নিজস্ব প্রতিবেদক
গতকাল মঙ্গলবার সাবিত আল হাসান লঞ্চ দুর্ঘটনার ২ বছর পূর্ণ হলো। ২০২১ সালে কার্গো জাহাজের ধাক্কায় ছোট লঞ্চটির মুহূর্তেই ডুবে যাওয়ার দৃশ্য হতবাক করেছিলো দেশবাসীকে। বছর না পেরোতেই ২০ মার্চ ওই স্থানটিতে একইভাবে ঘটে এম এল আফসার উদ্দিন লঞ্চ দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনা রোধে কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি করে একাধিক উদ্যোগ গ্রহণ করলেও বাস্তবায়ন হয়নি কোন প্রতিশ্রুতির। বরং আগের থেকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হয়েছে নৌপথটি। ঝড়-বৃষ্টিতে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে আগের মতোই যাত্রী পারাপার করছে লঞ্চগুলো।
মুন্সীগঞ্জ-নৌরুটে র্মমান্তকি দুটি লঞ্চ দুর্ঘটনায় প্রাণ গিয়েছিলো নারী ও শিশুসহ ৪৬ যাত্রীর। বিচার না পাওয়া স্বজনরা বয়ে বেড়াচ্ছে প্রিয়জনের স্মৃতি। এতো মানুষের মৃত্যুর পরেও নৌরুটটিকে কেন অনিরাপদ বলছেন এই রুটে চলাচলকারী যাত্রীরা।
সাবিদ আল হাসান লঞ্চের দুর্ঘটনায় নিহত আলিফ এর মা রাশিদা বেগম বলেন, দুই বছর পার হয়ে গেল আমরা কোন বিচার পাইনি। আমরা মুন্সীগঞ্জবাসী একটি নিরাপদ নৌরুট চাই।
দুর্ঘটনার আগে এই রুটে ২০-২৫টি লঞ্চ চলাচল করলেও বর্তমানে চলছে ৮টি। জরাজীর্ণ ছোট লঞ্চগুলো বছরের পর বছর রং করে জোড়াতালি দিয়ে যাত্রী পরিবহন করছে বলে জানান এই রুটে চলাচলকারী যাত্রীরা। এছাড়াও ধলেশ্বরী ও শীতলক্ষ্যা নদীর প্রবেশমুখে এলোমেলোভাবে নোঙর করে রাখা এবং বেপোরোয়া গতিতে চলা বিভিন্ন সিমেন্ট কারখানার কার্গো জাহাজগুলো চলাচলের পথ বন্ধ করে ঝুঁকি বাড়িয়েছে কয়েকগুণ। প্রতিদিন বড় বড় জাহাজগুলোকে সাইড দিয়ে লঞ্চ চালানো দুঃসাহসিক কাজ বলছেন চালক মালিকরা। দুর্ঘটনার পরে সকল প্রকার ছোট লঞ্চ বন্ধ করে বিআইডব্লিউটিসি সি-ট্রাক চালু করার ফলে হারিয়েছে এই রুটে চলাচলকারী যাত্রীদের। ফলে লঞ্চ চালু হওয়ার পরও যাত্রী না পাওয়ায় লোকসানের ভয়ে লঞ্চ মালিকরা লঞ্চ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় বলে জানান লঞ্চ মালিক সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান রেজা। দেশের ২য় ধনী জেলা হলেও এ সেক্টরে নতুনভাবে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী না হওয়ায় সম্পূর্ণভাবে লঞ্চ যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন লঞ্চ মালিকরা। তবে তারা আরো বলেন, সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা পেলে হয়তো এ নৌরুটের উন্নতি হবে।
বিআইডব্লিউটিএ, নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তা বাবু লাল বৈদ্য বলেন, নৌপথটি নিরাপদ করতে ইতিমধ্যেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই নোঙ্গর করা কার্গো জাহাজগুলো সরিয়ে নেওয়া হবে।
সড়ক পথের ভোগান্তি এড়াতে নৌ-রুটটি দিয়ে মুন্সীগঞ্জ থেকে প্রতিদিন প্রায় ২৫-৩০ হাজার যাত্রী নারায়ণগঞ্জ এবং ঢাকায় যাতায়াত করে। তাই আসছে কালবৈশাখীর আগেই জনগুরুত্বর্পূণ নৌপথটিকে নিরাপদ করার দাবী জেলাবাসীর।