মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তির ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত নাশকতা ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে – অ্যাড. মৃণাল কান্তি দাস এমপি
নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস বলেছেন, পরাজিত পাকিস্তানের দালাল মহান মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তি এবং তাদের রাজনৈতিক জোট বাংলাদেশ ও এদেশের জনগণের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। প্রিয় মাতৃভূমির মাটিতে এই অপশক্তিকে আর মাথা তুলে দাঁড়াতে দেওয়া যাবে না। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তির ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত নাশকতা ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস এমপি বলেন, বাঙালি জাতির ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জনÑ একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের স্ফুলিঙ্গে উজ্জীবিত সশস্ত্র জনযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের মুক্তির ইতিহাসÑ স্বাধীনতার ইতিহাস। এই দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পথপরিক্রমায় ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬-এর ছয়-দফা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান পেরিয়ে ’৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। বঙ্গবন্ধুর সাহসী, দৃঢ়চেতা, আপোসহীন নেতৃত্ব ও বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামে অনুপ্রাণিত হয়ে জেগে ওঠে শত বছরের নির্যাতিত-নিপীড়িত পরাধীন বাঙালি জাতি।
তিনি বলেন, ১৯৭১-র ২৫ মার্চ কালো রাত্রিতে পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির উপর নির্বিচারে গণহত্যা শুরু করলে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলার মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সর্বস্তরের জনগণ জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে পরিচালিত দীর্ঘ ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ ও দুই লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে অর্জিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা। বিশ্বমানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয় যখন দ্বারপ্রান্তে তখন পাকহানাদার বাহিনী যেমন পোড়ামাটি নীতি অবলম্বন করে নির্বিচারে মানুষ হত্যা ও গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়ে বাংলাদেশকে শ্মশান বানাতে চেয়েছিল ঠিক তেমনিভাবে পরাজিত পাকিস্তান ও তাদের এদেশীয় এজেন্টদের অশুভ জোট বিএনপি-জামাত ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে বর্বর-নারকীয়-কাপুরুষোচিত হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত করেছিল বাংলাদেশের সবুজ জমিন, বিস্তীর্ণ জনপদ। আন্দোলনের নামে শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। তারা আবারও বাংলাদেশ ও এদেশের জনগণের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। প্রিয় মাতৃভূমির মাটিতে এই অপশক্তিকে আর মাথা তুলে দাঁড়াতে দেওয়া যাবে না। বাংলাদেশ ও এদেশের জনগণের স্বার্থবিরোধী ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম পরিচালিত করছে। বৈশি^ক মন্দা মোকাবিলার এই সংগ্রামের সময়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির পায়তারা চালাচ্ছে। এদেরকে রাজনীতি থেকে বিতাড়িত করতে হবে। চূড়ান্তভাবে পরাজিত করে মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শভিত্তিক রাজনীতির পথকে সুগম করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও মূল্যবোধের ভিত্তিতেই রাজনীতিকে পরিচালিত করতে হবে।
১৬ ডিসেম্বর শুক্রবার মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে গজারিয়া উপজেলা ও মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলায় আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। এর আগে তিনি গজারিয়ায় নবনির্মিত স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। অতঃপর গজারিয়া পাইলট হাই স্কুল মাঠে শিক্ষার্থীদের কুচকাওয়াজ ও ডিসপ্লে পরিদর্শন করেন। পরে একই স্থানে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়াউল ইসলাম চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বীর প্রতীক, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ তানেস উদ্দিন, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান ফরাজী, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোল্লা সোহেব আলী প্রমুখ। এরপর তিনি বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী সমর্থক সাথে নিয়ে মুন্সীগঞ্জ জেলা শহরে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সেসময় উপস্থিত ছিলেন মিরকাদিম পৌরসভার মেয়র হাজী আব্দুস সালাম, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি আল মাহমুদ বাবু, এ্যাড. গোলাম মাওলা তপন, মুন্সীগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহতাব উদ্দিন কল্লোল, জেলা পরিষদ সদস্য সাইদুর রহমান খান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন, মহাসীনা হক কল্পনা, সজল আহমেদ মিতালী, খায়রুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক উপ-আইন বিষয়ক সম্পাদক আপন দাস প্রমুখ। এরপর তিনি মুন্সীগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জেলা প্রশাসন আয়োজিত আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন অধ্যক্ষ আঃ হাই, অধ্যক্ষ সুভাষ চন্দ্র হীরা, ডা. মঞ্জুরুল আলম, মেয়র হাজী মোঃ ফয়সাল বিপ্লব, সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সুজন হায়দার জনি, সাংবাদিক মাহদী হাসান তুহিন প্রমুখ।