মুন্সীগঞ্জে নিষিদ্ধ করেন্ট জাল আর উৎপাদন হতে দেওয়া হবেনা সেলক্ষ্যেই কাজ চলছে – নৌ পুলিশের ডিআইজি মোঃ আতিকুল ইসলাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
একের পর এক অভিযানের পরেও মুন্সীগঞ্জে বন্ধ হচ্ছেনা নিষিদ্ধ মনোফিলামিন কারেন্ট জাল উৎপাদন। প্রশাসনের বারবার অভিযানের ফলে কারখানাগুলো সরিয়ে ছোট আকারে বাসাবাড়ীতে স্থাপন করা হয়েছে নিষিদ্ধ এই কারেন্ট জাল উৎপাদনের কারখানাগুলো। মাছের মরণ ফাঁদ নিষিদ্ধ এই কারেন্ট জাল। তাই মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে প্রশাসন এই জালে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু কার কথা কে শোনে। দেশের শতভাগ কারেন্ট জাল উৎপাদনকারী একমাত্র জেলা মুন্সীগঞ্জ। এখান থেকেই বাজারজাতকরণের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন জেলায়। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, জেলা সদরের শুধুমাত্র পঞ্চসার ইউনিয়নেই রয়েছে ছোট বড় প্রায় ৩ শতাধিক কারেন্ট জাল উৎপাদনকারী কারখানা। বর্তমানে অসাধু কারখানার মালিকরা রাতের আঁধারে এবং দিনের বেলা বাহির থেকে তালা দিয়ে কারখানার ভিতরে তৈরী করছে কারেন্ট জাল। দিনে এবং রাতে বাহির থেকে বুঝার উপায় নেই যে, ভিতরে কি হচ্ছে। তবে ভিতর থেকে মেশিন চলার শব্দ কানে ভাসে। ভোরে এবং সন্ধ্যায় শ্রমিকদের ভিতরে দল বেঁধে ঢুকতে এবং বের হতে দেখা যায়। সরেজমিনে ঘুরে আরো দেখা গেছে, পঞ্চসার ইউনিয়নের মালিপাথর, দয়াল বাজার, গোসাইবাগ, ডিঙ্গা ভাঙ্গা, আধারিয়াতলা, কাশিপুর, বিনোদপুর এলাকায় সন্ধ্যা হলেই নারী এবং পুরুষ শ্রমিকরা কারখানায় ঢুকছে। আবার ভোর সকালে দেখা যায় দল বেঁধে বের হচ্ছে শ্রমিকরা। এ সময় কথা হয় কয়েকজন শ্রমিকের সাথে। নাম প্রকাশ না করার সূত্রে তারা জানান, ২ শিফটে তারা কারেন্ট জাল তৈরীর কারখানায় কাজ করে। সন্ধ্যা ৭টায় যারা কারখানায় ঢুকে তারা পরদিন ভোর ৭ টায় বের হয় ১২ ঘন্টা ডিউটি করে। আবার যারা ভোর সকালে ঢুকে তারা দিনভর চোখ কান খোলা রেখে কারখানা বাহির থেকে তালা দিয়ে ভিতরে কাজ করে। এজন্য প্রতিটা কারখানায় তাদের ২/৩ জন লোক থাকে পাহারায়। প্রশাসন কিংবা অন্য সংস্থার কাউকে সন্দেহ হলে তারা ভিতরে খবর পৌঁছে দেয়। তখন গোপন দরজা দিয়ে শ্রমিকরা গা ঢাকা দেয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শ্রমিক জানান, দিনের চেয়ে রাতের বেলায় তারা বেশী পরিমান কারেন্ট জাল উৎপাদন করে। কোন কোন কারখানার বাইরে আলো নিভিয়ে রাখা হয়। জালগুলো উৎপাদন করার পর বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তারা সেটিতে আয়রন কারখানায় পৌঁছে দেয়। শ্রমিকদের দেয়া তথ্যমতে, বিনোদপুর এবং মালিরপাথর এলাকার নদীর পাশে ২টি আয়রন কারখানা আছে। সেখানে তৈরী কারেন্ট জালগুলো আয়রন এবং বাজারজাতকরণের জন্য মোড়ক লাগানো হয়। উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর জুন মাস পর্যন্ত র্যাব, পুলিশ, নৌপুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যৌথ অভিযান চালায় পঞ্চসার ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায়। অভিযানে ৬ কোটি ৩৪৯ লক্ষ মিটার নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল জব্দ করে। মামলা করা হয় মোট ১৪টি। জেলে পাঠানো হয় ১ জনকে এবং জরিমানা করা হয় ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা। সদর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ জহিরুল ইসলাম আকন্দ বলেন, কারেন্ট জাল তৈরীর ফ্যাক্টরী, পরিবহন এবং ব্যবহারের জায়গা এই তিনটা জায়গাতেই আমরা অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রেখেছি। এসব কারখানার ব্যাপারে আমাদের নজরদারি আছে। তবে অসাধু কারখানার মালিকরা নতুন নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করছে কারেন্ট জাল উৎপাদনের ধারা অব্যাহত রাখতে। ওদের এক একটা পদ্ধতির সন্ধান করে আমরা যেটা দেখেছি তারা বাসাবাড়ীতে গুদাম বানিয়ে জাল রাখে। দিনে রাতে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে উৎপাদনের মাত্রা ঠিক রাখতে চেষ্টা করে। তাদের লক্ষ্য যাতে সফল না হয় আমরা সেলক্ষ্যেই কাজ করছি। যেহেতু কারেন্ট জাল তৈরী অবৈধ এ কারণে তারা রাঁতের আঁধারে কিংবা যোগাযোগ ব্যবস্থার সুযোগটা কাজে লাগিয়ে উৎপাদন করে। যতদিন এই স্থানগুলোতে কারেন্ট জাল উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ না হবে ততদিন আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। কোনমতেই অবৈধ কারেন্ট জাল উৎপাদনকারীদের সফল হতে দিবো না। স্থানীয় সচেতন নাগরিকরা বলছে, কিছু করেন্ট জাল কারখানা সিলগালা করা হলেও পঞ্চসার এলাকায় অদৃশ্য কারণে কিছু কারেন্ট জাল কারখানা জাল উৎপাদনের কাজ অব্যাহত রেখেছে। গতকাল রবিবার দুপুরে মুন্সীগঞ্জের মেঘনা নদীতে অভিযান চালিয়ে ১০ হাজার মিটার কারেন্ট জালসহ তিনজনকে আটক করেছে গজারিয়া নৌ পুলিশ। নৌ পুলিশের এস আই মোশারফ হোসেন জানান, নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল দিয়ে ইলিশ ধরার অপরাধে তিন জনকে আটক করা হয়। আটককৃতরা হলেন রফিকুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ও উত্তম বর্মন। এদিকে মুন্সীগঞ্জে পঞ্চসার এলাকায় কারেন্ট জাল উৎপাদন বিষয়ে নৌ পুলিশের ডিআইজি মোঃ আতিকুল ইসলাম বলেন, আমরা সারা বছর নদীতে অভিযান চালিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে জানতে পেরেছি নিষিদ্ধ কারেন্ট জালগুলো মুন্সীগঞ্জ থেকেই তৈরি হয়। এই জাল তৈরির হোতাদের ধরতে আমরা আগে রাতে অভিযান পরিচালনা করতাম এখন দিনে করি। গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়ে প্রায় ১০ কোটি টাকার কারেন্ট জাল জব্দ করেছি। দেশে নিষিদ্ধ করেন্ট জাল কোথাও আর উৎপাদন হতে দেওয়া হবেনা সেলক্ষ্যেই কাজ চলছে। মুন্সীগঞ্জের পঞ্চসারসহ বিভিন্ন এলাকায় যারা নিষিদ্ধ করেন্ট জাল উৎপাদন করবে তাদের তথ্য সংগ্রহ করে আমরা অচিরেই আবারো রাতের বেলা অভিযান পরিচালনা করব।