নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশে করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকে মাস্ক, হ্যান্ড ওয়াশ ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিনতে ঝুঁকছেন অনেকেই। তবে এটিকে মওকা হিসেবে নিয়ে মাস্ক ও হ্যান্ডওয়াশের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রেতারা। এই অবস্থায় এই দুটি ব্যবহার্য জিনিসের দামের কারসাজি বন্ধে প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত। গতকাল ঢাকায় তিনটি ওষুধের দোকান সিলগালা করা হয়েছে। আর ময়মনসিংহে এক ব্যবসায়ীকে জরিমানা গুনতে হয়েছে।
তাদের ভাষ্য, আগে মাসে ১০টি হ্যান্ড ওয়াশও বিক্রি হতো না। আর মাস্কের বাজারে নির্দিষ্ট দামের কোনো বালাই নেই। বিক্রেতারা তাদের ইচ্ছা মাফিক দামে বিক্রি করছেন। করোনায় আতঙ্কিত মানুষ নিরুপায় হয়ে বেশি দামেই কিনছেন। যদিও বিশেষজ্ঞরা নির্বিচারে মাস্ক ব্যবহার না করার পরামর্শ দিচ্ছেন।
এমন অবস্থায় গতকাল সাতটি ব্রান্ডের হ্যান্ড স্যানিটাইজারের দাম বেঁধে দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। এছাড়া বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণ হ্যান্ড স্যানিটাইজার রয়েছে বলে ওষুধ কোম্পানিগুলোর বরাতে জানিয়েছে সরকারের এই প্রতিষ্ঠান।
এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ওষুধের দোকানদাররা বলছেন, তাদের স্টকে থাকা সব হ্যান্ড ওয়াশ বিক্রি হয়ে গেছে। ফলে নতুন করে বেশি দামেই তাদের কিনে আনতে হচ্ছে। আর এ কারণে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। অন্যদিকে নানা ধরনের ও মানের মাস্কের চাহিদা তুঙ্গে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ১৫ টাকার মাস্ক বিক্রি হচ্ছে চল্লিশ টাকায়। আর এক দিন আগেও ৫০ টাকায় বিক্রি হওয়া মাস্কের দাম চার গুণ বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে ২০০ টাকায়।
সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সার্জিক্যাল মাস্কের চাহিদা থাকলেও তা খুব একটা মিলছে না। মিললেও দাম হালকা হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। আর ফিল্টার যুক্ত মাস্কের দাম ২০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
গত রবিবার বাংলাদেশে তিনজন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্তের খবর মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। এর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে মাস্কের বাজারে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ফার্মেসিগুলোতে মাস্কের চাহিদা অপ্রত্যাশিত হারে বেড়েছে। ক্রেতাদের চাহিদাপূরণ করতে গিয়ে এক রাতেই মহল্লার ফার্মেসি গুলোর বেশিরভাগই হয়ে পড়ে মাস্কশূন্য।
গতকাল রাতে মোহাম্মদপুর নবোদয় হাউসিং এলাকার ফার্মেসিগুলো ঘুরে মাস্কের দেখা মেলেনি। দোকানদাররা জানান, সার্জিক্যাল মাস্ক ও ফিল্টারযুক্ত মাস্ক মাত্র তিন ঘণ্টায় বিক্রি হয়ে গেছে। এখন কেবল কাপড়ে তৈরি মাস্ক আছে।
হাবিবুর রহমান নামের একজন ফার্মেসি মালিক বলেন, ‘আমার দোকানে যে পরিমাণ মাস্ক ছিল, তা প্রায় দুই মাস বিক্রি করতে পারতাম। কিন্তু মাত্র তিন ঘণ্টায় সব বিক্রি হয়ে গেছে।’ গতকাল সকালে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ফার্মেসি ঘুরে ফিল্টারযুক্ত মাস্ক দেখা গেছে। তবে দাম অনেকটাই নাগালের বাইরে। ৫০ টাকায় বিক্রি হওয়া মাস্ক বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়।
বাড়তি দামে মাস্ক বিক্রি হতে দেখা গেছে ফার্মগেট, বাংলামোটর, শাহবাগ, গুলিস্তান, পল্টন, মিরপুরসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকার ফুটপাতে। কেবল ফার্মেসি বা ফুটপাতে নয়, অনলাইনে বাড়তি দামে মাস্ক বিক্রির হিড়িক বেশ দেখা যাচ্ছে কিছুদিন ধরেই।
এ ছাড়া বিভিন্ন অনলাইন শপ, ফেসবুক পেজ ও ফেসবুকে ব্যবসার বিভিন্ন গ্রুপে এমন চিত্র লক্ষ করা গেছে। এসব গ্রুপ ৩ টাকায় পাইকারি ও ৫ টাকায় খুচরা দামে বিক্রি হওয়া সার্জিক্যাল মাস্ক ১৮ টাকায় পাইকারি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। ফিল্টারযুক্ত প্রতিটি মাস্ক পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। আর খুচরা বাজারে ক্রেতাকে গুণতে হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত।
করোনাভাইরাস নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদনের ওপর শুনানিতে হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ মাস্ক এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার নিয়ে যাতে কেউ ব্যবসা করতে না পারে সেজন্য সংশ্লিষ্টদের নজর রাখতে নির্দেশ দেন। বাজার মনিটরিং করতে প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে বাজারে যে মাস্ক বিক্রি হচ্ছে তা করোনাভাইরাসরোধে কতটা কার্যকরী তা দেখা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন হাইকোর্ট।
উচ্চ আদালতের এমন নির্দেশনার পর বাড়তি দামে মাস্ক বিক্রি প্রতিরোধে মাঠে নেমেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। গতকাল দুপুরের পর থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় উচ্চ দামে মাস্ক বিক্রি করায় ব্যবসায়ীদের জরিমানা করার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে গুলশানে শুধু বিদেশিদের মধ্যে মাস্ক বিক্রির দায়ে দুটি ও ফার্মগেটে বেশি দামে মাস্ক বিক্রির অভিযোগে একটি ওষুধের দোকান সিলগালা করে দিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।