নিজস্ব প্রতিবেদক : মুন্সীগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী চায়ের দোকান মানে সামসুর দোকান। দীর্ঘ সময় ধরে সে যেন তার এতিহ্য ধরে রেখেছে। আজো শতশত মানুষের চা ও বাকরখানির আড্ডা বাজিতে মুন্সীগঞ্জ জেলা শহরের প্রাণ কেন্দ্র মাছ বাজারের গলির সামসুর দোকানটি প্রাণ চাঞ্চল্যে ভরে ওঠে। যেন সাবলীল ধারার কৃষ্টিময় এতিহ্য এখানে খেলা করে।
প্রায় শতবর্ষ অতিক্রম করেছে এ দোকানটি। হাজী সামসু সাহেবের দীর্ঘ ৬০ বছর কেটেছে এ দোকান ঘরটিতে। মুন্সীগঞ্জ মাছ বাজারের ঠিক পশ্চিমপাশে এর অবস্থান। যাকে বলে পুরনো গলি। মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার এমন কেহ নাই যে এ চা দোকান ঘরটিকে চিনে না। মাছ বাজারের সকল দোকানী এ ঘরটিতে চা পান করে। মাছ বাজারের দোকানীরা এ ঘরটির বাকরখানি ও চা না খেলে যেন তাদের তৃপ্তিই মিটেনা। দোকানীরা বাড়ী থেকেও নাস্তা করে এলেও যেন এ দোকান ঘরটিতে বসে একটু বাকরখানির স্বাদ না নিলেই যেন চলেনা। সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত দোকান ঘরটি যেন মানুষের মেলা বসে। দুপুরেও চলে এ মেলা। বিকেল ও সন্ধ্যার পরও চা পান ও আড্ডা এ দোকান ঘরটির যেন একটা বৈশিষ্ট্য হয়ে দাড়িয়েছে। বাকরখানির সাথে একটু চা ও তরল হালুয়ার স্বাদ যেন অমৃত। হাজী সামসু সাহেব জীবনের ৬০ টি বছর এ দোকান ঘরটি সচল রেখেছেন। কিন্তু বয়স হবার সাথে সাথে তিনি ছেলেদের উপর দায়দায়িত্ব দিতে চেয়েও পারেননি। তারা স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় এর দায়িত্বভার তুলে দেন বিশ্বস্ত কর্মচারী মনার উপর। এখন তিনিই এর পরিচালক। মনা প্রায় ৫০ বছর যাবত আছেন এ দোকানে। তিনি জানান, এক সময় শুধু লাঠি বিস্কুট ও চা ছিল এ দোকানের সওদা। নেতারা বড় লাঠি বিস্কুট ও চা খেতো এখানে রাত ৮টা পর্যন্ত। তখন হারিকেন ও বড় কুপিতে চলতো রাতের সময়। তার মতে, মুন্সীগঞ্জের বড় বড় নামকরা মানুষজন ছিলো এ দোকানের নিয়মিত সম্মানীত সভ্য। সাবেক এমএল এ আঃ হাকিম বিক্রমপুরীও এ দোকানের চা পান করতেন। মনা জানায়, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধারা যখন সদর থানায় অভিযান চালায় তখন এখানে কিছু সময় দিয়েছেন। এক সময় যখন খালইষ্টের খর¯্রােতা খালটি প্রবাহমান ছিলো তখন মাঝি মাল্লারা এখানে এসে লাঠি বিস্কুট ও চায়ের স্বাদ নিতো আর আড্ডায় হারিয়ে যেতো। তবে মনা আরো জানায়, আজ এখানে চা বাকরখানি, রুটি পারোটা, ভাজি, হালুয়া সিঙ্গারা, পুরি, সমুচাসহ নানা সামগ্রী বানানো হলেও পূর্বে এমনটি ছিলোনা। তবে আজো সামসুর চায়ের দোকানের সাথে বেচা কেনার প্রতিযোগিতায় অন্যান্য চা দোকানীরা হিমসিম খায়। শত বর্ষ পাড়ি দিয়েও আজো সামসুর চায়ের দোকান মাথা উচু করে তার ঐতিহ্যের জানান দিচ্ছে বীর দর্পে। সে বলতে যেন চায় আমি এখনো ক্লান্ত নই। আমি বহে চলতে চাই এমনি করেই। এখনো এখানে অনেক পুরনো বন্ধুদের আড্ডা চোখে পড়ে। যারা একসময় যৌবনে এখানে চা পানের আড্ডা জমিয়ে ছিলেন তারা অবসর জীবনে এখানে বৈকালীন চায়ের আড্ডা জমান মাঝে মাঝে। যেন তা দেখে মনে হয় আজো যেন সেই যৌবনেই রয়ে গেছে এ চা দোকান ঘরটি।