নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক ও মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস এক বিবৃতিতে বলেন, বিএনপি-জামাত অশুভ জোট শাসনামলে ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সংঘটিত দেশব্যাপী পাঁচ শতাধিক জায়গায় জঙ্গী গোষ্ঠী কর্তৃক সিরিজ বোমা হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে উগ্র সাম্প্রদায়িক অপশক্তি ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য দেশপ্রেমিক নাগরিক সমাজকে আহ্বান জানিয়েছেন।
অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পথপরিক্রমায় ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ত্রিশ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অসাম্প্রদায়িক জাতি-রাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্ম হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি শাসক ও তাদের এদেশীয় দোসর উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠীকে পরাজিত করে বাঙালি জাতি। বিংশ শতাব্দীতে কামাল আতাতুর্কের তুরস্কের পর আরেকটি মুসলমান প্রধান সেকুলার রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। কিন্তু পরাজিত পাকিস্তান ও তাদের সহযোগী জামাত এবং ‘আল বদর’, ‘আল শামস’ ও ‘রাজাকার’ প্রভৃতি বাহিনী মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত হওয়ার প্রতিশোধ গ্রহণে তৎপর থাকে। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে একদল নরপশু খুনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিুবর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করলে ঘাতকচক্রের হোতা মোশতাক-জিয়া ক্ষমতা দখল করলে পরাজিত অপশক্তিকে তারা রাষ্ট্রীয়ভাবে পুনর্বাসন করে।
তিনি বলেন, খুনিচক্র রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করায় বাংলাদেশে আবার উল্টোরথের যাত্রা শুরু হয়। এসময় সংবিধানের ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মৌল চরিত্র-বৈশিষ্ট্য পাল্টে দেয় খুনিচক্র। খুনি মোস্তাক, জিয়া ও পরবর্তীতে এরশাদ-খালেদার আশ্রয়-প্রশয়ে লালিত হয় উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তি। ১৯৭৬ এর ৩ মে এক অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে সংবিধানের ৩৮নং অনুচ্ছেদ বাতিল করে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। যা পরবর্তীতে সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে আইনে পরিণত করা হয়। মূলত সংবিধানের ১২ ও ৩৮ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে জেনারেল জিয়া উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর রাজনীতিতে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। জেনারেল জিয়া একদিকে ধর্মীয় স্লোগান জুড়ে দেয় অন্যদিকে মদ, জুয়া, ব্যাভিচারসহ বিভিন্ন সামাজিক অনাচারের লাইসেন্স প্রদানের মধ্য দিয়ে ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ভাওতাবাজীর প্রচলন করেন।
তিনি বলেন, এদেশে উগ্র সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গি তৎপরতার পৃষ্ঠপোষক হলো বিএনপি। বিএনপি শাসনামলে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ করে হুজি-বি। খালেদা জিয়ার প্রধানমন্ত্রীত্বের প্রথম আমলে ১৯৯১-৯৬ সময়কালে জঙ্গি সংগঠন হুজির উত্থান ও বিস্তার ঘটে। এরপর বিএনপি-জামাত চারদলীয় জোট শাসনামলেই বাংলা ভাইয়ের উত্থান ঘটেÑ ভয়াবহ রূপ ধারণ করে জঙ্গি সংগঠন জেএমবি। এমনকি তখন বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন, বাংলা ভাই নাকী মিডিয়ার সৃষ্টি! ২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহ.) এর মাজারে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর হামলা চালানো হয়। ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়াকে হত্যা করে জঙ্গিরা।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামাত জোটের শীর্ষ নেতৃত্বের ষড়যন্ত্র ও পৃষ্ঠপোষকতায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে হত্যার উদ্দেশ্যে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালায় জঙ্গিগোষ্ঠী। বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় ২২ জন নেতা-কর্মী শাহাদাত বরণ করেন। গ্রেনেডের স্পিøন্টারের আঘাতে আহত হন পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী। পরবর্তীতে দীর্ঘ সুনিবিড় তদন্তে বেরিয়ে এসেছে এই নির্মম গণহত্যার সাথে কারা জড়িত ছিল। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আসামীদের জবানবন্দিতে উঠে আসে কীভাবে সন্ত্রাসের মাস্টারমাইন্ড তারেক রহমান ও বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় গ্রেনেড হামলা সংঘটিত হয়েছিল। এমনকি যে হাওয়া ভবনে বসে হরকাতুল জিহাদের মুফতি হান্নানদের নিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে, সেই হাওয়া ভবনে বসেই তখন জজ মিয়া নাটক সাজানো হয়েছিল।
তিনি বলেন, একটি রাজনৈতিক দল জঙ্গিগোষ্ঠী ও উগ্র সাম্প্রদায়িকতাকে লালন-পালন ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করতে পারে একথা সভ্য সমাজের মানুষ কল্পনাও করতে পারে না। অথচ আমাদের দেশে এ ধরনের ন্যাক্কারজনক উদাহরণ সৃষ্টি করেছে বিএনপি। উগ্র সাম্প্রদায়িকতার পৃষ্ঠপোষক বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। না হলে এরা আবারও সুযোগ পেলে এদেশকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেবে।