সামসুদ্দিন তুহিন : দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বন্ধ হয়ে থাকা বালিগাঁও খালের মুখ খুলে দেওয়ার সম্ভাবনায় নতুন করে আশার আলো দেখছেন স্থানীয়রা। এই মুখ খুলে গেলে প্রাণ ফিরে পেতে পারে টঙ্গীবাড়ীর অন্যতম প্রধান জলপ্রবাহ আড়িয়ল খাল।
গত রবিবার বেলা সাড়ে ১১টায় উপজেলার বালিগাঁও ইউনিয়নের পূর্ব-বালিগাঁও পাঠানবাড়ী ব্রিজ সংলগ্ন এবং পেট্রোল পাম্পের উত্তর পাশে বন্ধ হয়ে যাওয়া খালের মুখ সরেজমিনে পরিদর্শন করেন টঙ্গীবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান। তার সঙ্গে ছিলেন উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার, মুন্সীগঞ্জ জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসান, টঙ্গীবাড়ী প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ নাজমুল ইসলাম পিন্টু, সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, মোঃ আলী, গাজি মোর্শেদ, সমাজসেবী অনিক শেখ, মোঃ মুরাদসহ আড়িয়ল খাল রক্ষা পরিষদের সদস্যবৃন্দ এবং স্থানীয় সচেতন ব্যক্তিবর্গ।
পরিদর্শনকালে তারা বালিগাঁও খানবাড়ী এলাকায় দখল হয়ে যাওয়া খালের অংশটিও ঘুরে দেখেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রায় গত ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে খালটির মুখ বন্ধ হয়ে আছে, যা আড়িয়ল খালের স্বাভাবিক প্রবাহকে প্রায় অকার্যকর করে তুলেছে। ফলে বর্ষায় জলাবদ্ধতা, কৃষিজমিতে পানি জমে ফসলের ক্ষতি, এমনকি মৎস্যজীবীদের জীবিকাও হুমকির মুখে পড়েছে।
উল্লেখ্য, আড়িয়ল খাল একসময় টঙ্গীবাড়ীর কৃষিনির্ভর জনগোষ্ঠীর প্রাণ ছিল। এই খাল দিয়েই শত শত কৃষক জমিতে সেচের পানি পেতেন, আর বর্ষায় পানি নেমে গিয়ে রক্ষা করতো জনপদ। কিন্তু বর্তমানে দখল-ভরাট ও মুখ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই খাল পরিণত হয়েছে মৃতপ্রায় এক ছায়ায়।
সম্প্রতি ‘খাল বাঁচাও, কৃষক বাঁচাও, দেশ বাঁচাও’ -এ স্লোগানে টঙ্গীবাড়ীতে একাধিক মানববন্ধন এবং স্মারকলিপি পেশের পর প্রশাসন নড়েচড়ে বসেছে। তারই ধারাবাহিকতায় এই পরিদর্শনকে এলাকাবাসী দেখছেন কার্যকরী উদ্যোগের সূচনা হিসেবে। তবে খালের মুখ খুলে দিলেও যে কাজটি সহজ হবে না, সেটিও বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
ধারণা করা হচ্ছে, বালিগাঁও বাজারের প্রধান সড়কটির নিচ দিয়ে একটি সুইচ গেট নির্মাণ করতে হতে পারে, যাতে খালের স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করা যায়। এতে ওই এলাকায় গড়ে ওঠা বহু অবৈধ স্থাপনাও উচ্ছেদের মুখে পড়বে, যা একটি বড় প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
স্থানীয়রা বলছেন, খালের মুখ সচল করা গেলে শুধুমাত্র বালিগাঁও নয়, গোটা আড়িয়ল খাল ও আশপাশের শত শত হেক্টর জমি আবারও সজীব হয়ে উঠবে। তাদের ভাষায়, “খাল ফিরে পেলে আমরা ফিরে পাবো আমাদের ফসল, আমাদের জীবন।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আড়িয়ল খাল সচল করতে বালিগাঁও খালের মুখটি সরেজমিনে দেখা হয়েছে। খালের গতিপথ ও দখলের বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। যাচাই-বাছাই শেষে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।