গ্রামজুড়ে কান্নার রোল, স্বজনদের আহাজারি

নিজস্ব প্রতিবেদক
বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবির ঘটনায় স্বজনদের কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছে মুন্সীগঞ্জ টঙ্গীবাড়ি উপজেলা। চারদিকে শুধু কান্না আহাজারি আর আহাজারি । গতকাল লঞ্চডুবির খবর তাদের গ্রামের বাড়ি পৌঁছালে পড়ে যায় কান্নার রোল। একে-অপরকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা। কেউ একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে উচ্চস্বরে কাঁদছে, কেউবা স্বজনদের ছবি হাতে নিথর দৃষ্টিতে মাটিতে বসে আছে। দুই চোখ দিয়ে অঝরে ঝরছে পানি। মুন্সীগঞ্জের চারদিকের বাতাস যেন ভারি হয়ে উঠেছে। নিখোঁজ স্বজনদের মধ্যে কেউ কেউ স্বজনদের ছবি নিয়ে এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করছে, মোবাইলে ছবি দেখিয়ে কান্নার আহাজারি করছে স্বজনরা। লাশ কাঁধে নিয়ে কান্নায় চোখ মুছছেন সহোদর। কাছের মানুষের এই করুণ পরিণতি শেল হয়ে বিঁধছে তাদের বুকে। বর্তমানে উপজেলার ওই গ্রামে চলছে শোকের মাতম। বুড়িগঙ্গায় ডুবে যাওয়া লঞ্চে থাকা হতভাগ্য যাত্রীদের মরদেহ পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে স্বজনদের কান্না আর আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে চারপাশ। শনাক্ত করার পর স্বজনেরা মরদেহ বুঝে নেন। অ্যাম্বুলেন্সে করে কেউ নিয়ে যান বাবার মরদেহ আবার কেউ সন্তানের। লঞ্চডুবির ঘটনায় মরদেহগুলো উদ্ধার হওয়ার পর মিটফোর্ড হাসপাতালে এনে সারি করে রাখা হয়। পরে জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে মরদেহগুলো স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়। গতকাল মুন্সীগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা মর্নিং বার্ড লঞ্চটি বুড়িগঙ্গার শ্যামবাজার পয়েন্টে ময়ূর-২ নামের লঞ্চের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে ডুবে যায় মর্নিং বার্ড। লঞ্চডুবির ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩৬ জনের লাশ উদ্ধারের খবর পাওয়া গেছে। নিখোঁজ অন্যদের উদ্ধারে এখনও অভিযান অব্যাহত রেখেছে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ও কোস্ট গার্ড।
বিকাল ৩টা পর্যন্ত ৩৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৫ জন নারী ও ২ জন শিশু রয়েছে। কেরানীগঞ্জের একটি ডকইয়ার্ড থেকে মেরামত শেষে ময়ূর-২ নদীতে নামানোর সময় ওই দূর্ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে। তবে ডুবে যাওয়া লঞ্চটি থেকে কয়েকজন যাত্রী সাঁতরে পাড়ে উঠলেও অন্যরা তলিয়ে যান বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক (বন্দর) একেএম আরিফ উদ্দিন বলেন, সকাল ৯টার দিকে মুন্সীগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা মর্নিং বার্ড লঞ্চটি সদরঘাটে ভিড়ার আগ মুহূর্তে চাঁদপুরগামী ময়ূর-২ লঞ্চটি ধাক্কা দেয়। এতে সঙ্গে সঙ্গে তুলনামূলক ছোট মর্নিং বার্ড লঞ্চটি ডুবে যায়। এ সময় লঞ্চটিতে কমপক্ষে অর্ধশতাধিক যাত্রী ছিলেন বলে জানান তিনি।