কাজী সাব্বির আহমেদ দীপু : একটি সেতু তাদের জীবনে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিক কার্যক্রমও গতিশীল হবে। একই সঙ্গে পদ্মার শাখা নদী পারাপারে একমাত্র ট্রলারের ওপর আর ভরসা করতে হবে না। দীর্ঘ বছরের ভোগান্তি নিরসন হবে পদ্মাপাড়ের মানুষের।
কথাগুলো বলছিলেন শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মোঃ মাসুদ জমাদ্দার। তার মতো এই পথ দিয়ে প্রতিদিন চলাচলরত হাজার হাজার মানুষের একই মত বলে জানালেন স্থানীয় বাসিন্দা আলী আক্কাস।
শরীয়তপুরের কাঁচিকাটা ইউনিয়নের বাসিন্দা ইয়াসিন ব্যাপারী বললেন, আমরা শরীয়তপুরের মানুষ হলেও আমাদের সব কাজকর্ম করতে মুন্সীগঞ্জেই সুবিধা। আমাদের হাটবাজার করতে হয় দিঘীরপাড় বাজারে। ঢাকায় যাই এ পথ দিয়ে। রাতে ট্রলার পাওয়া যায় না। ট্রলার পেলেও ৫০ টাকার ভাড়া ৫০০ টাকা গুনতে হয়। নদীপথে সময় লাগে বেশি। যদি দিঘীরপাড় বাজার এলাকায় একটি সেতু নির্মাণ হতো, তাহলে আমাদের এত ঝক্কিঝামেলা পোহাতে হতো না। খুব সহজে সড়কপথে ঢাকা ও মুন্সীগঞ্জ যেতে পারতাম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী উপজেলার দিঘীরপাড়ে পদ্মার শাখা নদীতে একটি সেতুর অভাবে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন লাখো মানুষ। উপজেলার দিঘীরপাড় বাজার ও দিঘীরপাড় চরের সঙ্গে একটি সেতু নির্মাণ হলে জেলার টঙ্গীবাড়ীর বাসিন্দাদের পাশাপাশি উপকৃত হবে পার্শ্ববর্তী চাঁদপুর ও শরীয়তপুর জেলার সীমান্তবর্তী বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ। কিন্তু সেতু না থাকায় এসব এলাকার বাসিন্দাদের জন্য পদ্মার শাখা নদী পারাপারে এখন ট্রলারই একমাত্র ভরসা। ট্রলারের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষাসহ নানা ভোগান্তি পোহাতে হয় তাদের।
স্থানীয় বাসিন্দা আউয়াল মিয়াসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, দিঘীরপাড় বাজারের পূর্ব পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মার শাখা নদী। এই নদীর ওপারে রয়েছে দিঘীরপাড় চর। নদী পারাপারে একমাত্র বাহন ট্রলার। একই শাখা নদী পাড়ি দিয়ে পার্শ্ববর্তী জেলা শরীয়তপুরের নওপাড়া, চরআত্রা, কাঁচিকাটা, কুন্ডেরচর ও কোরবি মনিরাবাদ ঘড়িশাল এবং চাঁদপুর জেলার হাইমচরের বাসিন্দারা যাতায়াত করেন। সহজ যোগাযোগের কারণে শরীয়তপুর ও চাঁদপুরের এসব এলাকার বাসিন্দারা রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে এ পথে যাতায়াত করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। তারা মূল পদ্মা পাড়ি দিয়ে দিঘীরপাড় চরে আসেন। এরপর চর থেকে ট্রলারে পদ্মার শাখা নদী পার হয়ে দিঘীরপাড় বাজারে যান। সেখান থেকে সড়কপথে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতে তাদের সময় কম লাগে। মূল পদ্মা নদী ট্রলারে পাড়ি দিলেও দিঘীরপাড় বাজারের পদ্মার শাখা নদী পাড়ি দিতে ট্রলারের জন্য তাদের অনেকক্ষণ বসে থাকতে হয়। আবার মোটরসাইকেল নিয়ে পারাপার হতে খরচ পড়ে যায় ১০০ থেকে ২০০ টাকা। রাতে ভাড়া বেড়ে যায় কয়েকগুণ। অথচ এখানে প্রায় ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে একটি সেতু হলে তাদের দুর্ভোগ লাঘব হতো।
সম্প্রতি টঙ্গীবাড়ীর দিঘীরপাড় বাজারে গেলে চোখে পড়ে পদ্মার শাখা নদীর পূর্বপাড় থেকে ট্রলার ভর্তি মানুষ আসছে। ট্রলার থেকে নেমে মানুষ দিঘীরপাড় বাজার, টঙ্গীবাড়ী উপজেলা পরিষদ, মুন্সীগঞ্জ শহর ও রাজধানী ঢাকার দিকে ছুটছেন। একইভাবে ট্রলার ভর্তি করে নদীর পশ্চিম পাড়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও নদীর উত্তর এবং দক্ষিণ পাশ থেকে ট্রলার ভর্তি করে দিঘীরপাড় হাটে কেউ মালপত্র বিক্রি করতে আসছেন, কেউবা এ হাট থেকে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও গৃহস্থালির জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। সবকিছুই হচ্ছে ট্রলারের ওপর ভরসা করে।
কলেজ শিক্ষার্থী রিফাত খালাসী বলেন, মোটরসাইকেল দিয়ে যাতায়াত করলে ২০০ টাকা ভাড়া দিয়ে দিঘীরপাড়ে আসতে হয়। নদীর পশ্চিম পাড়ের রাস্তাও অনেক খারাপ। এরপর ট্রলারের জন্য প্রতিদিন ৩০-৪০ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়।
মাসুম জমাদ্দার বলেন, রাতের বেলা ট্রলার পাওয়া যায় না। পেলেও ভাড়া দিতে হয় ১০ গুণ বেশি। আমাদের মুন্সীগঞ্জের দিকে যাতায়াত বেশি। কিন্তু এ নদী পার হতে প্রতিদিন নানা সমস্যায় পড়তে হয়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য, পদ্মার শাখা নদীর ওপর একটি সেতু নির্মিত হলে মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ীর দিঘীরপাড়, কামারখাড়াসহ আশপাশের এলাকা, শরীয়তপুরের নওপাড়া, চরআত্রা, চাঁদপুরের হাইমচরসহ সীমান্তবর্তী গ্রামের মানুষ উপকৃত হবেন। তাদের যাতায়াতে সময় ও খরচ দুটোই কমবে। গতিশীলতা বাড়বে এই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নেও।
টঙ্গীবাড়ী উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী শাহ মোয়াজ্জেম বলেন, দিঘীরপাড় বাজার লাগোয়া পদ্মার শাখা নদীর ওপর ১০০ মিটারের বেশি দৈর্ঘ্যরে একটি সেতু নির্মাণ এবং নদীর পশ্চিম পাশে ৪ কিলোমিটারের একটি আরসিসি সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক মাটি পরীক্ষা ও সার্ভে সম্পন্ন করেছে বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল। এখন নকশা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দের জন্য আবেদন করা হবে।