নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের কনকসার কাহেতারা, হলদিয়া নাগেরহাট বাজার সংলগ্ন মৌছামানদ্দা, বৌলতলী ইউনিয়ন দিঘীরপাড় মসজিদ সংলগ্ন, পয়সা পশ্চিমপাড়া ও বেজগাঁও ছত্রিশ বিভিন্ন জায়গায় প্রভাবশালী বড় বড় নেতা আইন অমান্য করে ফসলি জমির মাটি কেটে যাচ্ছে। বিক্রি হচ্ছে এসব মাটি। এতে এলাকার ফসলি জমির পরিমাণ কমে জাতীয় ফসল উৎপাদনে ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে এ অঞ্চলের কৃষক। অনেকটা জোর জুলুম করেই কেটে নেয়া হচ্ছে ফসলি জমির এসব মাটি। ফলে কমছে ফসল আর বেকার হচ্ছে কৃষক। পরিবেশও পড়ছে হুমকির মুখে। বৌলতলী ইউনিয়নের পয়সা পশ্চিমপাড়া মধ্যবর্তী এলাকায় এ পর্যন্ত প্রায় ৪ একর ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করেছে। বেজগাঁও ছত্রিশ কয়েক জায়গায় এখনও চলছে মাটি কাটার এ মহোৎসব। ফলে ব্যাহত হচ্ছে কৃষিপণ্য উৎপাদন ক্ষমতা। কনকসার কাহেতারা, হলদিয়া মৌছামানদ্দা সরকারি জায়গার মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। বৌলতলী ইউনিয়ন ও বেজগাঁও ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর কৃষিজমি রয়েছে। প্রতি বছর ফসলও হয় ভাল। এ থেকে কৃষকের আয় রোজগারও ছিল ভাল। কিন্তু গত কয়েক বছর যাবৎ বৌলতলীর লিটন, মনির, পয়সা পশ্চিম পাড়ার মো. রফিক, বেজগাঁওয়ের নবু, কনকসারের মিরাজ খান, হাবিব খান, হলদিয়ার মো. মুক্তার হোসেন বাহিনী নামে একটি প্রভাবশালী চক্র কৃষকদের বিভিন্নভাবে ভয়-ভীতি প্রদর্শন, ওয়ারিশ পাওনা ও বিভিন্ন লোভ-লালসা দেখিয়ে সামান্য মাটির কথা বলে জমিতে মাটি কাটতে শুরু করে। কিন্তু একবার জমিতে মাটি কাটা শুরু করতে পারলেই তাদের আর ঠেকায় কে? পুরো জমিটি তাদের দখলে চলে যায়। মো. রফিক পয়সা পশ্চিম পাড়ার স্থানীয় এলাকার মেয়ের জামাই ও গাঁওদিয়ার নবু মাটি কাটার মেশিন ভেঁকু বসিয়ে পুরো জমি এমন গভীরভাবে কাটে যে, তাতে পার্শ্ববর্তী জমির মাটিও কয়েক ঘন্টার মধ্যে ভেঙ্গে পড়তে শুরু করে। তখন পার্শ্ববর্তী জমি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ওই জমির মালিকও তখন ওই ভূমিদস্যুদের কাছে চাপে পড়ে নামমাত্র মূল্যে জমিটির মাটি বিক্রি করতে বাধ্য হয়। এমনকি ঐ মাটি এলাকার উচ্চবিত্ত মানুষের কাছে বিক্রি করে দেয়। কোন রাস্তা না থাকায় মাটিবাহিনী পার্শ্ববর্তী ফসলী জমির উপর দিয়ে জোর করে ট্রাক ভর্তি মাটি নিয়ে য়ায়। এতে এসকল জমির ফসলও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ বছরসহ গত কয়েক বছরে এভাবে মাটি কাটায় ওই এলাকার শত শত বিঘা জমি এখন খালে (প্রায় ১০/১৫ ফুট গভীর) পরিণত হয়েছে। ভূমিদস্যু এই চক্রটি এতই প্রভাবশালী যে, তাদের ভয়ে কোন জমির মালিক কিছু বলতে সাহস পায়না। অথচ আইনের ধারা ৫ এর ১ উপধারা অনুযায়ী, এসব অপরাধীর শাস্তি হচ্ছে অনধিক দুই বছরের কারাদন্ড বা দুই লক্ষ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।
মাটি কাটা বিষয়ে বেজগাঁও ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মো. আরিফ হোসেন, বৌলতলীর অনন্ত প্রসাদ মিত্র, কনকসারের দেওয়ান বোরহান উদ্দিন তাদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা জানান, উপজেলা ভূমি অফিস যদি নির্দেশ দেয় তাহলে তদন্ত করে দেখবো। আমাদের এ বিষয়গুলো জানা নেই।
হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাজী মো. মোয়জ্জেম হকের সাথে হলদিয়া নাগেরহাট সংলগ্ন মাটি কেটে বিক্রি করছে বিষয়ে জানতে চেয়ে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি কল রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে লৌহজং উপজেলা কমিশনার (ভূমি) মো. ইলিয়াস শিকদার জানান, আমি খবর পেয়েছি আমাদের অফিসের লোক পাঠাবো। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখবো। ফসলি জমি নষ্ট বা মাটি কাটা হলে আইনি ব্যবস্থা নিবো।
লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল আউয়াল বলেন, আমি বিষয়টি এখন জানতে পেরেছি। তদন্ত করে মাটি কেটে বিক্রির বিষয়টির গুরুত্ব সহকারে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভূমিদস্যুদের কোন ছাড় নাই। এছাড়া আমি অনেক জায়গায় খবর পাওয়ার সাথে সাথে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছি।