নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ২০০টি ব্রডগেজ (বিজি) প্যাসেঞ্জার ক্যারেজ সংগ্রহ এবং উপকূলীয় জেলাসমূহে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে পানি সরবরাহ প্রকল্পসহ ১২টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ হাজার ৭৪৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ১১ হাজার ৬৭৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, বৈদেশিক অর্থায়ন ৪ হাজার ৬৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ১ কোটি ২০ লাখ টাকা।
মঙ্গলবার রাজধানীর শেরে বাংলা নগরস্থ এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী এবং একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে সভায় যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের কাছে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
একনেকে অনুমোদন পাওয়া রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ২০০টি ব্রডগেজ (বিজি) প্যাসেঞ্জার ক্যারেজ সংগ্রহ’ শীর্ষক প্রকল্পের প্রস্তাবিত ব্যয় এক হাজার ৭০৪ কোটি টাকা। প্রকল্পটিতে ইআইবির ঋণ এক হাজার ৩৩১ কোটি ২০ লাখ টাকা। বাকি অর্থ সরকারের কোষাগার থেকে মেটানো হবে।
এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণের মাধ্যমে বহুল কাক্সিক্ষত পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে জাতীয় ও আন্তঃদেশীয় রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে। যমুনা নদীর ওপর ‘বঙ্গবন্ধু রেল সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পের কাজ চলমান। পদ্মা সেতু এবং যমুনা নদীর ওপর রেল সেতু তৈরি হলে রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের মধ্যে এবং পাশের দেশগুলোর সঙ্গে উপযুক্ত রেল সংযোগ তৈরি হবে। এর ফলে দেশের অভ্যন্তরে যাত্রী এবং মালামাল পরিবহনেও প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হবে। এমতাবস্থায় পুরাতন ক্যারেজগুলোর প্রতিস্থাপনসহ আগামী দুই থেকে চার বছরের মধ্যে আরও ৪০০টি যাত্রীবাহী ক্যারেজ প্রয়োজন হবে। এ কারণে ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (ইআইবি) আর্থিক সহায়তায় প্রাথমিকভাবে ২০০টি যাত্রীবাহী ক্যারেজ কেনা হবে।
সভায় অনুমোদন পাওয়া অন্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে- ‘উপকূলীয় জেলাসমূহে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে পানি সরবরাহ’ প্রকল্প; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ৫টি প্রকল্প যথাক্রমে ‘লোকাল গভর্নমেন্ট কোভিড-১৯ রেসপন্স অ্যান্ড রিকভারি (এলজিসিআরআরপি)’ প্রকল্প; ‘সার্বজনীন সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প-২ (জিএসআইডিপি-২)’ প্রকল্প; ‘পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ প্রকল্প (২য় পর্যায়)’ প্রকল্প; এবং ‘বরিশাল বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়ক প্রশস্তকরণ ও শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্প; প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘বিএএফ ঘাঁটি জহুরুল হক, চট্টগ্রামে বিমানসেনা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট স্থাপন (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প; জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ‘দি প্রজেক্ট ফর ইমপ্রুভমেন্ট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ফ্যাসিলিটিস’ প্রকল্প; সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ‘নওগাঁ সড়ক বিভাগাধীন ৩টি আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং ৩টি জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ’ প্রকল্প; বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য এক্সটার্নাল টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপন’ প্রকল্প; কৃষি মন্ত্রণালয়ের দু’টি প্রকল্প যথাক্রমে ‘বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বীজ বর্ধন খামার স্থাপন’ প্রকল্প এবং ‘ভূ-গর্ভস্থ সেচনালা বর্ধিতকরণের মাধ্যমে সেচ এলাকা ও সেচ দক্ষতা বৃদ্ধি এবং পরীক্ষামূলকভাবে ড্রিপ সেচ পদ্ধতির প্রচলন’ প্রকল্প।
সভায় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা অংশ নেন।