কাজী সাব্বির আহমেদ দীপু : চলতি বছরের এখনও কালবৈশাখী ঝড় না হলেও নদীতে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে উত্তাল হয়ে উঠেছে মেঘনা নদী। আর এই উত্তাল নদীতে যাতায়াত করছে ৩০টি ইঞ্জিনচালিত নৌযান বা ট্রলার। মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া ঘাট হয়ে চরকিশোরগঞ্জ ঘাটে প্রতিদিন পারাপার হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। উৎকন্ঠা আর উত্তাল ঢেউয়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে মানুষ।
সরেজমিনে মুন্সীগঞ্জ সদরের চর কিশোরগঞ্জ ও গজারিয়া লঞ্চঘাট নৌরুটে গিয়ে দেখা যায়, ঝুঁকি নিয়ে খেয়া পারাপার হচ্ছে সাধারণ জনগণ। এছাড়াও নারী-শিশুরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কাজে এই খেয়াঘাট হয়ে পারাপার হচ্ছে। ইঞ্জিনচালিত নৌযান বা ট্রলারে নেই পর্যাপ্ত বয়া বা লাইফ জ্যাকেট। এতে এ নৌরুটে নিয়মিত যাতায়াতকারীরা শঙ্কায় রয়েছেন।
জানা গেছে, মুন্সীগঞ্জ জেলা শহর থেকে গজারিয়ার দূরত্ব মাত্র ৭ কিলোমিটার। কিন্তু মুন্সীগঞ্জ সদর ও গজারিয়া উপজেলাকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে মেঘনা নদী। সেতু কিংবা সড়ক পথের সরাসরি যোগাযোগের ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে মেঘনা নদী পাড়ি দিয়ে আসা-যাওয়া করতে হয় এ উপজেলার সাধারণ জনগণের। তবে কেউ যদি মেঘনা নদীকে এড়িয়ে যাতায়াত করতে চায় তাহলে তাকে অন্তত ৫০ কিলোমিটার পথ ঘুরে আসতে হয় জেলা শহরে।
জেলা শহর থেকে নারায়ণগঞ্জ কয়লাঘাট সেতু হয়ে সোনারগাঁও উপজেলা ঘুরে জনসাধারণকে গজারিয়ার গন্তব্যে পৌঁছাতে হবে। দীর্ঘদিন যাবৎ চরকিশোরগঞ্জ থেকে গজারিয়া ঘাট এলাকা পর্যন্ত একটি সেতু নির্মাণের দাবী জানিয়ে আসছে এই এলাকার মানুষ। কয়েকবার নদীতে সেতু নির্মাণের জন্য মাপঝোক হলেও সেতু নির্মাণ কাজ আলোর মুখ দেখেনি। তাই বাধ্য হয়ে ঝড়-জলোচ্ছ্বাস মাথায় নিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই পারাপার হচ্ছে মানুষ।
তবে মেঘনা নদী পাড়ি দিতে গজারিয়া-চর কিশোরগঞ্জ নৌরুটে একমাত্র ভরসা ইঞ্জিনচালিত ট্রলার। এ নৌপথে ৩০টি ট্রলার চলাচল করে থাকে। আর এসব ইঞ্জিনচালিত ট্রলারগুলোর একটিতেও নেই বয়া লাইফ জ্যাকেট। যেকোন মুহূর্তে ঘটতে পারে বড় কোনো দূর্ঘটনা। জেলা সদরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ না থাকায় জেলার অপর ৫টি উপজেলার সাথে জেলা শহরের পূর্বাঞ্চলের গজারিয়াকে মেঘনা নদী বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। এতে করে জেলার ৫টি উপজেলার সঙ্গে গজারিয়ার যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। নৌপথ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় অনেকেই দীর্ঘ পথ অতিক্রম ও অতিরিক্ত অর্থ খরচ করে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ হয়ে মুন্সীগঞ্জে আসা-যাওয়া করে থাকে।
মুন্সীগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী সরকারি হরগঙ্গা কলেজের শিক্ষার্থী আলেয়া আক্তার বলেন, প্রতিদিন শতাধিক শিক্ষার্থী এই ভয়াল মেঘনা নদী জীবন ঝুঁকি নিয়ে পাড়ি দিয়ে শিক্ষা গ্রহণ করতে আসে। বর্ষায় মেঘনা হয়ে ওঠে ভয়াবহ। এই নদী পাড়ি দিতে ট্রলার ছাড়া যাতায়াতের কোন মাধ্যম নেই।
তিনি আরও বলেন, কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ নানা শ্রেণি পেশার মানুষসহ শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে যথাযথ ব্যবস্থা যেন গ্রহণ করেন।
এ পথ ব্যবহারকারী আমিরুল ইসলাম নামে একজন পথচারী যাত্রীর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমার জেলা সদরে মাসে কয়েকবার যাতায়াত করতে হয়। বর্ষা মৌসুমে দোয়া দরুদ পড়ে চোখ বুজে নদীটা পার হই। আমি প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি, মানুষকে যেন এ নদী পার হওয়ার নিরাপদ ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
আমিনা বেগম নামের নারী যাত্রী বলেন, আমার শ্বশুরবাড়ি মুন্সীগঞ্জ। আমার বাবার বাড়ি আসতে হলে এই নদী পার হয়ে গজারিয়া আসতে হয়। বাচ্চাদের সাথে নিয়ে জীবনটা হাতে নিয়ে নদীটা পার হতে হয়।
নুরুল ইসলাম নামের এক বৃদ্ধ বলেন, আমার জমিসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে একটু ঝামেলা। তাই আমি মুন্সীগঞ্জ কোর্টে যাচ্ছি। অনেক কষ্ট করে মেঘনা নদী পার হলাম। তবে ইঞ্জিনচালিত নৌযানগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় বর্ষা মৌসুমে দুর্ঘটনার আশঙ্কা নিয়েই নদীতে যাতায়াত করতে হচ্ছে আমাদের।
এ বিষয়ে গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আশরাফুল আলম জানান, নৌপথটি ঝুঁকিপূর্ণ তা আমি নিজেই দেখেছি। চলাচলরত নৌযানগুলোতে যাতে পর্যাপ্ত বয়া ও লাইফ জ্যাকেট রাখা হয় সে বিষয়ে শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।