নিজস্ব প্রতিবেদক
পদ্মা সেতুর ২৫ ও ২৬নং পিয়ারে বসানো হয়েছে ৩১ তম স্প্যান ‘৫-এ’। গতকাল বুধবার বিকাল ৪টা ২ মিনিটে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের স্প্যানটি পিয়ার ২টির উপর বসানোর কাজ সম্পন্ন হয়। এতে দৃশ্যমান হলো সেতুর ৪ হাজার ৬শ ৫০ মিটার অর্থাৎ সাড়ে ৪ কিলোমিটারের বেশি অংশ। ৩০ তম স্প্যান বসানোর ১০ দিনের মাথায় ৩১ তম স্প্যানটি বসানো হলো। পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৗশলী (মূল সেতু) দেওয়ান মোঃ আব্দুল কাদের মুন্সীগঞ্জের কাগজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
তিনি জানান, বুধবার সকাল সাড়ে ৮টায় মাওয়া কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে স্প্যানটি নিয়ে ভাসমান ক্রেন নির্ধারিত পিয়ারের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টায় ক্রেনটি নির্দিষ্ট পিয়ার এলাকায় পৌঁছে। এরপর সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী ও নির্মাণ শ্রমিকদের প্রচেষ্টায় ধীরে ধীরে স্প্যানটি বসানো হয়। এতে সময় লাগে সাড়ে ৩ ঘন্টার মত। ৩১ তম স্প্যানটি স্থাপন হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে ড্রেজিং ও ওয়েল্ডিংসহ বেশ কিছু জটিলতার সৃষ্টি হয়। নদীর মূল চ্যানেল ও সেতুর জন্য নির্মিত চ্যানেল এর পিয়ার ১৫-১৬ এর কাছে প্রবল স্রোত ও ডুবোচরে আটকে পড়ে। উক্ত স্থানটি পার হতে স্প্যানবাহী ক্রেনটিকে বেশ বেগ পেতে হয়। পরবর্তীতে ওয়্যার ও এংকর কেবল স্থাপন করে এটিকে টেনে পিয়ার ২৫ ও ২৬ এর কাছে নেওয়া হয়। উক্ত স্থানটি অতিক্রম করতে প্রায় ২ ঘন্টার মতো সময় লাগে। এটি জাজিরা প্রান্তের মূল সেতুর শেষ স্প্যান। এ স্প্যান স্থাপনের পর মূল সেতুর ১০টি স্প্যান স্থাপন করা বাকি।
তিনি আরো জানান, সেতুর জন্য প্রয়োজন ৪১টি স্প্যান। এর মধ্যে ২ টি স্প্যান মাওয়ায় আসা বাকী রয়েছে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) বিকাল ৪টায় উক্ত স্প্যানবাহী জাহাজ এমভি কং সিউ সং চট্টগ্রাম বন্দরের বহিঃনোঙ্গরে পৌঁছাবে। চট্টগ্রাম বন্দরে প্রয়োজনীয় শুল্ক পরিশোধ ও কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স শেষে খুব শীঘ্রই স্প্যান ২টি মংলা হয়ে মাওয়া সাইটে পৌঁছবে।
প্রকৌশলী সূত্রে আরো জানা যায়, মূল সেতুর ২৯১৭টি রোডওয়ে স্ল্যাব এর মধ্যে ৬২৯টি (৯টি স্প্যান-১৩৫০ মি.) এবং ২৯৫৯টি রেলওয়ে স্ল্যাব এর মধ্যে ১১০৫ টি স্থাপন করা হয়েছে। মাওয়া ও জাজিরা ভায়াডাক্টে ৪৮৪ টি সুপার টি- গার্ডার এর মধ্যে ১৫০ টি স্থাপন করা হয়েছে। গত ৩০ মে পর্যন্ত মূল সেতুর অগ্রগতি ৮৭.৫০%, নদীশাসন কাজের অগ্রগতি ৭২.০০% এবং সার্বিক অগ্রগতি ৭৯.৫০%।
এদিকে স্প্যান বসানোর কার্যক্রমের জন্য এদিন পদ্মায় বেলা ১১টা থেকে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌরুটে সকল ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে প্রথম স্প্যানটি বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। এরপর একে একে বসানো হয় ৩১টি স্প্যান। প্রতিটি স্পেনের দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার। ৪২টি পিলারের ওপর ৪১টি স্প্যান বসিয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে সবকটি পিয়ার এরই মধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে। মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। দুটি সংযোগ সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণ করেছে বাংলাদেশের আবদুল মোমেন লিমিটেড। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো। পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর আগামী ২০২১ সালেই খুলে দেয়া হবে।
৩১ তম স্প্যানে দৃশ্যমান পদ্মা সেতুর ৪৬শ ৫০ মিটার
আগের পোস্ট