নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে মালির অংক বাজার ভাই ভাই গহনালয় ব্যবসায়ী কার্তিক দাস প্রায় ৫০ জনের টাকা ও স্বর্ণ নিয়ে উধাও হয়েছে বলে স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে ভুক্তভোগী নারী-পুরুষের সাথে কথা বলে জানা যায় যে, ভাই ভাই গহনালয় দোকানের আড়ালে মহাজনী ব্যবসা চালিয়ে আসছিল। সেই সুবাদে অনেকেই স্বর্ণ রেখে টাকা নিতো। এছাড়া তার কাজ ভালো ও মুখের মিষ্টি কথা এবং ব্যবহারে অনেকেই স্বর্ণ দিয়ে বিভিন্ন রকমের গলার হার, আংটি, চুড়ি, নাকফুল ইত্যাদি তৈরি করতে তাকে দিয়েছে। গত একমাস যাবত দোকান বন্ধের কারণে অনেকেই তার বাড়িতে যাওয়া শুরু করে। গত জানুয়ারির আগ পর্যন্ত প্রায় ৫০ জনের টাকা ও স্বর্ণ নিয়ে তিনি উধাও হয়েছে।
বেজগাঁওয়ের স্থানীয় বাসিন্দা সনিয়া আক্তারের স্বামী রাজু আহমেদ বলেন, গত মাসে আমি দুই ভরি স্বর্ণ দিয়ে কিছু কাজ করতে দিয়েছি। এখন মজুরির টাকা নিয়ে এসে দেখছি তিনি নেই, দোকান বন্ধ। কয়েকদিন এসে ফিরে গেছি। আজ এসে দেখছি, দোকানের জিনিসপত্র নিয়ে যাচ্ছে। আমার গহনা কোথায় এই বলে কেঁদে ফেলেন।
কলিকাতা ভোগদিয়ার মুক্তি আক্তারের স্বামী মো. সোহাগ জানান, এক জোড়া কানের দুল, নাকের নোলক, একটি আংটি বন্ধক রেখে কিছু টাকা নিয়েছিলাম। এখন এসে দেখি দোকান বন্ধ। আরো কয়েকদিন এসেছিলাম।
বেজগাঁওয়ের বাসিন্দা মো. সুমন বলেন, আমি প্রায় সাড়ে চার ভরি স্বর্ণ দিয়ে অনেক কিছু বানাতে দিয়েছি। তিনি আগে আমাকে বলেছেন, আর দুইদিন লাগবে। আজ আমি এসে দেখি মানুষের ভীড়। আমরা কাছে সব কাজগুলোর আলাদা প্রমাণ আছে।
ভাই ভাই গহনালয়ের কর্মচারী মরু দাস জানান, কার্তিক দাস মাহাজন। ঢাকা যাবে বলে আমাকে বলে যায়। আমি কর্মচারী তেমন কিছু বলিনাই। পরে আমাকে ফোন দিয়ে দোকান বন্ধ রাখতে বলে এখন থেকে একমাস আগে। আজ মাহাজনের স্ত্রী ও মা আমাকে দোকান খুলে মালপত্র বাড়িতে নিয়ে যেতে সাহায্য করতে বলেন।
স্থানীয় মেম্বার মো. মিজানুর রহমান মিজু বলেন, আমার কাছে অনেকেই অভিযোগ করেছেন, ভাই ভাই গহনালয়ের মালিক কার্তিক দাসের দোকান বন্ধ। আমি তাদের কার্তিকের বাড়িতে যেতে বলি। সর্বশেষ পরিবারের লোকজন এসে দোকান খালি করতে চায়। আমি উপস্থিত ছিলাম। দেখি, অনেক লোকজন এসে বলছে আমার স্বর্ণ, আমার টাকা ও স্বর্ণ। আমি কার্তিক দাসের স্ত্রী জয়া দাস ও মা রিনা দাসকে দেখিয়ে দেই। তারা আমার সামনে সকলের ক্ষতিপূরণ দিয়ে দিবে বলে স্বীকারোক্তি করেন।
দৈনিক মুন্সীগঞ্জের কাগজ এর লৌহজং প্রতিনিধি শেখ মো. সোহেল তাদের কাছে প্রায় ৫০ জনের ক্ষতিপূরণ বিষয়ে কথা বললে কার্তিক দাসের স্ত্রী ও মা সকলের লেনদেনের প্রমাণ নিয়ে বাড়িতে যেতে বলেন। এছাড়া তারা স্বীকারোক্তি করে বলেন, যেভাবেই হোক আমরা ক্ষতিপূরণ দিয়ে দেব। আজ আমরা মালপত্র দোকানে যা আছে বাড়িতে নিয়ে যাব। স্ত্রীর কাছে তার স্বামীর সাথে যোগাযোগ হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, না। তার মোবাইল নম্বরটা বন্ধ আছে।
বেজগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফারুক ইকবাল মৃধা বলেন, আমি ঘটনাটি অবগত আছি। স্থানীয় মেম্বারকে বিষয়টি সঠিকভাবে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছি। এছাড়া প্রয়োজনে আমি সহযোগিতা করবো।
লৌহজং থানা অফিসার ইনচার্জ আব্দুল্লাহ আল তায়াবীর বলেন, ঘটনা অল্প কিছু শুনেছি। আমি কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।