (৩৬) মণ। শরিফ ঢালী বলেন, এ ধরনের গরু লালনপালন খুবই ব্যয়বহুল ও কষ্টের। পরিবারের একজন সদস্যের মতো করে আমরা গরুটি পালন করেছি। পরিবারের সবাই মিলে যত্ন নিয়ে বড় করেছি। অনেক শ্রম ও অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে। গরুটিকে দেখভাল করার জন্য আলাদা করে বছরব্যাপী মানুষ কাজে রাখতে হয়েছে। সাড়ে চার বছরে প্রায় ৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ২০ লাখ টাকায় গরুটি বিক্রি করতে চান শরিফ ঢালী। পশুটি এখন মুন্সীগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ি উপজেলার সোনারং এলাকার নিজ বাড়িতে আছে। সরেজমিনে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে দুটি মোটা দড়িতে বেঁধে রাখা হয়েছে ষাঁড়টি। আর তাকে দেখতে বাড়িতে মানুষ ভিড় জমিয়েছে। শত মন্তব্য দর্শনার্থীদের। আরশাদ উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি জানান, শরীফ ঢালি শখের বসে পশুটিকে লালনপালন করে আসছিলো। তাদের জানা মতে, ব্লাক ডায়মন্ড এ জেলার সবচাইতে আকর্ষণীয় পশু। এর আগে এত বড় পশু মোটাতাজা হয়নি এ জেলায়। কাউসার আহম্মেদ নামে এক ব্যাক্তি তিনি মাদারিপুর থেকে এসেছেন। তিনি বলেন, এক আত্মীয়ের মাধ্যমে জানতে পারি এখানে এত বড় কোরবানির পশু আছে। তাই দেখতে এসেছি। দর-দামে মিললে তিনি পশুটি নিবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এদিকে শরীফ ঢালীকে দেখে এ এলাকার অনেকেই কোরবানির পশু মোটা-তাজা করতে আগ্রহী হচ্ছেন। মো. নাছির হোসেন নামে এক ব্যক্তি বলেন, যারা গবাদি পশু পালন করতে চায় শরীফ ঢালী তাদের অনুসরণীয় হতে পারেন। তিনি দেখিয়েছেন একটি পশুর মাধ্যমে কিভাবে লাখপতি হওয়া যায়। গবাদি পশু পালন করে স্বাবলম্বী হতে অনেক পশুর দরকার নেই। ব্লাক ডায়মন্ডের মত ৩-৪ টা হলেই যথেষ্ট। তবে সোহেল নামে এক যুবক বলেন, সরকারিভাবে প্রতিটি এলাকায় ব্রাহমা বীজ দেওয়া হলে উন্নত জাতের এ পশু পালনের মাধ্যমে বেকার সমস্যার সমাধান হবে। যুবকরা আত্মনির্ভর হয়ে উঠবে। একদিকে দেশে মাংসের যোগান বাড়বে, অন্যদিকে আর্থিকভাবে স্বচ্ছলতাও আসবে। টঙ্গিবাড়ী ভেটেরিনারি সার্জন মো. কামরুল হাসান সৈকত বলেন, উপজেলায় কোরবানিকে কেন্দ্র করে যেসকল পশু প্রাকৃতিক উপায়ে মোটাতাজা করা হয়েছে তার মধ্যে সোনারং এর শরিফ ঢালীর ব্লাক ডায়মন্ডটি সবচেয়ে বড়। তাই যারা কোরবানির জন্য বড় ও ফ্রেস পশু চান তারা ব্লাক ডায়মন্ড নিতে পারেন। তিনি বলেন, এ পশু পালন খুব লাভজনক। মাংসও সুস্বাদু। তাই এর চাহিদা খুব বেশি হবে। ব্রাহমা জাতের কয়েকটি পশু পালনের মাধ্যমে যে কেউ আর্থিকভাবে খুব বেশি লাভবান হতে পারে।