নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার মিরকাদিম লঞ্চঘাটের ধলেশ্বরী নদীতে নাব্যতা ফেরাতে ড্রেজিং চলছে পুরোদমে। গত এক সপ্তাহ আগে এখানে এ ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হয়। তবে এ কাজটি ধীর গতিতে হওয়ার অভিযোগ তুলেছে অনেকেই। এ কারণে দ্রুতগতিতে এখানে ড্রেজিংয়ের কাজ না হওয়ায় এখানকার মানুষ অনেকটাই বিপদের মধ্যে রয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এখানে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসতে পারে বলে এখানকার কর্তৃপক্ষ আশা করছেন। মিরকাদিম লঞ্চঘাটের মুখের দিকে বড় আকারে একটি চর রয়েছে। গতকাল বুধবার সেটির কাটার ড্রেজিং চলছে। গত মঙ্গলবার থেকে মাঝারি আকারের লঞ্চ সরাসরি মিরকাদিম লঞ্চঘাটে ভিড়তে শুরু করেছে। এর আগে এক মাসের মতো এ ধরণের লঞ্চগুলো এখানে ভিড়তে পারতো না বলে অনেক যাত্রীরা জানিয়েছে। ইতোপূর্বে মিরকাদিম লঞ্চঘাটের ধলেশ্বরী নদীতে ব্যাপকভাবে চর পড়ায় লঞ্চ চলাচলে অনেক ধরণের অসুবিধা দেখা দিয়েছে লঞ্চযাত্রীদের। অনেকদিন ধরেই এ অবস্থা বিরাজমান থাকলেও গত এক সপ্তাহ আগে থেকে এখানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে। মিরকাদিম লঞ্চঘাট থেকে পঞ্চসার ইউনিয়নের ফিরিঙ্গিবাজার স্টিমার ঘাট পর্যন্ত ব্যাপক এলাকা নিয়ে ধলেশ্বরী নদীতে চর পড়েছে। এর ফলে ধলেশ্বরী নদী এখন অনেকটাই ছোট হয়ে আসছে। এখানকার চর পড়ার স্থান থেকে ধলেশ্বরী নদীটির খুব কাছেই অবস্থান করছে এ জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুক্তারপুর সেতুটি। সেই হিসেবে চরের স্থানে নিয়মিত ড্রেজিং করা না হলে ধলেশ্বরী নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ যেকোন সময় ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে অনেকেই ধারণা করছে। এ কারণে এখন এখানে দক্ষিণবঙ্গের বরিশাল ও চাঁদপুরের বড় বড় লঞ্চ এ ঘাটে কোনভাবেই ভিড়তে পাড়ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। তাতে এখানকার ঐতিহ্যবাহী মিরকাদিমের কমলাঘাট বন্দরের ব্যবসা বাণিজ্য হুমকির মুখে পড়েছে। হুমকির মুখে আরো পড়েছে রিকাবিবাজার ও ফিরিঙ্গিবাজারের ব্যবসা বাণিজ্য। দক্ষিণবঙ্গ থেকে লঞ্চে করে আসা বিভিন্ন পণ্য মিরকাদিম লঞ্চঘাটেই নামানো হয়ে থাকে। আর সেইসব পণ্য এ জনপদের জেলার বিভিন্ন স্থানে বেচাকেনার মাধ্যমে ছড়িয়ে যায়। কিন্তু এখন সেই কাজে বিঘ্ন ঘটছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে এ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে ধলেশ্বরীর মাঝ নদীতে সেইসব লঞ্চ চলতি পর্যায়ে যাত্রী উঠানামা করছে অনেকটাই ঝুঁকি নিয়ে। দক্ষিণবঙ্গের বরিশাল ও চাঁদপুরের এসব লঞ্চ এখানে পৌঁছলে চলতি পর্যায়ে চলমান অবস্থায়ই সেইসব লঞ্চ ধীর গতিতে চলতে থাকে। আর সেই সময়ের মধ্যে আগে থেকেই অপেক্ষমান লঞ্চযাত্রীরা কে কার আগে লঞ্চে উঠবে তা নিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েন। এর মধ্যেই লঞ্চে অপেক্ষমান যাত্রীরা ট্রলারে নামার জন্য হুড়মুড় করতে থাকে। এদিকে আবার এ ট্রলারে দ্রুততার সাথে লেবাররা একদিক থেকে লঞ্চে থাকা মালামাল ও ট্রলারে থাকা মালামাল উঠাতে ও নামাতে থাকে। এ সময়টাতে বিপদজনক পরিস্থিতি নিত্যদিনই বিরাজমান। এর ফলে এ পদ্ধতির কারণে বর্তমানে যাত্রীদের অতিরিক্ত পকেটের টাকাও কাটা যাচ্ছে বলে আরো অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। কারণ হচ্ছে লঞ্চ টার্মিনাল দিয়ে এসব লঞ্চে যাত্রীরা উঠতে গেলে শুধুমাত্র ৫ টাকা দিলেই হতো। কিন্তু এখন এখানে যাত্রীদের অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে। এ পদ্ধতির কারণে যাত্রীদের লঞ্চে উঠতে গেলে ট্রলারের চালকরা যাত্রীদের কাছ থেকে জন প্রতি ২০ টাকা করে আদায় করছেন বলে শোনা যাচ্ছে। এ ধরণের যাতনার পরেও এ যাত্রীদের আরেক দফা ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে মালামাল নিয়ে সেখান থেকে পাড়ে আসতে। এখানে দফায় দফায় ভোগান্তিতে লঞ্চ যাত্রীরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। কারণ হচ্ছে যে, ঘাটের কাছ থেকে অনেক দূরে লঞ্চ নদীতে অপেক্ষামান থাকে। সেখানে যাত্রীদের যাতায়াতের জন্য কোন পরিবহন ব্যবস্থা নেই। এ কারণে এখানে লঞ্চযাত্রীরা ভোগান্তিতে রয়েছেন। এছাড়া এখানে বর্তমানে ছোট ছোট লঞ্চ টার্মিনালে ভিড়ছে অনেকটাই কষ্ট করে। টার্মিনালে একাধিক লঞ্চ জড়ো করে রাখতে দেখা গেছে। তবে চরের কারণে এখানেও অনেকটাই সমস্যা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এখানে একটি বড়সড়ো আধুনিক টার্মিনালের পল্টুন দেয়া হয়েছে। কিন্তু সেটি এখন কোন কাজেই লাগছেনা লঞ্চযাত্রীদের। কারণ হচ্ছে এখন চরের কারণে অনেকেই এ টার্মিনাল ব্যবহার করছেন না। এদিকে টার্মিনালের নতুন পল্টুনটি এখন চরের কারণে পূর্ব পশ্চিম দিক করে রাখা হয়েছে। এটি মূলত উত্তর দক্ষিণ দিক করে রাখার কথা ছিলো। কিন্তু প্রকৃতির কারণে এটি এখন সেইভাবে রাখা যাচ্ছে না বলে শোনা যাচ্ছে। নদীর মাঝখান থেকে লঞ্চেযাত্রীদের উঠার কারণে জীবনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে এখানকার লঞ্চযাত্রীরা। ইতোমধ্যে এ ধরণের ঘটনায় এখানে একজনের প্রাণহানি হয়েছে। এখানে নদীতে চরে ড্রেজিং করা হবে বলে সেখানে বিশাল এলাকা নিয়ে চরের মাঝে বালু রাখার জন্য বাঁধ তৈরি করা হয়েছে। মিরকাদিম নদীবন্দরের বিআইডব্লিউটিএ’র সহকারী পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) সৈয়দ মোঃ মাহবুবুর রহমান জানান, এখানে বর্তমানে ড্রেজিং প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মিরকাদিমে নৌ পুলিশের জন্য বড় আকারে সরকারিভাবে একটি অফিস হচ্ছে। এখানকার ড্রেজিংয়ের উত্তোলিত বালু সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে। এ বিষয়ে উভয় অফিসের ঊর্ধ্বতন অফিসারদের মধ্যে ইতোমধ্যে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে।
মিরকাদিম লঞ্চঘাটের ধলেশ্বরী নদীতে নাব্যতা ফেরাতে ড্রেজিং চলছে
আগের পোস্ট