নিজস্ব প্রতিবেদক
শ্রীনগরের সাবরেজিস্ট্রি অফিসের নৈশপ্রহরীই যেন বড় অফিসার বনে গেছেন। নাম শুভ হোসেন। ষোলঘর ইউনিয়নের খৈয়াগাঁও এলাকায় দরিদ্র এক কৃষক পরিবারে তার জন্ম। কয়েক মাস যাবৎ দেখা যায়, বিকালে তার দামী মোটরসাইকেল নিয়ে শ্রীনগরের ব্যস্ত রাস্তায় বন্ধুদের মোটরসাইকেলের সাথে রেইস করতে। তার পোশাক পরিচ্ছদ ও চালচলন দেখে রেজিস্ট্রি অফিসে সেবা নিতে আসা অনেকেইে তাকে অফিসার ভেবে মাঝেমধ্যেই ভুল করেন। স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ার সুবাদে প্রভাব খাটিয়ে দলিল লেখকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগও রয়েছে এই নৈশপ্রহরীর বিরুদ্ধে।
সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের নৈশপ্রহরী মো. শুভ হোসেনের বিরুদ্ধে রয়েছে দলিল লেখকদের নিয়মবহির্ভূত বিভিন্ন দলিল সৃজন কাজে মধ্যস্ততাকারীর ভূমিকা পালনের অভিযোগ। নৈশপ্রহরী শুভ এখানে রাতে ডিউটি না করলেও অফিস সময় তাকে দেখা যায় সাব-রেজিস্ট্রারের এজলাস ও খাস কামরায়। এর আগে গত সোমবার দুপুরে দলিল লেখক মো. হাবিব একটি দলিল সম্পাদনের জন্য সাব-রেজিস্ট্রার রেহেনা বেগমের কাছে একটি দলিল দাখিল করেন। সাব-রেজিস্ট্রার রেহেনা বেগম উপস্থাপিত নথিপত্র যাচাই-বাছাই করে দেখেন এখানে পর্চায় ভেস্টেট সম্পত্তি রয়েছে। যা দাতার নামে নামজারিও করা নেই। এছাড়া কয়েকজন মালিকের নামে ১৭ শতাংশ জমির খাজনা গ্রহণ করা হলেও এখানে একজন দাতা হয়েই পুরো সম্পত্তি রেজিস্ট্রি করে দিচ্ছেন। এ কারণে তিনি দলিলটি সম্পাদনে অসম্মতি জানান। এতে পরেরদিন দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রউফ সিকদার সাব-রেজিস্ট্রারকে দলিল সম্পাদনের জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। একপর্যায়ে সাব-রেজিস্ট্রারকে কিছুক্ষণের জন্য অবরুদ্ধ করে ফেলেন দলিল লেখকরা। এসময় সাব-রেজিস্ট্রারের অপসারণ চেয়ে কলম বিরতির ডাক দেন। সাব-রেজিস্ট্রারের দাবি তাদের অন্যায্য দাবি মেনে না নেওয়ায় এমনটা করছেন। রেহেনা বেগমের বক্তব্য ছিল অন্যায়ভাবে তিনি এই দলিল করবেন না। দলিল লিখকদের দাবি ছিল অতিরিক্ত টাকা না পেলে সাব-রেজিস্ট্রার রেহেনা বেগম কোন দলিলে স্বাক্ষর করেন না। সেদিন কোন কোন দলিল লেখক নৈশপ্রহরী মো. শুভর বিরুদ্ধেও অনিয়মের অভিযোগ তুলেন। তারা বলেছেন, সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের নৈশপ্রহরী মো. শুভ সার্বক্ষণিক থাকেন সাব-রেজিস্ট্রারের এজলাসে ও খাস কামরায়। করেন বিলাসী জীবনযাপন। হাঁকেন প্রায় ৫ লাখ টাকার মোটরবাইক, হাতে লাখ টাকার আইফোন, পোশাক পরিচ্ছদে তিনিই যেন অফিসার। অথচ নিয়ম অনুসারে নৈশপ্রহরীর ডিউটি করার কথা রাতে অফিসের পাহারায়। তাকে কোনদিনই রাতে সাব-রেজিস্ট্রারের অফিস পাহারায় দেখাননি তারা। শুভ নিয়মবহির্ভূত বিভিন্ন দলিল সম্পাদনের জন্য উভয়পক্ষের সঙ্গে সমঝোতা করে দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়।
স্থানীয়রা বলছেন, জেলা রেজিস্ট্রারের মধ্যস্ততায় সাব-রেজিস্ট্রার ও দলিল লেখকদের মধ্যকার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ এবং কর্মবিরতির সুরাহা হলেও এখানে কার অভিযোগ সত্য? এ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।
দলিল লেখক মো. কামাল শেখ জানান, দলিল লেখক হাবিবের ওয়েটিংয়ে থাকা দলিলটি মঙ্গলবার সম্পাদন হয়েছে বলে শুনেছি। একটি সূত্র জানায়, গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে ৩/৪টি নিয়মবহির্ভূত দলিল সৃজনের ঘটনা জানাজানি হলে বিভিন্ন সময়ে তা পত্র-পত্রিকায় খবরের শিরোনাম হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এসব অনিয়মের বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
মো. শুভ হোসেনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি নৈশপ্রহরীর কাজ করি। তাহলে নৈশপ্রহরীর কাজ কি? এ প্রশ্নের জবাবটি তিনি এড়িয়ে যান।
এ ব্যাপারে শ্রীনগর সাব-রেজিস্ট্রার রেহেনা বেগমের কাছে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।