নিজস্ব প্রতিবেদক
ধলেশ্বরী নদীর বেড়িবাঁধের মালিপাথরের রাস্তা ভেঙ্গে যাওয়ায় মুক্তারপুর রিকাবীবাজারের সড়ক যোগাযোগ এখন বন্ধ হয়ে গেছে। তবে বিকল্প ঘুর পথে অতিরিক্ত পয়সায় রিকাবীবাজারে সবসময়ই যাওয়া যাচ্ছে যখন তখন। কয়েকদিন ধরে ধলেশ্বরীর কূল ঘেঁষে ভেঙ্গে যাওয়া বেড়িবাঁধের রাস্তার বাকি অংশ রক্ষায় বাঁশের কঞ্চি দিয়ে বেড়া দেয়া হচ্ছে নদী ভাঙ্গন রক্ষার শেষ চেষ্টা হিসাবে। তবে শেষ পর্যন্ত শেষ রক্ষা হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েই যাচ্ছে। সেখানে বাঁশের বেড়া দেয়া হলেও কবে নাগাদ এখানে বালির বস্তা ফেলা হবে তা কেউই এখনো জানেনা বলে শোনা যাচ্ছে। বরং বাঁশের বেড়ার পরেও রাস্তার বিশাল বিশাল ভাঙ্গা গর্ত হা করে আকাশের দিকে চেয়ে আছে। তবে সেখানে ইতোমধ্যে কিছু কিছু স্থানে বালির বস্তা ফেলা হয়েছে এমন দৃশ্যও চোখে পড়েছে। অন্যগুলোতে বাকি কাজ এখনো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে অনেকেই মনে করছেন। তবে সেখানে এই কাজ ধীর গতিতে চলছে বলে স্থানীয়ভাবে অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থার মধ্যে দিয়েও এ পথ দিয়ে মোটর সাইকেল ও মাঝেমধ্যে মিশুক চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে। আর এ পথে যাদের বাড়িঘর রয়েছে তারা বাজার হাটে যাওয়ার সময় পায়ে হেঁটেই চলাচল করছেন বলে দাবি উঠেছে। এখানে বর্তমানে এ পথে পায়ে হাঁটাই একমাত্র ভরসা বলে স্থানীয় এলাকাবাসী জানিয়েছেন। এ পথের পরিবর্তে রিকাবীবাজারে যেতে হলে মুক্তারপুর সেতুর পশ্চিম পার থেকে রিক্সায় দয়াল বাজার হয়ে যাওয়া যায় যখন তখন। তবে এ পথে ভাড়া একটু বেশি দিতে হয় আরোহীদের। উত্তাল বন্যার পানির তোপের মুখে এ পথের বেড়িবাঁধটি ইতোমধ্যে ধলেশ্বরী নদীতে ধসে যায়। এর ফলে এ পথের বিভিন্ন অংশের রাস্তায় ভাঙ্গন দেখা দেয়। এ ভাঙ্গনে কোথাও কোথাও রাস্তার বেশিরভাগ অংশই নদীতে চলে যায়। তবে এ পথে বেশিরভাগ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে মালিপাথর এলাকায়। ১৯৯৫ সালের ১০ নভেম্বর এ পথের বেড়িবাঁধের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপিত হয় বলে জানা গেছে। সেই সময় এ ভিত্তি প্রস্তরের উদ্বোধন করেন সেই সময়ের স্থানীয় সরকার ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী এবং বর্তমান জেলা বিএনপি’র সভাপতি আলহাজ্ব মোঃ আব্দুল হাই। মুক্তারপুর থেকে ফিরিঙ্গি বাজারের স্টিমার ঘাট পর্যন্ত এ বেড়িবাঁধটি নির্মিত হয়। বেড়িবাঁধটি নির্মাণের সময় থেকে ক্রটিপূর্ণের অভিযোগ উঠে বিভিন্ন মহলে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সেই সময় থেকেই বিষয়টি কোনভাবেই আমলে নেননি বলে অভিযোগ উঠেছে। তাই খুব সহজেই এ বেড়িবাঁধটি ধলেশ্বরী নদীতে চলে গেলো। বাঁধটিতে ব্লকগুলো সারি সারি সাজানোতে অনেকটাই অগোছালোর অভিযোগ উঠে সেই সময় থেকে। কিন্তু সেই সময় থেকে এ সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে কেউ কর্ণপাত না করার কারণে এর নির্মাণের ২৫ বছরের মধ্যে বাঁধটি ভেঙ্গে নদীতে চলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে বর্তমানে। এখানকার ব্লকগুলো সারিতে সারিতে সাজানোতে অনেকটাই ফাঁকফোকর ছিলো প্রথম থেকেই। আর এই ফাঁকফোকর দিয়ে নদীর জল দুই যুগ ধরে ভিতরে প্রবেশ করে বাঁধটি দুর্বল করে তোলে এই সময়ের মধ্যে। এর ফলে পানির চাপে এই বাঁধে মাঝে মাঝে ফাটল ধরায় এটি এখন নদীতে নেমে পড়েছে কোন রকম বাঁধা ছাড়াই। আগে থেকে এখানে সঠিক নজর দেয়া হলে এমনটি নাও ঘটতে পারতো বলে অনেকেই মনে করছেন। সেই সময়ে নজর দিলে এর সংস্করণে অল্প বিস্তর অর্থ খরচ হতো বলে অনেকেই মনে করছেন। এখন অনেক বেশি পরিমাণ অর্থ লাগবে এর মেরামতের কাজে। এর ফলে এখানে দায়িত্ব অবহেলার কারণে সরকারি অর্থের অপচয় হবে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ পথের রাস্তাটি অনেকটাই সরু। তার মধ্যে এ রাস্তা দিয়ে প্রতিদিনই ভারি যানবাহন চলাচল করে থাকে। এ রাস্তাটি ভারি যানবাহন চলাচল উপযোগী নয় বলে খবর পাওয়া গেছে। এর ফলে রাস্তার ফিটনেসে এ ভারি যানবাহন প্রতিদিন আঘাত করে আসছে। তাতে রাস্তাটি অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়ে। এদিকে নদীকে সামনে রেখে এখানে ইট বালুর জমজমাট ব্যবসা গড়ে উঠেছে। তাদের কারণে এ পথে ভারি যানবাহন চলাচল করে থাকে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ পথের রাস্তাটি পুনর্গঠনের পর এ পথে প্রথমে ভারি যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে হবে বলে এখানকার মানুষ দাবি তুলেছে। ইতোপূর্বে এ রাস্তার এ ধরণের যানবাহন চলাচলে লেখালেখি হলে পঞ্চসার ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃপক্ষ এখানে ভারি যানবাহন চলাচলে বাঁধা হিসেবে মুক্তারপুর বাজারের রাস্তার মাঝে একটি বড় ধরণের খুঁটি মাটি খুঁড়ে লাগিয়ে দেন। তাতে এখানে ভারি যানবাহন চলাচল সেই সময় বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু এর কিছুদিন পর সেই খুঁটি রহস্যজনক কারণে এখান থেকে কে বা কাহারা সরিয়ে নিলে তারপর থেকেই এখানে ভারি যানবাহন চলাচল শুরু হতে থাকে। ব্যবসায়ীদের ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য সরকারের বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগকৃত অর্থ কোনভাবেই জলে যেতে পারে না বলে এখানকার মানুষ মনে করে। তাই ভবিষ্যতে এর দেখভালের দায়িত্বে কর্তাব্যক্তিরা বিষয়টির ওপর বিশেষ নজর দিবেন বলে অনেকেই দাবি করেছেন। এখানকার বাঁধটি ভেঙ্গে যাওয়ার খবর শুনে এখানে ছুটে আসেন মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস ও জেলা প্রশাসক মোঃ মনিরুজ্জামান তালুকদার। সংসদ সদস্য এখানে পরিদর্শনের সময় সাময়িকভাবে ভাঙ্গন রোধের জন্য নগদ ১ লাখ টাকা প্রদান করেন বলে খবর পাওয়া গেছে।